সাফল্যের কাহিনী

Britannia Success Story | ২৯৫ টাকা দিয়ে ভারতের প্রথম বিস্কুট কোম্পানি ব্রিটানিয়া চালু হয় কলকাতায়! বন্ধ হয়ে গেল কোম্পানির তারাতলার প্ল্যান্ট?

Britannia Success Story | ২৯৫ টাকা দিয়ে ভারতের প্রথম বিস্কুট কোম্পানি ব্রিটানিয়া চালু হয় কলকাতায়! বন্ধ হয়ে গেল কোম্পানির তারাতলার প্ল্যান্ট?
Key Highlights

ব্রিটানিয়া কেক (britannia cake) বিস্কুট বর্তমানে কেবল ভারতেই নয় গোটা বিশ্বে বিখ্যাত। তবে শহর কলকাতার সঙ্গে এই কোম্পানির রয়েছে এক নাড়ির টান। কারণ ভারতের প্রথম বিস্কুট কোম্পানি ব্রিটানিয়ার পথ চলা শুরু হয় এই শহরেই। ১৮৯২ সালে, কলকাতায় একদল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মাত্র ২৯৫ টাকা দিয়ে ব্রিটানিয়া কোম্পানি শুরু করেছিলেন। প্রথমদিকে মধ্য কলকাতার একটি ছোট বাড়িতে বিস্কুট তৈরি করা হত।

ব্রিটানিয়া কোম্পানি সাধারণ বাঙালির জীবনে এক খাদ্যপণ্য সংস্থা নয়, যেন আবেগ। কেক, বিস্কুটের মতো ব্রিটানিয়ার পণ্য (britannia products) গোটা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। ব্রিটানিয়ার পণ্য (britannia products) ছাড়াও কলকাতাবাসীর এই সংস্থার প্রতি রয়েছে বিশেষ টান। কারণ কলকাতায় একদল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মাত্র ২৯৫ টাকা দিয়ে ব্রিটানিয়া শুরু করেছিলেন। ব্রিটানিয়া সংস্থার প্রথম কারখানাটি তৈরি হয় মুম্বইয়ে। এর পরেই কলকাতার তারাতলা (Taratala) এর কারখানাটি চালু হয়।

ব্রিটানিয়া কোম্পানির ইতিহাস-সাফল্যের কাহিনী :

ব্রিটানিয়া কেক (britannia cake) বিস্কুট বর্তমানে কেবল ভারতেই নয় গোটা বিশ্বে বিখ্যাত। তবে শহর কলকাতার সঙ্গে এই কোম্পানির রয়েছে এক নাড়ির টান। কারণ ভারতের প্রথম বিস্কুট কোম্পানি ব্রিটানিয়ার পথ চলা শুরু হয় এই শহরেই। ১৮৯২ সালে, কলকাতায় একদল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মাত্র ২৯৫ টাকা দিয়ে ব্রিটানিয়া কোম্পানি শুরু করেছিলেন। প্রথমদিকে মধ্য কলকাতার একটি ছোট বাড়িতে বিস্কুট তৈরি করা হত। এরপর সংস্থাটি গুপ্ত ব্রাদার্স কিনে নেয়। যার প্রধান ছিলেন নলিন চন্দ্র গুপ্ত। নতুন ব্রিটানিয়ার মালিক (britannia owner)  নলিন চন্দ্র গুপ্ত ভিএস ব্রাদার্স হিসাবে উদ্যোগটি পরিচালনা শুরু করেছিলেন। প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় ১৯১০ সালে, বিদ্যুতের সাহায্যে কোম্পানিটি মেশিন থেকে বিস্কুট তৈরি করা শুরু করে। এরপর ১৯১৮ সালের মধ্যে কোম্পানিকে একটি বড় স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য, গুপ্ত ব্রাদার্স ইংরেজ ব্যবসায়ী সুয়শ চার্লসকে নিয়ে আসেন এবং সেখান থেকে কোম্পানিটি ব্যাপক সাফল্য লাভ করতে শুরু করে।

কলকাতায় বসবাসকারী একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী সিএইচ হোমস এতে অংশীদার হিসেবে এই কোম্পানির সঙ্গে যোগ দেন এবং ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড ( BBCO) চালু করেন। ১৯২১ সালে, কোম্পানিটি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল গ্যাস ওভেন আমদানি শুরু করে। এরপর ১৯২৪ সালে মুম্বই কারখানাটি  তৈরী হয় এবং লন্ডনের পিক ফ্রান্স নামে একটি বিস্কুট কোম্পানি বিবিসিও-তে নিয়ন্ত্রণকারী অংশ কিনে নেয়। মূলত এরপরেই, ব্রিটানিয়ার বিস্কুট এই কোম্পানির পণ্য বিখ্যাত হতে থাকে।

