লাইফস্টাইল

Earthen Pot | গরমে ফ্রিজের জল না খেয়ে মাটির কলসিতে রাখা জল খান! শরীর ঠান্ডা হওয়ার সঙ্গে মিলবে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতাও!

Earthen Pot | গরমে ফ্রিজের জল না খেয়ে মাটির কলসিতে রাখা জল খান! শরীর ঠান্ডা হওয়ার সঙ্গে মিলবে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতাও!
Key Highlights

প্রাকৃতিকভাবে শীতল করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে মাটির। যার দরুন অনেক গরমেও মাটির কলসিতে জল ঠান্ডা থাকে। তবে মাটির কলসিতে জল রাখার কিছু নিয়ম রয়েছে যা না মানলে হতে পারে ক্ষতি।

আগে তীব্র গরমে মাটির কলসি (earthen pitcher) এর মধ্যে জল রেখে তা পান করার চল ছিল ঘরে ঘর। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় জলের জন্য মাটির পাত্র (earthen pot for water) এর জায়গা নিয়েছে ফ্রিজের জল। গরমকালে বাইরে থেকে বাড়িতে এসে অনেকেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নেন। তবে এতে সাময়িক শান্তি মিললেও গলা ধরে। এছাড়াও এই অভ্যাস শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাহলে কি ঠান্ডা জল খাবেন না? নিশ্চয়ই খাবেন! তবে মাটির পাত্র (earthen pot) থেকে! অনেকেই রেফ্রিজারেটরের বদলে গরমে জল রাখেন মাটির কলসি বা জালায়। ফ্রিজের জলের তুলনায় বহুগুণ উপকারী মাটির পাত্রে রাখা জল। মাটির পাত্রের ঠান্ডা জল (cool water) শরীরকে শীতল তো করেই পাশাপাশি শরীরেরও উপকার করে। তবে মাটির কলসিতে জল রাখার কিছু নিয়ম আছে যা ভুলে গেলে শরীরে নানাবিধি ক্ষতিও হতে পারে।

মাটির কলসিতে জল কেন ঠান্ডা থাকে? । Why is the Water in the Earthen Pitcher Stay Cold?

প্রাকৃতিকভাবে শীতল করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে মাটির। যার দরুন অনেক গরমেও মাটির কলসিতে জল ঠান্ডা থাকে। আসলে মাটির পাত্র (earthen pot)-এর গায়ে অসংখ্য আণুবীক্ষণিক ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলি দিয়ে অল্প পরিমাণ জল চুঁইয়ে বাইরের পৃষ্ঠে আসে ও বাষ্প হয়ে যায়। জল বাষ্পীভূত হওয়ার সময়ে কিছুটা তাপ শোষণ করে নেয়। ফলে ঠান্ডা থাকে পাত্র।

মাটির কলসি থেকে জলপানের উপকারিতা । Benefits of Drinking Water from Earthen Pitchers :

গরমকালে মাটির কলসি (earthen pitcher), জগ ও গ্লাস ব্যবহার করলে জল যেমন ঠান্ডা থাকে তেমনি উপকৃত হয় শরীরও। আয়ুর্বেদ মতে মাটির কলসিতে জলপান খুবই উপকারি। মাটির কলসি তৈরির পর তা শুকনো হলে, তাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুত্র ছিদ্র থেকে যায়। মাটির কুঁজোর ভিতরে যে জল রাখা হয়, তা বিশেষ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ছন্দে বাষ্পীভূত হয়ে ঠান্ডা হয়। উল্লেখ্য, এই মাটির কলসি বানানোর সময় খানিকটা বালি মিশিয়ে তা তৈরি হয়।

প্রাকৃতিকভাবে জল ঠান্ডা রাখে : মাটির কলসি সঞ্চিত জলের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। মাটির কলসির গায়ে অসংখ্য ছিদ্র থাকে। এসব ছিদ্র দিয়ে জল বের হয়ে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। কিন্তু বাষ্প হওয়ার সময় কলসির জল থেকে সুপ্ততাপ গ্রহন করে নেয়। যার ফলে জলের তাপমাত্রা কমে যায় এবং জল ঠান্ডা হয়ে যায়। ফ্রিজের ঠান্ডা জল (cool water) খেলে সর্দি-কাশি হতে পারে। তবে মাটির পাত্রে রাখা প্রাকৃতিক ঠান্ডা জল খেলে সে ভয় থাকে না।

হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য : বলা হয়, মাটি দিয়ে তৈরি কলসির জলে থাকে বিভিন্ন রকমের খণিজ। মূলত মাটির পাত্রে যে গুণগুলি রয়েছে তা ছড়িয়ে যায় জলে, এমন দাবি করা হয়। আর তার জল পান করলে, নান উপকার মেলে। তারমধ্যে অন্যতম হল, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয় খানিকটা। এছাড়াও বলা হচ্ছে, প্লাস্টিকের বোতলে থাকা বিভিন্ন দূষিত পদার্থ শরীরে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে মাটির পাত্রের জল টেস্টরন ব্যালেন্স করা ক্ষমতা বাড়ায়। যা শরীরে হজমক্রিয়া ভালো রাখে। মাটির পাত্রের জল বিভিন্ন রাসায়নিকের প্রভাব থেকে দূরে রাখে।

