Artificial Intelligence | জিপিটি৪ থেকে গুগুল জেমিনি! ২০২৩ সালে বাজারে এসেছে একাধিক AI টুল! মানব সভ্যতার বিলুপ্তির নেপথ্যে কি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাই?

Wednesday, December 27 2023, 12:35 pm
highlightKey Highlights

স্টিফেন হকিং বহু সময় আগেই বলেছিলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণেই নাকি বিলুপ্তি ঘটতে পারে মানব সভ্যতার। আশঙ্কা সত্যি করেই ২০২৩ সালে মানব সমাজে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এআই।


২০২৩ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যেসব নতুন জিনিস আবিষ্কার হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence)। কার্যত ২০২৩ সালকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বছরও বলা যেতে পারে। এ বছর একাধিক এআই (AI) সংক্রান্ত পরিষেবা এনেছে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। বিদেশে-ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence in India) এর পরিষেবা এখন হাতের নাগালে। যেমনই প্রশ্ন হোক না কেন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দেয় এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এই উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তিত সম্পর্কিত মহল। কারণ অনেকের মতে এই এআই এক সময়ে রাজ করবে মানব সমাজের মধ্যে । আবার অনেকের মতে এআই এর জন্য অসংখ্য মানুষ চাকরি হারাবেন। আবার এই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে অপরাধও। এই আশঙ্কার মধ্যে সত্যি হয়েছে বেশ কিছু। তবে নানান তর্ক-বিতর্কের মাঝে থেমে নেই গবেষণা এবং উদ্ভাবনের কাজ।

বছরভর একাধিক এআই টুল লঞ্চ হয়েছে বাজারে। যার মধ্যে রয়েছে গুগল, টুইটার, মাইক্রোসফট ইত্যাদি। প্রত্যেক সংস্থাই আলাদা আলাদা চমক নিয়ে হাজির হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ সালে লঞ্চ হওয়া সর্বসেরা কিছু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলস।

Trending Updates

জিপিটি-৪ :

এটি একটি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। যা জিপিটি ৩.৫(GPT 3.5)-কে প্রতিস্থাপন করেছে। মানুষের মতো কাজ করতে পারে এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। প্রফেশনাল কাজের পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রেও সমান দক্ষ এই এআই মডেল। যে কারণে বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে জিপিটি-৪ এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

গুগল বার্ড ও জেমিনি :

গুগুল জেমিনি (Google Gemini)  বার্ড বাজারে আসে জেনারেটিভ এআই  এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেকদিন ধরে চললেও, চলতি বছর শেষের দিকে লঞ্চ হয় বার্ড। ফিচারে ঠাসা এই চ্যাটবটের নতুন চমকই হলো গুগুল জেমিনি (Google Gemini)। এটি একটি শক্তিশালী ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। যার মাধ্যমে বার্ডকে দিয়ে একাধিক শক্ত কাজ করাতে পারবেন ইউজাররা।

বিং  চ্যাট এআই  :

বার্ড আসতেই নড়ে চড়ে বসে মাইক্রোসফট (Microsoft)। চলতি বছরে সংস্থা নিয়ে আসে তাদের নিজস্ব এআই  চ্যাটবট বিং চ্যাট (Bing Chat)। এতেও রয়েছে একাধিক সুবিধা। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এতে চ্যাটজিপিটির জিপিটি-৪ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এবং এআই   ছবি জেনারেটর ওপেন এআই ডাল-ই (OpenAI DALL-E ) এর সাপোর্টও দেয়। তাই অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে এই প্রযুক্তি।

গ্রুক এআই :

গুগল, মাইক্রোসফটের সঙ্গে দৌড়ে সামিল হয়েছেন ধনকুবের এলন মাস্ক ()। ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিনি লঞ্চ করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা এক্স এআই, যা গুগল এবং ওপেনএআইকে টেক্কা দেবে বলে দাবি করেছেন তিনি। টুইটার (বর্তমানে X) প্ল্যাটফর্মে ডেটা বিশ্লেষণ করে রিয়েল টাইম রেজাল্ট দেবে গ্রুক এআই (Grooq AI)।

