Gyanvapi | জ্ঞানবাপী 'মসজিদে' পুজো করার অনুমতি পেল হিন্দুপক্ষ! এএসআইয়ের ৮৩৯ পাতার রিপোর্ট অনুযায়ী কী কী 'হিন্দু চিহ্নে'র হদিশ মিললো?
সম্প্রতি জ্ঞানবাপীর ৮৩৯ পাতার সার্ভে রিপোর্ট আদালতের কাছে জমা করেছে এএসআই। শিবলিঙ্গ থেকে গণেশ মূর্তির মতো আরও একাধিক কিছু পাওয়া গেল জ্ঞানবাপী মসজিদে। এরপরই জ্ঞানবাপী 'মসজিদে' পুজো করার অনুমতি দেওয়া হলো হিন্দু পক্ষকে।
জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলা (Gyanvapi Masjid Case) নিয়ে বড় রায় দিলো বারাণসীর আদালত। এবার থেকে 'মসজিদে'র বেসমেন্টে বা ‘ব্যাস কা তেয়খানা’ চত্বরে দেবতার উপাসনা করতে পারবেন হিন্দুপক্ষ। ৩১সে জানুয়ারি, বুধবার জ্ঞানবাপী মামলা (Gyanvapi Case) এর শুনানিতে বারাণসীর আদালত জানায়, জেলা প্রশাসনকে ভক্তদের পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ৭ দিনের মধ্যে। এমনকি শ্রী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্টকে এর জন্য একজন পূজারিকে মনোনীত করতেও বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই বারাণসী আদালতের নির্দেশ বেজায় খুশি হিন্দুপক্ষ। উল্লেখ্য, ৩৩ বছর ধরে জ্ঞানবাপী (Gyanvapi) লড়াই চলছে আদালতে। দেখে নেওয়া যাক সেই ৩৩ বছরের জ্ঞানবাপী মসজিদ (Gyanvapi Mosque) এর আইনি লড়াই।
জ্ঞানবাপী আইনি লড়াই :
অ্য়াডভোকেট বিষ্ণু শংকর জৈন, যিনি হিন্দু পক্ষের হয়ে লড়ছেন তিনি জানিয়েছেন, বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরির আগে সেখানে বিরাট হিন্দু মন্দির ছিল। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট দেখিয়ে এই দাবি করেন তিনি। জ্ঞানবাপী সম্পর্কিত ২৪টি মামলা এখনও আদালতে বিচারধীন। এছাড়া বিশেষ আইনজীবী কমিশনার রাজেশ্বর প্রসাদ সিং হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন বলেও দাবি করেছিলেন। এর পরে, রাখি সিং বনাম সরকার মামলায় সিভিল জজ সিনিয়র ডিভিশনের নির্দেশে, অ্যাডভোকেট কমিশনার প্রথমে ৬ ও ৭ মে ২০২২-এ সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এরপর সমীক্ষাটি ১৬ই মে ২০২২-এ তৎকালীন অ্যাডভোকেট কমিশনার অজয় মিশ্র এবং বিশেষ অ্যাডভোকেট কমিশনার বিশাল সিং দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। তিনজন অ্যাডভোকেট কমিশনারের রিপোর্টই হিন্দু মন্দিরের কাঠামোর সমর্থনে ছিল। এএসআই-এর সমীক্ষা প্রতিবেদনটি ২৮ বছরে পরিচালিত তিনটি আদালত কমিশনের প্রতিবেদনেরও নিশ্চিত করেছে। বারাণসীর জেলা ও দায়রা আদালতের বিভিন্ন আদালতে জ্ঞানবাপী (Gyanvapi) এর ২৪টি মামলার শুনানি চলছে।
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ (Gyanvapi Mosque) বিতর্ক নিয়ে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এবং অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি মোট পাঁচটি আবেদন দায়ের করেছিল। তিনটি করেছিল মসজিদ কমিটি এবং দু'টি ছিল উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের। এই পাঁচটি আবেদনের মধ্যে একটি ছিল, ১৯৯১ সালে বারাণসী আদালতে দায়ের হওয়া মামলার রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত। ভগবান আদি বিশ্বেশ্বর বিরাজমানের পক্ষে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এক মন্দিরের উপর জ্ঞানব্যাপী মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল বলে দাবি করে, মসজিদ প্রাঙ্গণের নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানে পুজোর অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে, অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি এবং সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড যুক্তি দিয়েছিল, ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইনের আওতায় এই মামলাটি রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য নয়। উপাসনালয় আইন অনুসারে, ১৯৪৭ সালের ১৫ ই অগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনও ধর্মীয় স্থানের চরিত্র পরিবর্তন করা যায় না। এই মামলার আবেদনকারীরা পাল্টা যুক্তি দিয়েছিলেন, জ্ঞানব্যাপী বিতর্ক স্বাধীনতার আগে থেকে চলছে। তাই এটি উপাসনালয় আইনের আওতায় পড়ে না।