বর্ষবরণের মূল আকর্ষণ হল বর্ষপঞ্জীকা। আধুনিক বাংলা ক্যালেন্ডারে ব্যবহৃত ১২ মাসের নামকরণ কী ভাবে হয়েছে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। জেনে নিন নানা অজানা কথা
মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে বাংলা বর্ষপঞ্জি বা বাংলার ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলা অ্যাকাডেমির গঠিত কমিটি কর্তৃক পুরাতন ক্যালেন্ডারের সংশোধিত সংস্করণ এবং ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বর্ষপঞ্জি চালু রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে এখনও পর্যন্ত পুরানো আমলের তৈরী বর্ষপঞ্জিই ব্যবহার করা হচ্ছে। হিন্দু ধর্মের অনেক পার্বণ চন্দ্র বছরভিত্তিক হওয়ার কারণে এখনও পুরাতন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী দিনক্ষণ গণনা করা হয়। যার কারণে পয়লা বৈশাখ দিনটি ইংরাজিতে পরিবর্তনশীল হয় অর্থাৎ কখনো ১৪ই এপ্রিল, আবার কখনো ১৫ই এপ্রিল পালন করা হয়। এই কারণে বৈশাখ মাস কোনো বছর ৩০ দিনে আবার কখনও ৩১ দিনে হিসাব করা হয়।
বাংলা বর্ষের উৎযাপন কবে থেকে এবং কীভাবে শুরু হয়
মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে—১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা বর্ষের আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু হয়। অবশ্য এই ব্যবস্থা বাংলা বছরকে ভালোবেসে প্রবর্তন করা হয়নি বরং প্রজাদের থেকে সুবিধাজনক সময়ে খাজনা আদায়ের জন্যই সম্রাট এই ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন।
আসলে বাংলা সন কবে থেকে গণনা শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে অনেক মতভেদ থাকলেও এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলা নববর্ষের গণনা শুরু হয় গৌড় রাজা শশাঙ্কর আমল (১২ এপ্রিল ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে। অর্থাৎ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার ৫৯৩ বছর পর থেকে বাংলা নতুন বছর গণনার সূত্রপাত হয়। সেই অনুসারে এখন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
বাংলা বছর গণনা সৌর দিন, মাস ও বছরভিত্তিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মতোই ৩৬৫ দিনে গণনা করা হয়। ৩৬৫ দিনে ১ বছর গণনা করা হলেও বাস্তবে পৃথিবী তার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন পাঁচ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড।
বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির ক্ষেত্রে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র—এই পাঁচ মাসের প্রতিটিকে ৩১ দিনের মাস গণনা করা হয়। আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র—এই সাত মাসের বেলায় প্রতিটিকে ৩০ দিনের মাস ধরে গণনা করা হয়। তবে সৌর বছরে যেহেতু ৩৬৫ দিনের পরও পাঁচ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড অতিরিক্ত সময় থাকে, সেই সময়কে সমন্বয় সাধনের জন্য প্রতি গ্রেগরিয়ান লিপ ইয়ারের সংশ্লিষ্ট বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একদিন যোগ করা হয়। তাই চার বছর অন্তর ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের বদলে ৩১ দিনের হিসাব করা হয়।
বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ, এই বারো মাসের নাম কীভাবে দেওয়া হয়েছে জানেন
আধুনিক বাংলা ক্যালেন্ডারে ব্যবহৃত ১২ মাসের নামকরণ কী ভাবে হয়েছে তা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। জানা যাচ্ছে মূলত: প্রাচীন জ্যেতিষশাস্ত্র সুরিয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে নক্ষত্ররাজির নামানুসারে ১২ মাসের নামকরণ হয়েছে। যেমন বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠার নামানুসারে জ্যৈষ্ঠ ইত্যাদি।
সংশোধিত বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাংলা বছরে ছয়টি ঋতু বিরাজমান। এগুলো হলো: গ্রীষ্ম (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ), বর্ষা (আষাঢ়-শ্রাবণ), শরৎ (ভাদ্র-আশ্বিন), হেমন্ত (কার্তিক-অগ্রহায়ণ), শীত (পৌষ-মাঘ) ও বসন্ত (ফাল্গুন-চৈত্র)।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
কত হিজরীতে বাংলা সন চালু হয়?
৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরী সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
বাংলা সালের প্রচলন কে করেন?
১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর নতুন বর্ষপঞ্জি 'তারিখ-ই-ইলাহী' বা 'ইলাহী সন' চালু করেন।
বাংলা সাল গণনা শুরু করেন কে?
সম্রাট আকবর।
বাংলা বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার ব্যবহারকারী দেশগুলি কী কী?
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্য।
অধিবর্ষ ব্যতীত বাংলা বর্ষপঞ্জিতে ৩১ দিনের মাস কয়টি?
নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন—এই ছয় মাসের হিসাব হবে ৩১ দিনে।
- Related topics -
- নববর্ষ
- বর্ষপঞ্জী
- পয়লা বৈশাখ