Sri Ramakrishna | সব ধর্ম-বর্ণ-জাতির জন্য দিয়েছিলেন একাধিক উপদেশ! পড়ুন ধর্মসংস্কারক ও আধ্যাত্মিক মানবতাবাদী শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী ও বাণী!

Tuesday, March 12 2024, 9:03 am
highlightKey Highlights

শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবান্দোলন ভারতীয় নবজাগরণের এক অত্যুজ্জ্বল অধ্যায়। সকাল থেকে উদযাপন রীতি শুরু হয় বেলুড় মন্দিরে। ১৮৯ তম জন্মতিথি উপলক্ষ্যে পড়ুন শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী ও বাণী।


বেলুড় মঠ-সহ দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন রামকৃষ্ণ আশ্রম (Ramakrishna Ashrama) ও মিশনে পালিত হচ্ছে রামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথি উৎসব ৷ আজ থেকে ১৮৯ বছর আগে এই তিথিতেই জন্ম হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের। এদিন সকাল মহাসমারহে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ১৮৯ তম জন্মতিথি উদযাপন যথারীতি শুরু হয় বেলুড় মন্দির (Belur Temple)। শ্রী রামকৃষ্ণর জন্মতিথি উপলক্ষ্যে সেজে উঠছে বেলুড় মঠের অন্দরমহল (Belur math inside)। সকাল থেকেই ভক্ত সমাগম বেলুড়ে। সেখানে আজ দিনভর নানা উৎসব-অনুষ্ঠান।

বেলুড় মঠে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্মতিথি উৎসব :

Trending Updates

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে, এ বছর ১২ই  মার্চ মঙ্গলবার বেলুড় মঠে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথি পালিত হচ্ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্মতিথি উৎসব উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে বেলুড় মঠের ভেতর (Belur math inside)। এদিন সূচি মেনেই ৪টায় শ্রী রামকৃষ্ণ বন্দনার মাধ্যমে শুরু হয় ১৮৯তম শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্মতিথির অনুষ্ঠান। বেলুড় মন্দির (Belur Temple) এ সকাল ৯টা ৫ মিনিটে দেবরাজানন্দের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত পাঠ করে শোনান ৷ সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় ভক্তি গীতি ৷ এরপর একে একে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ লীলা প্রসঙ্গ পাঠ, গীতি নাট্য, ভজনের মত দিনভর রয়েছে নানা অনুষ্ঠান। কেবল বেলুড় মঠই নয়, এদিন দেশ জুড়ে রামকৃষ্ণ আশ্রম (Ramakrishna Ashrama) ও মিশনেও পালিত হচ্ছে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ১৮৯তম জন্মতিথি উৎসব।

সংক্ষেপে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী :

১৮৩৬ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামকৃষ্ণদেব। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয়েছিল তাঁর। ছোটবেলায় তাঁর নাম দেওয়া হয় গদাধর চট্টোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় ও মা চন্দ্রামণি দেবী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি গদাধরের মনোযোগ ছিল না। অন্যদিকে শৈশবেই তাঁর মধ্যে প্রকাশ পায় দিব্যভাব। তাঁর ছিল অসাধারণ স্মৃতিশক্তি। রামায়ণ-মহাভারতের পালা একবার শুনেই তিনি মুখস্থ বলতে পারতেন। পিতার কাছ থেকে তিনি ধর্মীয় শ্লোক শিখেছিলেন। গ্রামের কথকদের কাছ থেকে শেখেন রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কাহিনি। পুরীগামী তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে শেখেন ধর্মগীতি। তবে পিতার মৃত্যুর পর অগ্রজ রামকুমার কলকাতার ঝামাপুকুরে নিজস্ব টোলে গদাধরের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন। পরে রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে রামকুমার পূজার ভার পেলে গদাধর অগ্রজের সঙ্গে মন্দিরে স্থান পান । অল্পকাল পরে রামকুমারের মৃত্যু হলে পূজার দায়িত্ব পড়ে গদাধরের ওপর।এরপর ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে গদাধরকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়, কিন্তু তাতে তেমন লাভ হয়না। একমাত্র সাধনমার্গ ছাড়া জাগতিক শিক্ষার প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র আকর্ষণ ছিল না। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের পুরোহিত নিযুক্ত হন। তিনি দাবি করতেন, দেবী কালীর হাতেই তাঁর শিক্ষার শুরু। সকল দেব-দেবীর একত্ব সম্পর্কে তিনি বিশ্বমাতার কাছ থেকে ধারণা লাভ করেন। দীক্ষা লাভের পর তাঁর নাম হয় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। একই সঙ্গে রামকৃষ্ণ বৈষ্ণবসাধনায়ও সিদ্ধিলাভ করেন।

