India’s Rice Export | চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত! খাদ্য সংকটের আশঙ্কা গোটা বিশ্বে!
বিশ্বের মোট চাল চাহিদার অধিকাংশই মেটায় ভারত। ফলে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে খাদ্য সংকটে পড়তে পারে বিশ্ব। সমস্যায় পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চাল চাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য হলো চাল। কিন্তু সম্প্রতি এই অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য অর্থাৎ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত (India)। চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতেই গোটা বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকে উদ্বেগ। কারণ ভারত চাল রপ্তানি না করলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা বিভিন্ন মহলের।
গত ২০ই জুলাই বাসমতি (Basmati) ছাড়া অন্যান্য সাদা চালের রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। জানানো হয়, মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্যই এই উদ্যোগ মোদি সরকারের। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার (South Asia) বর্তমানে অস্বাভাবিক আবহাওয়া। ভারতের বেশি বৃষ্টিতে বিপন্ন চাষবাস। পাকিস্তানের (Pakistan) বন্যাও বিঘ্ন ঘটিয়েছে চাল সরবরাহে। পাশাপাশি এল-নিনো (El-Nino) সহ অস্বাভাবিক সব প্রাকৃতিক বিপর্যয় জেরে শস্যের উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণগুলোর জন্য চাল উৎপাদনে কোনোভাবে ঘাটতি দেখা দিলে তা সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। যার ফলে আগেভাগে এই ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে চাল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানি করা হয় মূলত চার ধরনের চাল। যার মধ্যে সরু লম্বা দানার কম দামের ইন্ডিকা চালই সবথেকে বেশি কেনা বেচা হয়। গত বছর ভারত ১৪০টি দেশে মোট ১২ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছিল। যার মধ্যে ৬ মিলিয়ন টনই ছিল তুলনামূলক কম দামে ইন্ডিকা গোত্রের চাল। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের মোট চাল আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৬ মিলিয়ন টন। অর্থাৎ গত বছর বিশ্বব্যাপী যত চাল আমদানি-রপ্তানি করা হয়েছে তার ৭০ শতাংশ রপ্তানি করেছে ভারত।
ইতিমধ্যেই ভারতের চাল রপ্তানি করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর চাল নিয়ে হাহাকার পড়ে গেছে বহু দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) এবং কানাডায় (Canada) দেখা দিয়েছে ভারতীয় চালের সংকট। সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়েছে এই দেশগুলির চাল সংকটের ভিডিও। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দোকানের তরফ থেকে এক একটি চালের বস্তা একটি করে পরিবারের জন্য নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই চালের বস্তা নিয়েই রীতিমতো হাতাহাতি লেগে যাচ্ছে ক্রেতাদের মধ্যে। চাল কিনতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সেখানকার মানুষ।
থাইল্যান্ড (Thailand), ভিয়েতনাম (Vietnam), পাকিস্তান (Pakistan) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাল রপ্তানিতে শীর্ষে থাকলেও বিশ্বের মোট চাল চাহিদার ৪০ শতাংশই রপ্তানি হয় ভারত থেকে। এছাড়া চাল আমদানিকারক দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চিন (China), ফিলিপাইন (Philippines), নাইজেরিয়া (Bangladesh)। ভারত থেকে চাল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত এই দেশগুলিতেই বেশি সংকট দেখা যাবে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ বাজারে ঘাটতি দেখা দিলে চাল আমদানি করে ইন্দোনেশিয়া (Indonesia) এবং বাংলাদেশও (Bangladesh)। অন্যদিকে ইদানিং আফ্রিকা মহাদেশে (Africa) কিউবা (Cuba) এবং পানামাতেও (Panama) বাড়ছে চালের চাহিদা।
চাল রপ্তানিতে লাগাম টানায় কেবল বিদেশই নয় ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন বাংলার চাষী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। বিদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলায় রাজ্য সরকারের কাছে সহায়ক মূল্যে প্রায় ২ লক্ষ টন ধান বিক্রি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) কৃষকরা। রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে বেশ ভালই ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা ।চাষ কলের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতি কুইন্টাল মোটা চালের দাম কমেছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। ২২৬০ টাকার চাল এসে দাঁড়িয়েছে ২১৪০ টাকায়। পাশাপাশি নতুন গোবিন্দ ভোগের দামও কমেছে। ২৫৪০ টাকা থেকে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৪০০ টাকায়। অর্থাৎ চালের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চালের অধিক যোগানের ফলে কমেছে চালের দাম। ধান কিনতে আসছেন না কেউই। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে কথোপকথন চলছে বলে জানা গিয়েছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার (Panchayat Minister Pradeep Majumder) এই বিষয়ে জানান, এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee) দুইবার চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রকে। তবে এবার ফের আরেকবার তথ্যসহ চিঠি দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।