ডাল-ই ৩ :

যে সংস্থা চ্যাটজিপিটি তৈরি করেছে অর্থাৎ ওপেনএআই, তারাই আবার বাজারে নিয়ে এসেছে টেক্স-টু-ইমেজ সফটওয়্যার ডাল-ই ৩ (Dall-e3)। সংস্থার কথায়, ডাল-ই ৩ এবার থেকে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কাজ করবে। অর্থাৎ এই টুলে প্রম্পট দিয়েও ছবি তৈরি করতে পারবেন ইউজাররা। তবে এটি ব্যবহার করার জন্য চ্যাটজিপিটি প্লাস সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে।

বছর জুড়ে নানান এআই টুল বাজারে এসেছে। বর্তমানে আট থেকে আশি সকলের হাতের কাছেই রয়েছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পরিষেবা। তবে নয়া প্রযুক্তি নিয়ে সকলের কপালেই পড়েছে চিন্তার ভাজ। কারণ বর্তমানে এই এআই পরিষেবার মাধ্যমেই হচ্ছে নানান অপরাধ মূলক কাজ। ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence in India) ব্যবহার করে অপরাধের তালিকা বেশ বড়। যার মধ্যে অন্যতম বলিউড ডিপফেক (Bollywood Deep Fake) ভিডিও-ছবির ঘটনা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়তে থাকে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেখা যায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা কনজিউমার সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন হয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে চ্যাটজিপিটি। এরপরেই হুরু হলো বলিউডে ডিপফেক (Bollywood Deep Fake) এর আক্রমণ।  কী এই ডিপফেক? এ এমন এক প্রযুক্তি যা আপনার ভিডিও বানিয়ে দেবে। অথচ আদপে ভিডিওতে আপনি ছিলেনই না। অর্থাৎ যে কাউকে বিপদে ফেলার এক অনায়াস কৌশল। প্রথমে রশ্মিকা মান্দানার ডিপফেক (Rashmika Mandanna Deepfake) ভিডিও ছড়িয়ে পরে সোশ্যাল মাধ্যমে। তারপর ধীরে ধীরে আরও অভিনেত্রীদের ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়ে পরে। রশ্মিকা মান্দানার ডিপফেক (Rashmika Mandanna Deepfake) ভিডিও সহ বাকি সেলেবদের ডিপফেক ভিডিও নিয়ে শুরু হয় তদন্ত-তর্ক-বিতর্ক। এদিকে গাজার সঙ্গে যুদ্ধেও ইজরায়েল ব্যবহার করেছে এআই। অর্থাৎ যুদ্ধের হালহকিকতও সে বদলে দিতে পারে।

ক্রমশ উন্নত হতে থাকা এই প্রযুক্তি এক সময়ে মানুষকেই ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কার মেঘ ঘন হতে থাকে। বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং (Stephen Hawking) এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বহু আগেই। ২০১৪ সালে ‘লাস্ট উইক টুনাইট’ নামের এক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তিনি। আর সেখানে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (Artificial Intelligence) কারণেই নাকি বিলুপ্তি ঘটতে পারে মানব সভ্যতার।  হকিংয়ের সাফ কথা ছিল, কোনওদিন এমন এআই প্রোগ্রাম যদি বানিয়ে ফেলা যায়, যার চৈতন্য মানুষের চৈতন্যের সমকক্ষ, তাহলে অচিরেই তা মানুষকেও ছাপিয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কেননা যন্ত্রেরা যদি বুদ্ধিমান হয়, তবে তারা সহজেই অনেক কিছু শিখে যেতে থাকবে, এবং তা কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরও উন্নত করে ফেলবে এবং এক সময়ে মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এই প্রযুক্তি। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কী মানুষের কল্যাণ করবে না মানবজাতিকে বিনাশ করবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File