West Bengal Day | 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালন নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত! বঙ্গের লক্ষাধিক মানুষের আবেগকে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর!
রাজভবনে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালন করলেন রাজ্যপাল। এই সিদ্ধান্ত বঙ্গভঙ্গের স্মৃতিচারণ করাচ্ছে বলে কটাক্ষ। রাজ্যপালকে ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফের পারদ চড়লো রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে। নেপথ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস বা পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা পালনের (West Bengal Foundation Day)। এদিন অর্থাৎ ২০ই জুন মঙ্গলবার রাজভবনে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Chief Minister Mamata Banerjee) ক্ষোভ, কেন এই দিবস পালনের ক্ষেত্রে এক তরফ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এমনকি এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে সরাসরি ফোনও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগেই প্রত্যেক রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই অনুযায়ী এদিন রাজভবনে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজভবন (Raj Bhavan) সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজভবনকে চিঠি পাঠিয়ে ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করার কথা বলা হয়। এমনকি এদিন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হল কী না, সেই বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার কথাও বলা হয়। এই নির্দেশ অনুযায়ী, এদিন রাজভবনে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালন করেন রাজ্যপাল। সঙ্গে রাজভবনে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য বসে আঁকো প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।
তবে এই ঘটনায় মোটেই খুশি নন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। 'পশ্চিমবঙ্গ দিবসে'র সঙ্গে বঙ্গভঙ্গের (Banga-Vanga) যন্ত্রণাময় ইতিহাস জড়িয়ে থাকার কারণে এই দিবস পালনে সহমত ছিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, দেশ স্বাধীনতার (Independence) পর থেকে আজকের আগে পর্যন্ত কখনও এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়নি। সেই সময় সাম্প্রদায়িক শক্তি কাজ করেছিল দেশভাগের নেপথ্যে, যা প্রতিহত করা যায়নি। ফলে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগকে আঘাত করার সঙ্গে তাদের অপমানও করবে। এছাড়াও রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক এবং একতরফা সিদ্ধান্ত বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনও রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়নি। সাম্প্রদায়িক শক্তি কাজ করেছিল দেশভাগের নেপথ্যে। সেই সময় তা প্রতিহত করা যায়নি। আপনার এই উদ্যোগ বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগকে শুধু আহত করবে না, এই সিদ্ধান্তে অপমান করা হয় তাঁদের। এই অসাংবিধানিক এবং একতরফা- সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা।
পশ্চিমবঙ্গ দিবস বা পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা দিবস । West Bengal Day or West Bengal Foundation Day :
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা পেয়েছিলো বাংলাও। তবে তার বদলে হতে হয় দুটি খন্ডে বিভক্ত। স্বাধীনতার আগে ভারত একাধিক ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশ ও নামমাত্র স্বায়ত্তশাসন দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত ছিল। দেশভাগের পর এই প্রশাসনিক বিভাগগুলির কয়েকটি পাকিস্তান (Pakistan) অধিরাজ্যে এবং বাদ বাকি প্রদেশ ও রাজ্যগুলি ভারত (India) অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। যার মধ্যে ভারতের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয় পশ্চিমবঙ্গও (West Bengal)।
১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদ (Bengal Legislative Council) একটি বৈঠকের আয়োজন করে। যেখানে বাংলা পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রীভূত হবে, নাকি ভারতের সঙ্গে একত্রীভূত থাকবে, না বিভক্ত হবে, নাকি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে বাংলাদেশকে (Bangladesh) বাছা হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক এবং আলোচনার পর বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার এবং পশ্চিমবঙ্গের ভিত্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে শুরু হয় দাঙ্গা। যার রক্তাক্ত ইতিহাস, ও কাঁটা দাগ আজও শুকায়নি ইতিহাসের পাতা থেকে।
দেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও এবং ইংরেজদের শাসন শেষ হলেও, তাদের টেনে যাওয়া বিভাজনের ক্ষত রয়ে গিয়েছে দগদগে হয়ে। তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্তে বিতর্ক রয়েছে শুরু থেকেই। যার ফলে এদিন 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালনের জন্য আগের থেকেই রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে মেনে নেননি তৃণমূল সুপ্রিমো-সহ দল (TMC)। এই প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস (IAS) অফিসার তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার (Trinamool Rajya Sabha MP Jahar Sarkar) কটাক্ষ করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যপালের অনুচিত সিদ্ধান্ত।
তবে, রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu)। তারপর বিজেপি সরকার (BJP) দ্বারাও জানানো হয়েছে শুভেচ্ছা। কিন্তু রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণাময় ইতিহাসের কারণে এই দিবস পালনের জন্য প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মহলের অনেকেই।