রামকৃষ্ণ শুধু হিন্দু ধর্মমতভিত্তিক সাধনাতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি, তিনি ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের আরাধনা পদ্ধতিকেও জানার চেষ্টা করেন। তাঁর ভাষায়, 'সকল ধর্মই সত্য, যত মত তত পথ।’ তিনি স্ত্রী সারদা দেবীকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান দান করেন এবং তাঁকে তিনি সাক্ষাৎ জগদম্বা জ্ঞানে পূজা করতেন। রামকৃষ্ণ ধর্মের কঠিন তত্ত্বকে সহজ করে বোঝাতেন। বলতেন, ঈশ্বর রয়েছেন সকল জীবের মধ্যে, তাই জীবসেবাই ঈশ্বরসেবা। তাঁর প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ধর্মীয় আদর্শ প্রচার করেন। স্বামী বিবেকানন্দ  ছাড়াও রামকৃষ্ণের উদার ধর্মীয় নীতির প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবাদর্শে মোহগ্রস্ত অনেক শিক্ষিত যুবক ভারতীয় আদর্শে ফিরে আসেন।শিবনাথ শাস্ত্রী, কেশবচন্দ্র সেন, মহেদ্রনাথ সরকার, গিরিশচন্দ্র ঘোষসহ আরও অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন।

শ্রী রামকৃষ্ণর বাণী :

প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও সহজ সরল ভাষায় তিনি মানুষকে নানা উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন। ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে মানুষের মনের অন্ধকার দূর করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। রামকৃষ্ণ বাণী (Ramakrishna Bani) আজও সকলের মনের, বিশ্বাসের অনুপ্রেরণা। কারণ ধর্মীয় উপকরণ ও নিখুঁত আচার পালনের চেয়ে সব সময় মনের ভক্তির কথা বলে গিয়েছেন রামকৃষ্ণ ঠাকুর। তাঁর জন্মতিথিতে জেনে নেওয়া যাক কিছু রামকৃষ্ণ বাণী (Ramakrishna Bani) ও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কয়েকটি অমূল্য উপদেশ।

  • সকল নারীর মধ্যেই শক্তিরূপীনির অবস্থান।
  •  তোমার ধর্ম আমার ধর্ম বলে লড়াই করে কী লাভ? যখন তোমার আমার সবার গন্তব্য সেই এক জনেরই কাছে।
  •  জ্ঞান আমাদের ঐক্যের দিকে নিয়ে যায়, আর অজ্ঞানতা আমাদের পরস্পরের থেকে আলাদা করে রাখে।
  •  ধর্মের বইতে অনেক ভালো ভালো কথা লেখা থাকে। কিন্তু সেগুলো পড়লেই কেউ ধার্মিক হয়ে যাবে না। সেই সব কথাকে নিজের জীবনে ব্যবহার করতে হবে।
  • তুমি যদি মনের মধ্যে অহংকার কালো মেঘ পুষে রাখো, তাহলে স্বয়ং ঈশ্বরও তোমাকে আলোর পথ দেখাতে পারবে না।
  • যে ব্যক্তি কোন স্বার্থ ছাড়াই অন্যের জন্য কাজ করেন, ঈশ্বর তাঁর সর্বদাই মঙ্গল করে থাকেন।

কোনও বিশেষ ধর্ম বা জাতির কথা না বলে সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব জাতির আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য বাণী বিতরণ করে গিয়েছেন রামকৃষ্ণ। রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলন ভারতীয় নবজাগরণের এক অত্যুজ্জ্বল অধ্যায়। উনবিংশ শতাব্দীর ভারতে সম্ভবত তিনিই ছিলেন সবথেকে উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। মা কালীর এই সাধক বহুবার ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেন বলে মনে করা হয়। রামকৃষ্ণ দেবকে নারায়ণের আধুনিক যুগের অবতার বলে মনে করেন তাঁর ভক্তরা। তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বলে তাঁর ভক্তদের মনের বিশ্বাস। তবে রামকৃষ্ণদেব নিজে কোনও দিন নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেননি। রামকৃষ্ণের সাধনাস্থল দক্ষিণেশ্বর এখন অন্যতম তীর্থস্থান। পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠান রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আত্মজ্ঞানের ধারণা, বিশেষ করে বেদান্ত দর্শন এবং সামাজিক শিক্ষা ও ন্যায়বিচারের প্রসারে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ব্রাজিল, হল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, কানাডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর কার্যক্রম রয়েছে। প্রধান কার্যএলাকা বেলুড়, হাওড়া ও কলকাতা। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, বরিশাল, ফরিদপুর, দিনাজপুর, চাঁদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি স্থানে মিশনের কার্যালয় রয়েছে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File