লাইফস্টাইল

Healthy Diet | সুস্থ্য রাখবে সুষম ডায়েট! এই 'সুষম ডায়েটে' কী কী থাকছে কত পরিমাণে? জানিয়ে দিল ICMR!

Healthy Diet | সুস্থ্য রাখবে সুষম ডায়েট! এই 'সুষম ডায়েটে' কী কী থাকছে কত পরিমাণে? জানিয়ে দিল ICMR!
Key Highlights

প্রায় ১৩ বছর পর ভারতীয়দের জন্য খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে এনআইএন হায়দরাবাদ অর্থাৎ হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের তরফ থেকে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, রোগ এবং খাদ্যাভাসের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করেছে আইসিএমআর এর অধীনস্ত এনআইএন।

সুস্থ্য থাকতে 'সুষম ডায়েট' মেনে চলা উচিত এই কথা আট থেকে আশি সকলেই জানি। তবে তা আসলে মেনে চলি হাতে গুনে কয়েকজন। আবার 'সুষম ডায়েট' মেনে চলার ইচ্ছা থাকলেও কী কী ধরণের খাবার কত পরিমাণে খাওয়া উচিত সে সম্পর্কেও জ্ঞান মানুষের খুব কম। যার ফলে বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই যেমন পারেন তেমন খাবার রোজ খেয়ে থাকেন। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারও। তাই প্রায় ১৩ বছর পর ভারতীয়দের জন্য খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা (Dietary Guidelines for Indians) প্রকাশ করা হয়েছে এনআইএন হায়দরাবাদ (NIN Hyderabad) অর্থাৎ হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের তরফ থেকে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, রোগ এবং খাদ্যাভাসের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করেছে আইসিএমআর এর অধীনস্ত এনআইএন।

সুষম ডায়েট বা ব্যালান্সড ডায়েট কী? । What is Balanced Diet? 

 আইসিএমআর-এর রিপোর্ট বলছে, বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে দৈনন্দিন ক্যালোরির পরিমাণ। রোজ আমরা কী খাচ্ছি, কতটা খাচ্ছি, সেই খাবার থেকে শরীরে কতটা পুষ্টি উপাদান যাচ্ছে, আর কতটা খারাপ জিনিস ঢুকছে, তার সঠিক পরিমাণ বার করে সুষম খাবারের তালিকা তৈরি করার নামই ডায়েট। একে বলা হয় সুষম ডায়েট বা ব্যালান্সড ডায়েট। আইসিএমআর-এর রিপোর্ট বলছে, বিএমআই (BMI) ৩০-এর উপরে উঠতে দেওয়া যাবে না। মোট ক্যালোরির ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ যেন আসে উপকারি ফ্যাট থেকে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৭ শতাংশের বেশি থাকলে চলবে না। তাই সুষম ডায়েটে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি খেতে হবে, রেড মিট, অ্যালকোহল একদম বয়কট করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেশি তেল রয়েছে এমন খাবার বাড়িয়ে দেয় কোলেস্টেরলের মাত্রা।

ভারতীয়দের জন্য খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা । Dietary Guidelines for Indians :

 আমাদের বেশিরভাগ ব্যক্তির রোজের খাওয়া মানে ভাত বা রুটি, ডাল, তরকারি, মাছ, মাংস বা ডিমই বুঝি। সেই সঙ্গে দুধ, কিছু বাদাম বা দানাশস্যও থাকে রোজের পাতে। কিন্তু তা-ও দেখা যায়, রোজের এই খাবার খেয়েও কারও ওজন বাড়ে, আবার কারও কমতে থাকে। কেউ ভোগেন অপুষ্টিতে, তো কেউ স্থূলতায়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (ICMR) তথ্য বলছে, ৫৬.৪ শতাংশ ভারতীয়ই সঠিক ডায়েট মেনে চলেন না। সে জন্য অনেক শিশুই ছোট থেকে ম্যারাসমাস (Marasmus) জাতীয় অপুষ্টির শিকার হয়। আবার অনেকে ভোগে ডায়াবিটিস বা হাইপারটেনশনে। বাড়তি ওজন বা স্থূলত্বেরও শিকার অনেকে। এক্ষেত্রে সুস্থ্য থাকতে অনেকে নিজের মতো করে ডায়েট মেনে চলেন। তবে তাতেও লাভের লাভ কিছু হয় না। এক্ষেত্রে মেনে চলা হয় না সুষম ডায়েট। সুস্থ্য থাকতে, রোগভোগ দূরে রাখতে সুষম খাদ্যের গুরুত্ব (Importance of Balanced Diet) বিশাল। তাই এই ডায়েটে কী কী খাবার কত পরিমাণে রাখা উচিত সেই সম্পর্কে সকলে অবগত করতেই প্রায় ১৩ বছর পর ভারতীয়দের জন্য খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে এনআইএন হায়দরাবাদ (NIN Hyderabad) অর্থাৎ হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের তরফ থেকে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, রোগ এবং খাদ্যাভাসের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করেছে আইসিএমআর এর অধীনস্ত এনআইএন।

