Flower Vegetables | কেবল সজনে-কুমড়োর সবজি নয়, ফুলও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী! দেখুন সুস্থ্য থাকতে কোন কোন ফুল খেতে পারেন?
কুমড়ো ফুল, নিম ফুলের মতো একাধিক ফুল সবজি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এগুলি ডায়েটে থাকলে একাধিক উপকার।
সুস্থ্য থাকতে আমরা প্রতিদিনই কোনও না কোনও সবজি খেয়ে থাকি। শাকসবজি আমাদের শরীরের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টি প্রদান করার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতটা বৃদ্ধি করা, নানান রোগব্যাধি থেকে আমাদের রক্ষা করার মতো অসংখ্য ভূমিকা পালন করে সবজি। তবে এমন কিছু শাকসবজি রয়েছে যেগুলোর ফুলও আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
ফুল-সবজি । Flower Vegetables :
প্রায়শই বাঙালি নানা রকমের ফুল সবজি (Flower Vegetables) হিসেবে খেয়ে থাকে। ভাজা হোক কিংবা ঝোল বা তরকারি, এই ফুল কিন্তু শরীরের উপকারও করে। বিশেষত মরশুম বদলের সময়ে নানান রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে উপকার করে এই সবজি রুপী ফুল। বসন্তের মৃদু বাতাসে হালকা হওয়ার জেরে সর্দি-কাশির সম্ভাবনা প্রবল। তবে বাজারে এই সময়েই কিছু ফুল পাওয়া যায় যা খেলে শরীর সুস্থ্য থাকে। এই সময়ে নানান রোগ থেকে সুস্থ্য রাখতে পারে সজনে ফুল, কুমড়ো ফুল, নিমফুল, বকফুল, শীষপালং-এর মতো সবজি ফুল।
নিম ফুল । Neem Flower :
নিমফুল খুবই উপকারী, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এটি অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ। অ্যান্টিসেপটিক গুণ আছে যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। নিমফুলের শরবত পান করলে এটি রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। এছড়াও নিম ফুল (Neem Flower) রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিম ফুল রক্ত পরিশোধনে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতেও কাজ করে। জ্বর, সর্দি কাশির সমস্যা দূর করতে খুব ভাল কাজ করে নিম ফুলের মধু। নিম ফুল শরীরের তাপ ও পিত্তের উপসর্গ প্রশমিত করতে সাহায্য করে। তাই তো আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা পিত্ত বেড়ে গলে নিম ফুলের শরবত পান করতে পারেন।
সজনে ফুল বা মরিঙ্গা ফুল । Moringa Flower :
সজনে ফুল বা মরিঙ্গা ফুল (Moringa Flower) দিয়ে তরকারি বানিয়ে খেলে তা শরীরে প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। বসন্তের সময়ে পক্স, সর্দিকাশির প্রবণতা বাড়ে। ফলে সেই সময়ে শরীর সুস্থ্য রাখতে বেশ উপকারী এই ফুল। সজনে ফুলে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩ এবং ভিটামিন সি, এছাড়া আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ক্যালসিয়াম রয়েছে। সজনে ডাঁটা, ফুল, পাতা খেলে নানা অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর সজনে ফুল ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই করে। রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। অ্যাজমা থাকলে সজনেফুল সেবন করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। উল্লেখ্য, আমেরিকান জার্নাল অফ নিউরো সায়ান্সের এক গবেষণা বলছে, টেরিগোস্পার্মিন যৌগটি রয়েছে সজনে ফুলে, যা পুরুষদের মধ্যে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সজন ফুল অনেকেই ভেজে বা বড়া করে খান। তবে ভাজার চেয়ে ভালো এটি কোনও রকমের সেদ্ধ খাবারে খেতে পারেন। যেমন গোটা সেদ্ধতে দিতে পারেন সজনে ফুল। এছাড়াও কড়াইশুঁটি, বেগুন, আলুর চচ্চড়িতে দিতে পারেন এটি।
বকফুল । Vegetable Hummingbird :
