Healthy Bone and Osteoporosis | ৩০ পেরোতেই হাড়ের সমস্যা ঘরে ঘরে! জানুন কীভাবে নেবেন হাড়ের যত্ন?
মানুষের হাড় সবচেয়ে বেশি মজবুত অবস্থায় থাকে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে। এরপর থেকে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। ৩০ বছরের পর হাড়ের যত্ন রাখতে কোন ভারতীয় সুপার ফুড খাবেন, কী করবেন জানুন।
একটা বয়সের পর থেকে কমবেশি সকলেরই হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দেয় বেশি। হাড়ের এই বিশেষ রোগটিকে অস্টিওপোরেসিস (Osteoporosis) বলা হয়। এই সমস্যায় হাড়ের ভিতরে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের ঘনত্ব কমে যেতে থাকে। সেই কারণে, হাড় কিছু ক্ষেত্রে ক্ষয় হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে হাড় ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে যায়। আর এর ফলেই সারা বছর হাড় সংক্রান্ত নানা সমস্যা লেগেই থাকে। এই সমস্যা হওয়ার পিছনে জিনগত সমস্যা এবং পুষ্টির অভাব মুলত দায়ী। অনেক সময়ে এই শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। তবে বাজার চলতি পুরুষ-মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট (Calcium Tablets for Women) অনেক সময়ই পারিপার্শ্বিক ক্ষতি করে বেশি। এছাড়াও অনেকে জয়েন্ট ব্যথর তেল (Joint Pain Oil)ও ব্যবহার করে থাকেন। তবে তাতেও বিশেষ কিছু লাভ হয়না। দেখে নিন হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে কী করবেন এবং ডায়েটে রাখবেন কোন ভারতীয় সুপার ফুড (Indian Super Food)!
অস্টিওপরোসিস কী এবং কারণ । What is Osteoporosis and its Causes :
বয়সের সাথে সাথে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। একে থামিয়ে রাখার কোনো ওষুধ বা উপায় আবিষ্কার হয়নি। তবে চেষ্টা করলে হাড়ের এই বুড়িয়ে যাওয়ার গতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। অস্টিও অর্থ হাড় এবং পরোসিস অর্থ পোরস বা ছিদ্র। সে হিসেবে অস্টিওপরোসিস বলতে বোঝায় যখন হাড়ে বেশি পরিমাণে ছিদ্র থাকে। হাড়ে বেশি ছিদ্র থাকা মানে বোন ডেনসিটি বা হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া। এতে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সহজেই হাড় ভেঙ্গে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাড় দুর্বল হওয়ার এই স্বাস্থ্যগত অবস্থাই অস্টিওপরোসিস।হাড়ের দু'টি অংশ থাকে। ওপরের শক্ত আবরণটিকে বলা হয় কমপ্যাক্ট বোন। ভেতরে স্পঞ্জের মতো ছিদ্র ছিদ্র করা স্তরটিকে বলা হয় স্পঞ্জি বোন বা ট্রেবাকুলার বোন।অস্টিওপরোসিস হলে হাড়ের ওপরের আবরণ বা কম্প্যাক্ট বোন অনেক পাতলা হয়ে যায় এবং স্পঞ্জি অংশটির ছিদ্র বেড়ে যায় বা ঘনত্ব কমে যায়, যা হাড়কে দুর্বল করে ফেলে। কম্প্যাক্ট বোনের গঠন প্রতি ১০ বছর অন্তর আর স্পঞ্জি বোন প্রতি তিন বা চার বছর পর পর বদলায়।
মূলত বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় দুর্বল হতে থাকে যা বার্ধক্যের একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে কিছু মানুষের এই হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, মানুষের হাড় সবচেয়ে বেশি মজবুত অবস্থায় থাকে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে। এরপর থেকে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। যার ফলে ৩০ বছর পেরোলেই কমবেশি সকলের হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
বয়সের হিসেবে পুরুষদের তুলনায় নারীরা আগে অস্টিওপরোসিসে ভোগেন এবং নারীদের এতে আক্রান্তের ঝুঁকিও বেশি। বিশেষ করে নারীদের মেনোপজের পরে তাদের শরীরে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, ফলে তখন তাদের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। সাধারণত ৪৫ বছরের আশেপাশে বেশিরভাগ নারীর মেনোপজ শুরু হয়। এছাড়া যেসব নারীরা ডিম্বাশয় অপসারণ করেছেন তাদেরও হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি রয়েছে। আবার অনেকের জিনগত বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ওপরেও এই হাড়ের সবলতা নির্ভর করে। যাদের খাবারে কোনো বাছবিচার নেই, স্থূলতায় ভুগছেন, কিংবা অপুষ্টিতে আক্রান্ত, শুয়ে বসেন থাকেন, কায়িক শ্রম করেন না কিংবা দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদেরও অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও কারও যদি ধূমপান, অতিরিক্ত মদপান ও মাদক সেবনের মতো অভ্যাস থাকে, সেটিও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ানোর কারণ। আবার ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে, হাইপার থাইরয়েডিজম বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকলে, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের কারণে যেকোনো বয়সীদের অস্টিওপরোসিস হতে পারে।
হাড়ের যত্ন নেবেন কীভাবে? । How to Take Care of Bones?
