Weather | ডুয়ার্সে প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন একাধিক এলাকা! হাতনিকুন্ড ব্যারাজের কারণে দিল্লিতে বন্যা পরিস্থিতি?
রাতভোর ভূটানের পাহাড় ও ডুয়ার্সে বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে একাধিক এলাকা। জলের মধ্যে আটকে রয়েছে প্রায় ৫০০টি পরিবার। দিল্লির বন্যার পরিস্থিতির জন্য হরিয়ানার হাতনিকুন্ড ব্যারাজ থেকে জল ছাড়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এতদিন খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলো দিল্লি (Delhi), হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh) বন্যা, ভূমিধসের খবর। এবার ক্রমশ একই পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে ডুয়ার্সের (Dooars) অবস্থাও। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে লাগাতার বৃষ্টি ভুটান পাহাড় ও ডুয়ার্সে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে আলিপুরদুয়ারও (Alipurduar)। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।
গতকাল রাত থেকেই লাগাতার বৃষ্টি শুরু হয়েছে ভূটান পাহাড় ও ডুয়ার্স এলাকায়। যার ফলে কার্যত বানভাসি বানারহাট, বিন্নাগুরি, গয়েরকাটার বিভিন্ন এলাকা। অবিরাম বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ছে রাস্তা, একের পর এক গাছ। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে নাজেহাল অবস্থা স্থানীয়দের। জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে জলবন্দি হয়ে রয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবার। জলে প্রায় ডুবে রয়েছে অজয় ঘোষ কলোনি, জ্যোতির্ময় কলোনিতেও দেড় শতাধিক বাড়ি। একই ছবি দেখা যাচ্ছে আলিপুরদুয়ারেও। কোথাও কোমর জল, কোথাও জল গলা পর্যন্ত। স্থানীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারকার্য শুরু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগেই আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে বৃষ্টি নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হওয়ারও আশঙ্কা জারি করা হয়। তবে এখনও সেই সতর্কতা জারি রয়েছে বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। জানা গিয়েছে,বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে মালদহ (Malda), উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে (North and South Dinajpur)। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে দার্জিলিং (Darjeeling) থেকে উত্তর দিনাজপুর (North Dinajpur) সব জেলাতেই। কালজানি এবং তোর্সা নদীতে জারি হয়েছে হলুদ সংকেত। তবে দুদিন পর থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে।
অন্যদিকে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, দক্ষিণবঙ্গে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় থাকবে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। তবে খুব একটা বৃষ্টি হবে না বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রার খুব একটা পরিবর্তন হবে না। শুক্রবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গে। শনি ও রবিবার উপকূলের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উল্লেখ্য, চলতি বছর জুনের প্রথম থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৯ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বৃষ্টির।
প্রসঙ্গত, পর পর তিনদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টির জেরে রাজধানী দিল্লির অধিকাংশ চলে যায় জলের তলায়। বৃদ্ধি পেয়েছে যুমনার (Jumna) জলস্তর। তবে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে হরিয়ানার হাতনিকুন্ড ব্যারাজ (Hathnikund Barrage, Haryana) থেকে জল ছাড়ার পর। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের (Central Water Commission) এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যমুনায় পলি জমে থাকায় হরিয়ানার ব্যারেজ থেকে জল খুব তাড়াতাড়ি দিল্লিতে এসে পৌঁচাচ্ছে। আগে ব্যারেজ থেকে জল ছাড়লে, তিনদিন পর সেই জল দিল্লিতে পৌঁছাত। কিন্তু গত বছর থেকে এই সময় অনেক কমেছে। ফলে তার মত, দ্রুত যমুনার সংস্কারের কাজ শুরু না করলে আগামীকালে খুব অল্প বৃষ্টিতেই ভাসবে দিল্লি। ইতিমধ্যেই যমুনায় প্রচুর পরিমাণে পলি জমার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজের প্রধান মনু ভাটনগরও (Manu Bhatnagar, Head of the Indian National Trust for Art and Cultural Heritage)। পলি জমার জন্যই অল্প সময়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টির জেরে যমুনার জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
দিল্লি প্রশাসন সূত্রে খবর, ভারী বৃষ্টি ও নতুন করে হরিয়ানার হাথনিকুন্ড বাঁধ থেকে জল ছাড়ার জেরে বৃহস্পতিবার যমুনার জলস্তর সকাল ৮টা ২০৮.৪৮ মিটার অতিক্রম করে। তারপরেই বিপদসীমা থেকে প্রায় ৩ মিটার জল বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে রাজধানীর নীচু এলাকাগুলি ছাপিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে উঁচু স্থানগুলিতেও। ইতিমধ্যেই সতর্কতা হিসেবে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। উদ্ধার কাজে লাগানো হয়েছে ১২টি দল।