আইসিএমআরের হিসেবে অনুযায়ী রোজের ভাত-ডাল-তরকারি অথবা মাছ-মাংস-ডিম, দানাশস্য, দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য সঠিক পরিমাণে খাওয়াই হল সুষম ডায়েট। সুষম ডায়েট রোজকার যাপনে মেনে চলাই যায়। এতে আলাদা করে বিশাল খরচের ব্যাপার নেই, ঘরে যা রোজকার খাওয়াদাওয়া তারই একটু এ দিক-ও দিক করে ডায়েট মানা যায়।

 দেখে নিন কোন ধরণের খাবার কত পরিমাণে খাবেন-

  • রোজের ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সব থাকবে। সবুজ শাকসবজি, স্যালাড যেমন রোজের খাদ্যতালিকায় থাকবে। তেমনি থাকবে ডাল, রুটি ফাইবারের জোগান। গোটা ফলও রাখতে হবে।
  •  ঘি, সর্ষের তেল, তিলের তেল, আখরোট, কাজু, আমন্ড ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করবে। তবে বাইরে থেকে কেনা খাবার, ট্রান্স ফ্যাট আছে এমন খাবার খাওয়া চলবে না। 
  • প্রোটিনের জন্য ডাল, পনির, ছানা, ডিম, চিকেন, ছোলা-মুগ, ছাতু, মাছ সবই খাওয়া যেতে পারে।
  • কেউ যদি ছোট থেকে দু’বেলা ভাত খেয়ে বড় হন আর বড় হয়ে 'সুস্থ্য' হওয়ার জন্য হঠাৎ ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন, তার বদলে শুধু সব্জি ও মাংস সেদ্ধ খেতে থাকেন, তা হলে কিন্তু শরীর মেনে নেবে না। নানা রকম অসুখবিসুখ দেখা দেবে। তাই ভাত খান। তবে পরিমিত ভাবে।
  • প্রতি দিন তাজা ফল ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম বা আধ কাপের মতো।
  • ডায়েট রোজ নানা রকম দানাশস্য যেমন- গম, বাজরা, ওট্‌স, মিলেট ইত্যাদি ২৫০ গ্রাম বা আড়াই কাপের মতো রাখতে হবে।
  •  ডাল জাতীয় খাবার খেতে হবে ৮৫ গ্রাম বা ৩/৪ কাপ মতো।
  • সুষম ডায়েটে দিনে এক থেকে দেড় কাপ দুধ বা দই রাখলে ভাল।
  • বাদাম, বীজ ৩৫ গ্রাম বা ৩ চা চামচের মতো খেতে হবে।
  •  ডায়েটে ফ্যাট থাকবে ২৭ গ্রাম বা আড়াই চা চামচের মতো।
  • চিনি মেপে খেতে হবে, দিনে ২০-২৫ গ্রামের বেশি চিনি নয়। সাধারণত দিনে দুই চা চামচ চিনিই যথেষ্ট।
  • প্রতি দিন ২০০০ কিলো ক্যালোরি পেতে হলে পাতে সবুজ শাকসব্জি অন্তত ৪০০ গ্রাম রাখতে হবে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সারাদিনে খাবারকে যদি ৬টি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ বাটি অর্থাৎ প্রত্যেক বাটি ১০০-১৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া জরুরি।

আইসিএমআর-র ডঃ রাজীব বাহল বুধবার নির্দেশিকা প্রকাশ করে বলেছেন, রান্নার তেলের ব্যবহার কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত প্রোটিন পাউডার খেতেও বারণ করা হচ্ছে। প্রোটিন পাউডারে যোগ করা শর্করা, নন-ক্যালোরি মিষ্টি এবং কৃত্রিম স্বাদের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া ভুল। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ‘কম্প্রিহেনসিভ ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভে’-র একটি রিপোর্ট বলছে, এই সুষম ডায়েট সঠিক ভাবে মেনে চললে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, অপুষ্টি বা স্থূলত্বের মতো সমস্যা ৮০ শতাংশ কমে যাবে। এই ডায়েট মেনে চললে ওজন তো বাড়বেই না, পাশাপাশি কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশন, এমনকি টাইপ-২ ডায়াবিটিস থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। ডায়েটের সঙ্গেই নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। মেদহীন, ছিপছিপে চেহারা সুষম ডায়েটের একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং রোগহীন, সুস্থসবল, চনমনে থাকাটাই কাম্য।