Global Running Day | কয়েক মিনিটের দৌড় বাড়াতে পারে আপনার আয়ু! গ্লোবাল রানিং ডে-তে জানুন দৌড়ের তাৎপর্য-গুরুত্ব!
নিয়মিত দৌড়ালেই কমে একাধিক রজার ঝুঁকি। ঘুম ভালো হওয়া থেকে শুরু করে ভালো থাকে মানসিক স্বাস্থ্যও।
শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য হাটাচলা এবং দৌড় করার থেকে আর ভালো উপায় বোধ হয় কিছু হয়না। ডাক্তার থেকে শুরু করে ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সার (Fitness Influencer), জিম ট্রেনার (Gym Trainer) সকলেই বলে থাকেন কেবল শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর জন্যই নয়, শরীর সুস্থ্য রাখতে দিনে অন্তত এক ঘন্টার জন্য হাটাচলা ও দৌড়ের প্রয়োজন। আর সেই কথা মাথায় রেখেই প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম বুধবার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় 'গ্লোবাল রানিং ডে' (Global Running Day) বা বিশ্ব দৌড় দিবস।
জুন মাসের প্রথম বুধবার নিউ ইয়র্ক রোড রানার্স (New York Road Runners) বা এনওয়াইআরআর (NYRR) দ্বারা 'গ্লোবাল রানিং ডে'' পালিত হয়। ফলে চলতি বছর এই দিবস পালন করা হচ্ছে ৭ই জুন। এই বিশেষ দিনে দৌড়ানোর উপকারিতা, গুরুত্ব সমাজে তুলে ধরা হয় এবং সাধারণ মানুষকে নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য দৌড়াতে উৎসাহিত করা হয়। এছাড়াও বহু সংস্থা দ্বারা এই দিনটিতে নানা রকমের অনুষ্ঠান বা ইভেন্টের (Event) আয়োজন করা হয়। বিশেষত এই দিনে আয়োজন করা হয় ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বের ম্যারাথনের (Marathon)। এই ম্যারাথনে অংশ নিতে পারেন যে কোনও বয়সে যে কোনও ব্যক্তি। সব থেকে উল্লেখ্য ব্যাপার, এই ম্যারাথন প্রতিযোগিতা নয়, ফলে ম্যারাথনে কোনো হার জিৎ নেই।
গ্লোবাল রানিং ডের ইতিহাস | History of Global Running Day :
'গ্লোবাল রানিং ডে' এই দিবসটি প্রথমে 'ন্যাশনাল রানিং ডে' (National Running Day) বা 'জাতীয় দৌড় দিবস' হিসেবে পালন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States)। এই দিবসটি প্রথমে পালন করা হয় ২০০৯ সালে। এর উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের প্রত্যেক বয়সী, ভিন্ন সংস্কৃতির সকল মানুষকে দৌড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা। ২০১৬ সালে ১লা জুন গ্লোবাল রানিং ডে-র উদ্বোধনী হিসেবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে ১৭৭টি দেশের প্রায় ২.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ৯.২ মিলিয়ন মাইলেরও বেশি দৌড়ানোর প্রতিশ্রুতি নেন।
গ্লোবাল রানিং ডের তাৎপর্য | Significance Of Global Running :
'গ্লোবাল রানিং ডে' এই বিশেষ দিবসটিতে বিশ্বব্যাপী মানুষকে দৌড়াতে এবং অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপে জড়িত হতে উৎসাহিত করে। এই দিনটি নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে সম্পর্কিত অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধার অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। সমাজের সকলকে দৌড়ে উৎসাহিত করার জন্য এদিন বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। যার মধ্যে ম্যারাথন হলো সব থেকে উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট।
গ্লোবাল রানিং ডে ২০২৩-র থিম | Theme Of Global Running Day 2023 :
শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দৌড়ানোর উপকারিতা ও গুরুত্ব তুলে ধরতে ও প্রচার করতে ৭ই জুন প্লান করা হয় 'গ্লোবাল রানিং ডে'। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থিম বা প্রতিপাদ্যকে ঘিরে এই দিন পালন করা হয়। চলতি বছরের এই দিবসের থিম হল "দৌড়ের আনন্দকে আপন করে নেওয়া" (Embracing the Joy of Running)।
দৌড়ানোর উপকারিতা | Benefits Of Running :
২০১৭ সালে প্রগ্রেস ইন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেস জার্নালে (Progress in Cardiovascular Diseases Journal) প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, মাঝারি গতিতে প্রতিদিন মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট দৌড়ালে হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack), স্ট্রোক (Stroke) এবং অন্যান্য সাধারণ রোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। এছাড়াও দৌড়ালে ভাল ঘুমও হয়। পাশাপাশি কমে ক্যান্সার (Cancer),আলঝাইমার (Alzheimer) এবং পারকিনসন্স (Parkinson) হওয়ার ঝুঁকি।