বলে রাখা ভালো, ব্রিটানিয়া কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক উত্থান-পতন, এমনকি যুদ্ধও দেখেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটানিয়া বিস্কুটের উচ্চ চাহিদা ছিল, যা কোম্পানির বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় , ব্রিটানিয়া ভারতের মিত্র শক্তির দেশগুলি থেকে সৈন্যদের সরবরাহের জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছিল। আর সেই অর্ডার কোম্পানির বার্ষিক বিক্রয়কে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১.৩৬ কোটিতে উন্নীত করে। এরপর ১৯৫৪ সালে, ব্রিটানিয়া ভারতে উচ্চ মানের স্লাইসড এবং মোড়ানো রুটি তৈরি করে। ১৯৫৫ সালে,  চালু হয় ব্রিটানিয়া বোরবন বিস্কুট বানানো। এরপর ১৯৬৩ সালে বাজারে আসে ব্রিটানিয়া কেক (britannia cake)। ১৯৮৬ সালে , ব্রিটানিয়া জনপ্রিয় গুড ডে ব্র্যান্ড চালু করে। লিটল হার্টস এবং 50-50 বিস্কুট বাজারে আসে ১৯৯৩ সালে।

১৯৭৯ সালের ৩রা অক্টোবর কোম্পানির নাম ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড থেকে ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড করা হয়  এবং ১৯৮২ সালে , একটি আমেরিকান কোম্পানী, Nebisco Brands Inc. পিক ফ্রান্সিসের কাছ থেকে একটি অংশ কিনে নেয় এবং ব্রিটানিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালে , কোম্পানির বিক্রয় ১০০ কোটি ছুঁয়ে ফেলে। ১৯৮৯ সালে , ব্রিটানিয়া তার কার্যনির্বাহী কার্যালয় ব্যাঙ্গালোরে স্থানান্তরিত করে। ১৯৯৮ এবং ২০০১ এর মধ্যে, ব্রিটানিয়ার বিক্রয় চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক ১৬ শতাংশ হারে এবং পরিচালন মুনাফা ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তারপর শীঘ্রই কোম্পানিটি বার্ষিক ২৭  শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে , যেখানে শিল্পের বৃদ্ধির হার ছিল ২০ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে , ফোর্বস গ্লোবালের ৩০০টি ছোট কোম্পানির তালিকায় ব্রিটানিয়া অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালে ব্রিটানিয়া সুপারব্র্যান্ডের মর্যাদা পায়। ২০১২ সালে, কোম্পানিটি এশিয়া প্যাসিফিক কোয়ালিটি অর্গানাইজেশন থেকে গ্লোবাল পারফরম্যান্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পায়।

বন্ধ হয়ে গেল ব্রিটানিয়া কোম্পানির তারাতলার কারখানা?

ব্রিটানিয়া কোম্পানির কলকাতার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে এই নিয়ে একটি গুজব রটে। তবে যা তথ্য ছড়িয়েছে তা ভুয়ো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও হতে পারে। বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে কথার পর এমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র। তার দাবি, রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আরও ভালোভাবে কোম্পানিটি চালাতে আগ্রহী শীর্ষকর্তারা। সূত্রের খবর, মাস দুয়েক ধরে তাড়াতলার (Taratala) কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধের মুখে। তখনই অশনি সংকেত পান কর্মীরা। সোমবার সকালে অন্যান্য দিনের মতো নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় পৌঁছন কর্মীরা। কিন্তু গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস দেখেন বলে খবর। এর পরই ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার একমাত্র কারখানাটি বন্ধ করে দিচ্ছে ব্রিটানিয়া। কিন্তু এই খবর ভুয়ো বলেই দাবি করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, তারাতলায় ব্রিটানিয়া (Britania) সংস্থার বড় উৎপাদনকারী সংস্থা। প্রতি বছর গড়ে ২৫০০ টনেরও বেশি বিস্কুট-সহ অন্যান্য স্ন্যাকস উৎপাদন হতো। যদিও বা এর আগেও মুম্বই এবং চেন্নাইয়ের পুরনো কারখানাও বন্ধ করেছে ব্রিটানিয়া। এখন আধুনিক উৎপাদন শুরু হওয়ায় বড় শহরের পুরনো কারখানাগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আগেই নেয় ব্রিটানিয়া। তবে উৎপাদন ছাড়াও পরিকল্পনা থেকে বিপণনের ক্ষেত্রে পূর্ব ভারতের কেন্দ্র ব্রিটানিয়ার তারাতলার কারখানা যে বন্ধ হবে না তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র।