তাপ লাগা থেকে রক্ষা করে : বলা হয়, মাটির পাত্রের জলে যে ভিটামিন ও খণিজ পদার্থ থাকে, তা শরীরকে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি বলা হয়, মাটির পাত্রের জলে যে ভিটামিন ও খণিজ পদার্থ থাকে, তা শরীরকে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এই পাত্রের পুষ্টিগুণ শরীরে গেলে, শরীর গরমের দিনে থাকে ফিট।

ক্ষারীয় ভারসাম্য : মাটির পাত্রের পানিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ মেশে। এই পানি খেলে পেটের বিভিন্ন প্রকার অ্যাসিড কিছুটা প্রশমিত হয়। পাশাপাশি অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে ও পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে শরীরের।

জলের স্বাদ এবং সতেজতা : মাটিতে থাকা বিভিন্ন খনিজের কারণে জলের স্বাদ বেড়ে যায় অনেকটাই। মাটির পাত্রের ছিদ্রযুক্ত পৃষ্ঠ বাতাস চলাচলের জন্য উপযুক্ত। ফলে জলের সতেজতা বজায় থাকে।

গলা ভালো রাখে : ফ্রিজের জল রোদ থেকে বাড়ি এসেই গলায় ঢাললেই সর্দি, কাশি, জ্বর হয়। ফলে ফ্রিজের কনকনে ঠান্ডা জল গলায় না ঢেলে, মাটির কলসিতে থাকা নির্দিষ্ট পরিমাণের ঠান্ডা জল গলায় ঢাললে মিলবে উপকার।   

পুষ্টির সংরক্ষণ : প্লাস্টিক বা ধাতব পাত্রে জল রাখলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা দূষিত পদার্থ মিশে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। জলের জন্য মাটির পাত্র (earthen pot for water) ব্যবহার করলে এই ভয় নেই। জলের প্রাকৃতিক গঠন অক্ষত রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খনিজ সংরক্ষণ করে মাটির পাত্র।

পরিবেশবান্ধব : জল সংরক্ষণের জন্য মাটির পাত্র বেছে নেওয়া প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্রের পরিবেশবান্ধব বিকল্প। মাটির পাত্রগুলো প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা হয় পরিবেশগতভাবে টেকসই। প্লাস্টিকের উপর নির্ভরতা হ্রাস করে এটি।

মাটির কলসিতে জল রাখার কিছু নিয়ম । Some Rules for Keeping Water in Earthen Pitcher :

মাটির কলসিতে জল রাখার কিছু নিয়ম আছে যা ভুলে গেলেই শরীরে নানাবিধি ক্ষতি হতে পারে। যেমন-

  • কলসির জল ঠান্ডা এবং তাজা থাকে। শরীরের অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে এবং হাইড্রেটেড রাখতে এই জল খাওয়া উচিত। তবে, প্রতিদিন কলসি ধোয়া উচিত, যদি আপনি এটি না করেন তবে এতে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দেখা দেবে।
  • গ্রীষ্মে জল দ্রুত ঠান্ডা রাখতে, আপনার পাত্রের ভাল করে যত্ন নেওয়া উচিত। পাত্রের চারপাশে একটি কাপড় জড়িয়ে রাখুন এতে পাত্রের জল ঠান্ডা থাকে তবে আপনার এই জিনিসটি মাথায় রাখা উচিত যে আপনি প্রতিদিন এই কাপড়টি ধুয়ে রাখতে হলে। এটি না করলে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মতো সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
  • ছোট বাচ্চাদের বা বাড়ির কারোর পাত্রে হাত ডুবিয়ে জল বের করার অভ্যাস থাকলে তা একদমই করা উচিত নয়। এই কারণে কলসির জল অকেজো হয়ে পড়ে। সকলের হাতেই ব্যাকটেরিয়া থাকে যা জলে চলে যায়। এমতাবস্থায় এই জল আপনার এবং পরিবারের সকলের জন্যও খুব বিপজ্জনক হতে পারে। পাত্রটি সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। এমনকী মশাও সেখানে যেন না বসে।
  • প্রতিদিন পাত্রের জল পরিবর্তন করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে একই জল পান করা আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং এটি অনেক রোগের কারণ হতে পারে।
  • প্রতিবার পরিষ্কার করার পরই তা বিশুদ্ধ জল দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। বিশুদ্ধ জল পান না করলে পেটের সমস্যা, সংক্রমণ এবং টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।

 তীব্র তাপপ্রবাহে বেড়েছে হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের আবার প্রচন্ড গরমে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে বাড়ি ফিরে ফ্রিজের জল না খেয়ে মাটির কলসি থেকে জল খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে পাশাপাশি নানান উপকারিতাও মিলবে। এতে থাকে খনিজ ও ভিটামিন যা শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। আবার ঠান্ডা লাগার ঝুঁকিও থাকেনা। এছাড়াও পেটের বিভিন্ন অ্যাসিডজনিত সমস্যা প্রশমিত হয় এবং অম্ল ও ক্ষারের সমতা বজায় থাকে।