বয়স বাড়লে হাড়ের সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে। এক্ষেত্রে অনেকেই এই ঘটনাকে 'স্বাভাবিক' মনে করে জয়েন্ট ব্যথর তেল (Joint Pain Oil) ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার বাজার চলতি পুরুষ-মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট (Calcium Tablets for Women) খেয়ে থাকেন। তবে সেভাবে কাজ হয়না কিছুতেই। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্টিওপোরোসিস একদিন তৈরি হয় না। রোগটি অনেক আগে থেকেই ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। মোটামুটি ৩০ বছর বয়স থেকে অনেক মহিলাই এই সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে কম বয়স থেকে খাওয়াদাওয়ার কিছু নিয়ম মানলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব খুব সহজেই। আসলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার পিছনে ভিটামিনের অভাবও কিছুটা দায়ী। তাই ভিটামিন সি, ই ও কে রয়েছে এমন খাবার নিয়মিত ডায়েটে থাকা উচিত। এগুলিতে ম্যাগনেশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজও যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। ফলে হাড় সুস্থ্য রাখতে ডায়েটে বিশেষ কিছু ভারতীয় সুপার ফুড (Indian Super Food) রাখতে হবে। এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রম করাও বেশ জরুরি।
কী কী খাবেন?
প্রতিদিনের খাবারে কিছু পুষ্টিগুণ থাকলে হাড়ের রোগ এড়ানো সহজ হয়। হাড় মজবুত করার অন্যতম প্রধান খনিজ পদার্থ হল ক্যালসিয়াম। এটি এমন একটি খনিজ যা আমাদের হাড়কে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় (a mineral that is required for keeping our bones healthy)। ফলে রোজকার খাবারে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ভারতীয় খাবার (Calcium rich Indian food) রাখা আবশ্যিক। তবে ক্যালশিয়ামকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে প্রয়োজন আরও পাঁচ উপাদান, যথা-
জ়িঙ্ক : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে জ়িঙ্ক। অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগ ঠেকিয়ে রাখতে জ়িঙ্ক অপরিহার্য। দুগ্ধজাত খাবার, কুমড়ো বীজ, বাদাম এবং ডিমের মধ্যেও জ়িঙ্ক থাকে।
ভিটামিন সি : হাড়ের ঠিকমতো বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ভিটামিন সি। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে। তাতে সামগ্রিক ভাবে হাড়ের অসুখের ঝুঁকি কমে। তাই এই মরসুমে নিয়ম করে খান কমলালেবু ও মুসম্বি।
ভিটামিন কে২ : হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ভিটামিন-কে অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। হাড়ের উপর কতটা ক্যালশিয়াম সঞ্চিত হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে ভিটামিন-কে। শরীর যাতে যথেষ্ট ভিটামিন কে পায়, এর জন্য ডায়েটে রাখতে হবে ব্রকোলি, পালং শাক, বাঁধাকপি ও লেটুস।
ম্যাগনেশিয়াম : হাড়ের অন্তবর্তী গ্রন্থিগুলিতে ম্যাগনেশিয়াম থাকে।অস্টিওপোরোসিসের মতো অসুখের ঝুঁকিও কমায় ম্যাগনেশিয়াম। নানা রকম বীজ, বাদাম ও দানাশস্য থেকে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।
ভিটামিন ডি : হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে ভিটামিন ডি-ও অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন ডি ছাড়া শরীর ক্যালশিয়াম শোষণ করতে পারে না। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ছাড়া খাবার থেকে প্রাপ্ত ক্যালশিয়ামের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ শোষিত হয়। ভিটামিন ডি পেতে দিনে অন্তত মিনিট ১৫ সূর্যের আলোয় দাঁড়ান। আর ডায়েটে রাখুন সয়াবিন, পালং শাক, বড় মাছ।
শরীর চর্চা মাস্ট!
বয়স বাড়লে হাড়ের যত্ন নিতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ভারতীয় খাবার (Calcium rich Indian food) খাওয়ার পাশাপাশি শরীর চর্চাও প্রয়োজন। বয়সের সাথে সাথে শারীরিক পরিশ্রম করা বেশ জরুরি। যারা নিয়মিত কায়িক শ্রম করেন বা শরীরচর্চা করেন তাদেরও হাড়ের গঠন মজবুত হয়, হাড় ক্ষয়ের গতি কমে যায় এবং হাড় গঠনের গতি বেড়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এমন একটি খনিজ যা আমাদের হাড়কে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় (a mineral that is required for keeping our bones healthy)। ফলে এই বিশেষ খনিজ যুক্ত খাবার ডায়েটে রাখতে বলে থাকেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীর পরিস্থিতি বুঝে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট, ন্যাসাল স্প্রে, সাপ্তাহিক বা মাসিক ট্যাবলেট, বছরে একবার হরমোনাল ইনজেকশন, হরমোনাল ওষুধ, ইত্যাদি প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। মেনোপজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এমন নারীদের ওষুধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যাস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ানো হয় যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এসব ওষুধের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। ফলে হাড়ের যত্ন নিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বরাবরই খাদ্যাভাস ও শরীর চর্চার ওপরই জোড় দিয়ে থাকেন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- খাদ্য
- খাদ্যগুণ
- খাদ্যের গুনাগুন
- শরীর সুস্থতা
- শরীরচর্চা