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে, সাধ্বী পূর্ণবা দেবী, সত্যম ত্রিপাঠী, মা শ্রিংগার গৌরী, নন্দী মহারাজ, মা গঙ্গা এবং ভগবান শ্রী আদি বিশ্বেশ্বরের আরও ছয়টি মামলাও জ্ঞানবাপীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। একই বছর রাখি সিং সহ পাঁচজন মহিলা শ্রিংগার গৌরীর নিয়মিত দর্শনের জন্য মামলা করেছিলেন। এরপর ২০২২ সালে, স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী, বিশ্ব হিন্দু মহাসভা, আদি বিশ্বেশ্বর বিরাজমান, মুখতার আহমেদ, অভিমুক্তেশ্বরানন্দ, প্রভু নারায়ণ, বিবেক সোনি, ভগবান জ্যোতির্লিঙ্গ, সুধা এবং মসজিদ কমিটি দ্বারা ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে, ভগবান আদি বিশ্বেশ্বর, শৈলেন্দ্র পাঠক, দেবেন্দ্র পাঠক, মুখতার, আমি আদি বিশ্বেশ্বর এবং শ্রী নন্দীজি মহারাজ বিরাজমানের পক্ষে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, একাধিক মামলায় বারাণসী দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর নিযুক্ত কমিটির নির্দেশে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিতরে শুরু হয়েছিল ভিডিও সার্ভে। তার পরে সম্প্রতি আদালতে জমা পড়ে ৮৩৯ পাতার এএসআইয়ের রিপোর্ট। এরপরই জ্ঞানবাপী মামলা (Gyanvapi Case) এর শুনানিতে বেসমেন্টে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হয়।
কী কী পাওয়া গিয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদে?
আগেই জানা গিয়েছিল, এএসআইয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে মসজিদের ওজুখানা চত্বরে অসম্পূর্ণ শিবলিঙ্গের অস্তিত্বও পাওয়া গিয়েছে। আরও যা যা পাওয়া গিয়েছে -
- একটি হনুমানের মূর্তি। যার বাঁ হাত ভাঙা।
- একটি গণেশের মূর্তি। যা টেরাকোটা দিয়ে তৈরি।
- একটি যোনিপট্ট অর্থাৎ শিবলিঙ্গ। যাতে জড়িয়ে রয়েছে একটি সাপ। তবে সেটি কিছুটা তুবড়ে গিয়েছে।
- আরও একটি ভাঙা শিবলিঙ্গ।
- এ ছাড়াও সার্ভে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, একটি কয়েন, পারসি ভাষা খোদাই করা বেলেপাথরে তৈরি স্ল্যাব, একটি হামানদিস্তা, ভাঙাচোড়া আরও নানা হিন্দু মূর্তির চিহ্ন।
- পাওয়া গিয়েছে, রাজা দ্বিতীয় শাহ আলমের সময়কার দু'টি পারসি ভাষায় লেখা কয়েন।
মনে করা হচ্ছে, ওই চত্বরে বিভিন্ন দেবদেবীর সন্ধান পাওয়া সেখানে গড়ে ওঠা সংস্কৃতির একটি মিশ্রণের দিকেই ইঙ্গিত করছে। এই অবস্থায় হিন্দুপক্ষকে পুজোর অনুমতি দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলা (Gyanvapi Masjid Case) নিয়েই বারাণসী আদালত জানায়, মসজিদের ভেতর একটি নির্দিষ্ট অংশে পুজো দিতে পারবে হিন্দুপক্ষ। এমনকি ৭ দিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসনকে এনিয়ে ব্যবস্থা করতে হবে। বার অ্যান্ড বেঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, বারানসী কোর্ট হিন্দু পক্ষকে জ্ঞানবাপী মসজিদের দক্ষিণ সেলারে প্রার্থনা করার অনুমতি দিয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, পুজোপাঠ করা, ভোগ দেওয়া, বেসমেন্টে যে মূর্তি রয়েছে সেটা যথাযথ রাখতে হবে ও লোহার বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।