দৌড়ালে বৃদ্ধি হয় আয়ু | Running Increases Life Expectancy :
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, দৌড়ালে আয়ু বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, যারা নিয়মিত দৌড়ান তাদের মৃত্যুর হার যারা দৌড়ান না তাদের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম। দৌড়ালে কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস (Cardiovascular Fitness), ভাল শরীরের গঠন, কম কোলেস্টেরল (Lower Cholesterol), গ্লুকোজ (Glucose) এবং ইনসুলিন (Insulin) নিয়ন্ত্রণ, হাড় শক্তিশালী হওয়া, ভাল হরমোন নিয়ন্ত্রণ (Hormone Regulation), এবং স্নায়বিক কার্যকারিতা (Neurological Function) নিয়ন্ত্রণ ও উপকার করে। যার ফলে শরীরে রোগ ব্যাধি অনেক কম হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।
দৌড়ালে ঘুম ভালো হয় | Running Improves Sleep :
জনস হপকিন্সের (Johns Hopkins) বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত দৌড়ালে ঘুমের সমস্যা দূর হয়। ভালো ঘুম হয়। এছাড়াও আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফস্টাইল এক্সারসাইজের (American Journal of Lifestyle Exercise) একটি নিবন্ধ উল্লেখ করেছে যে, আপনি যত বেশি ব্যায়াম করবেন বা দৌড়াবেন, তত বেশি আপনার ঘুমের প্রয়োজন হবে।
আলঝাইমার রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায় | Reduces The Risk Of Alzheimer's Disease :
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত দৌড়ালে ও শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে তাহলে আলঝাইমার রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে। দৌড়ালে হৃদস্পন্দন এবং রক্ত প্রবাহ বাড়ে। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি হয়। দৌড়ালে মস্তিস্ক থেকে উদ্ভূত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এই প্রোটিন মস্তিষ্কে নিউরনের (Neuron) বৃদ্ধি করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় | Reduces The Risk Of Cancer :
২০১৬ সালে, আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল (Journal Of The American Medical Association ) অনুযায়ী, যারা দৌড়ান না তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি যারা দৌড়ান তাদের তুলনায় অনেক বেশি। যে সকল ব্যক্তিরা নিয়মিত দৌড়ান তাদের ২৬ রকমের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং রক্তচাপ কমায় | Reduces The Risk Of Diabetes And Lowers Blood Pressure :
উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রায়শই ডায়াবেটিসের দিকে পরিচালিত করে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের (American Diabetes Association) মতে, ব্যায়াম করলে এবং নিয়মিত দৌড়ালে টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes) প্রতিরোধ বা হ্রাস হয়, টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগ আক্রান্তদের শারীরিক উপকার হয়, রাক-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার থেকেও প্রতিরোধ হতে পারে।
পাশাপাশি, ২০১৬ সালে গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (Global Burden of Disease) নামে একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সূচক ৩৮৮টি বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও রোগের ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করে ফলাফল প্রকাশ করে জানায়, দৌড়ানো এবং অন্যান্য মাঝারি ব্যায়াম রক্তচাপ কমাতে ব্যাপক কাজ করে। এর ফলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস পায়।
কেবল শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেই নয়, দৌড়ালে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, বিষন্নতা (Depression) দূর হয় বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। আমাদের শরীর যত বেশি সচল থাকবে, তত বেশি সুস্থ্য থাকবে, রোগ ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমবে। যার ফলে নিজের শরীর ভালো রাখতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়মিত দৌড়ান।