বাঙালির খাবারের মধ্যে বকফুল বেশ জনপ্রিয়। ব্যথা, চুলকানি, গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময়ে এই ফুলের জুড়ি মেলা ভার। বক ফুলের মধ্যে ফাইবার, ক্যালোরি, প্রোটিন, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন সি, খনিজ এসব রয়েছে, যা শারীরবৃত্তীয় নানা কাজে সাহায্য করে। এতে ক্যানসার প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে আয়রন, ভিটামিন বি উপস্থিত। ঋতু পরিবর্তনের সময় এই ফুল খেতে পারলে খুব ভালো, এতে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণেও সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যে কোনও ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময়ে এই ফুলের জুড়ি মেলা ভার। রক্তে কোলেস্টেলরল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কৃমির সমস্যায় ও পাইলস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ থাকায় এটি রাতকানা রোগকে প্রতিরোধ করে, এছাড়া মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা কমায়। এই ফুলগুলির উপকারিতা অসীম। সাধারণত বেসন আর চালগুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে বকফুলের বড়া বানিয়ে খাওয়া হয়। বকফুল দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যায় নিরামিষ পোস্ত। এই তরকারি দিয়ে গরম ভাত খেতে খুব ভাল লাগে।
শীষপালং । Shish Palong :
শীষপালং সরস্বতীপুজোয় গোটা সেদ্ধ দেওয়া হয়। এতে সবরকম পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায়। এতে ভিটামিন এ, সি, ই, কে, এবং বি এছাড়া ম্যাঙ্গানিজ, ক্যারোটিন, আয়োডিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে শীষপালং। পাশাপাশি এতে উপস্থিত ক্যারোটিন, ক্লোরোফিল ক্যানসার প্রতিরোধে ও দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে কাজ করে। এবং অতিরিক্ত স্থূলতার সমস্যার সমাধান করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রেখে রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করে।
কুমড়ো ফুল । Pumpkin Flower :
বাঙালি বাড়িতে কুমড়োর বেশ কদর রয়েছে। একাধিক লোভনীয় পদে এই সবজি ব্যবহার করা হয়। তবে কুমড়োর পাশাপাশি এর ফুলও কিন্তু সমানভাবে উপকারী। তাই নিয়মিত কুমড়ো ফুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা। কুমড়ো যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর তেমনি কুমড়ো ফুলের গুণ কম নয়। এতে ফাইবার পাওয়া যায়, যা হজম সমস্যাকে দূর করে। কুমড়ো ফুল (Pumpkin Flower)এ ভিটামিন রয়েছে যা ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে ও চোখের জন্য উপকারী। ক্যালশিয়াম, ফসফরাস থাকায় হাড়কে সুস্থ মজবুত করে তোলে। অস্টিওস্পোরোসিস রোগ প্রতিহত করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। আসলে কুমড়ো ফুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি, কার্ব, প্রোটিন, ফাইবার, কপার, ফোলেট, ভিটামিন এ, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন সহ একাধিক জরুরি উপাদান। আর এই সকল উপাদানগুলিই একত্রিত হয়ে কুমড়ো ফুলকে এক অত্যন্ত উপকারী খাবারে পরিণত করে। কুমড়ো ফুলে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিন, ফ্ল্যাভানয়েডস, ফেনলস-এর মতো উপকারী সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই সকল উপাদান কিন্তু শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এমনকী প্রদাহ কমানোর কাজেও জুড়ি মেলা ভার। এই ফুলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রক্তের বিভিন্ন উপাদান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুমড়ো ফুলে উপস্থিত আয়রন ও কপার হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা থেকে দ্রুত সেরে ওঠা যায়। তবে কুমড়ো ফুল তেল চপচপে করে ভেজে খেলে খুব বেশি লাভ মিলবে না। বরং সিদ্ধ করে বা তরকারি করেই এই ফুল খেতে হবে। তাহলেই মিলবে সর্বাধিক পুষ্টি।
উপরোক্ত সবজি-ফুলের মতো নানা রকমের ফুল রয়েছে যার স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। এগুলি ডায়েটে রাখলে যেমন শরীর সুস্থ্য থাকবে তেমনি দূরে থাকবে রোগ। তবে নিয়মিত এগুলি খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাঁরা কিডনি সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন, বা বিভিন্ন রোগের জন্য নানা ওষুধ খান তাদের এই ফুল খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
- Related topics -
- খাদ্য
- খাদ্যগুণ
- খাদ্যের গুনাগুন
- স্বাস্থ্য
- লাইফস্টাইল
- পেটপুজো