লাইফস্টাইল

Headache | রোজই মাথাব্যথা করছে? উপসর্গ দেখে বুঝুন মাইগ্রেন নাকি অন্য প্রকারের মাথাব্যথা!

Headache | রোজই মাথাব্যথা করছে? উপসর্গ দেখে বুঝুন মাইগ্রেন নাকি অন্য প্রকারের মাথাব্যথা!
Key Highlights

মাথার কোন অংশে ব্যথা করছে তা থেকেই বোঝা যায় মাথাব্যথার প্রকার। জানুন মাথাব্যথা থেকে হতে পারে কী কী রোগ।

দৈনন্দিন আমরা অনেকেই মাথা ব্যথার (Headache) সমস্যায় ভুগে থাকি। অনেক সময় চা, কফি খেয়েও কমে না এই ব্যথা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যথা যেন বেড়ে যায় আরও। তবে কিসের জন্য মাথা ব্যথা হচ্ছে, তা না জানলে এর চিকিৎসা করাও সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ১৫০ এরও বেশি ধরণের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে মানব শরীরে। আর মাথার ভিন্ন ভিন্ন জায়গার ব্যথা অনুযায়ী মাথা ব্যথার ধরণ বোঝা যায়। অর্থাৎ মাথার সামনের দিকে ব্যথা হওয়া আর মাথার  পিছন দিকে ব্যথা হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ও প্রকার এক নয়। ফলে দেখে নিন মাথার কোন জায়গার ব্যথা কোন ধরণের মাথা ব্যথার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মাথা ব্যথার প্রকার | Types of Headaches :

দেখে নিন মাথার ভিন্ন জায়গার ব্যথা থেকে কীভাবে বুঝবেন মাথাব্যথার ধরণ।

চিন্তার কারণে মাথাব্যথা | Tension Headache  :

বহু সময় অতিরিক্ত চিন্তার অর্থাৎ টেনশনের কারণে এই প্রকারের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এই ধরণের মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে মাথা জুড়ে একটি নিস্তেজ ব্যথার সংবেদন অনুভব হয়। এছাড়াও ঘাড়, কপাল, মাথার ত্বক বা কাঁধের পেশীগুলির চারপাশে সংবেদনশীল অনুভবও হতে পারে।

ক্লাস্টার মাথাব্যথা | Cluster Headache :

এই ধরণের মাথা ব্যথা ধারাবাহিকভাবে ঘটে যা, ১৫ মিনিট থেকে শুরু করে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে। ক্লাস্টার মাথাব্যথা অনেক সময় মাসে প্রত্যেকদিন অনুভব হতে পারে। সাধারণত এই ধরণের মাথা ব্যথা শরৎকাল ও বসন্তকালে হয়ে থাকে এবং এই মাথা ব্যথা দ্বারা মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন। ক্লাস্টার মাথাব্যথার ক্ষেত্রে মাথায় তীব্র জ্বালাভাব, এক চোখের চারপাশে বা পিছনে  অথবা মুখের একপাশে ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে। এছাড়াও ঘাম হওয়া, নাক বন্ধ, চোখে জল আসার মতো উপসর্গও দেখা যায়।

মাইগ্রেন | Migraine :

বর্তমানে অসংখ্য ব্যক্তি মাইগ্রেনে ভুগে থাকেন। এই মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি আলো এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীল হন। পাশাপাশি বমি বমি ভাব, বমি, দৃষ্টিতে অসুবিধা, মুখের একপাশে ব্যথা বা এক বাহুতে কাঁপুনি এবং কথা বলতে সমস্যার মতো উপসর্গ দেখা যায়। এই ধরণের মাথা ব্যথা  পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি। বিশেষত যারা  পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এ ভুগছেন তাদের মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণের থেকে বেশি।

সাইনাসের মাথাব্যথা | Sinus Headache :

সাইনাসের মাথাব্যথা প্রধানত কোনও সংক্রমণ বা অ্যালার্জি (Allergy) থেকে হয়। এই ধরণের মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে  চোখ, গাল এবং কপালের চারপাশে একটি নিস্তেজ, ঝাঁকুনিযুক্ত ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে যা  নড়াচড়া বা স্ট্রেনের (Strain) সেই সঙ্গে আরও বাড়তে পারে। কখনও কখনও আবার এই মাথা ব্যথারর কারণে দাঁত এবং চোয়ালেও ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে। এছাড়াও জ্বর, ক্লান্তি, কানে ব্যথা, কাশির মতো উপসর্গও দেখা যায় সাইনাসের ক্ষেত্রে।

ওষুধ-অতিব্যবহারের কারণে মাথাব্যথা | Medication-Overuse Headache :

এই ধরণের মাথাব্যথা ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় একে রিবাউন্ড মাথাব্যথাও (Rebound Headache) বলা হয়ে থাকে। এই ধরণের মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে টেনশনের কারণে মাথাব্যথা (Tension Headache) বা মাইগ্রেনের (Migrain) মতো ব্যথা অনুভব হয়।

 হিপনিক মাথাব্যথা | Hypnic Headache :

এই ধরণের মাথা ব্যথা সাধারণত ৫০বছরের উর্দ্ধদের বেশি হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে মাথায় অ্যালার্ম ঘড়ির মতো রিং ব্যথা ও মাথার দুপাশে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা অনেক সময় ৩ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হিপনিক মাথাব্যথা ক্ষতিকারক নাহলেও, একজন প্রাপ্তবয়স্ক এই ধরণের ব্যথা অনুভব করলে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাথা ব্যথার কারণে যে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে | Diseases Cause By Headache :

মাথা ব্যথা থেকে অনেক সময় অনেক রোগের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দেখে নিন কোন ধরণের মাথাব্যথা থেকে কী ধরণের রোগ হতে পারে।

অপটিক নিউরাইটিস | Optic Neuritis :

চোখের পিছনের দিকে দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার রেশ থাকলে হতে পারে অপটিক নিউরাইটিসের সমস্যা (Optic Neuritis ) । এই রোগে অপটিক নার্ভ (Optic Nerve) নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে চোখে ঝাপসা দেখা, কখনও কখনও দৃষ্টি হারানো আশঙ্কা থাকে।

রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত | Blood Circulation Obstruction :

বহু ক্ষেত্রে মাথায় রক্ত চলাচল ঠিকভাবে না হলে তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যা থেকে স্ট্রোক (Stroke) হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

মস্তিষ্কজনিত রোগ | Brain Diseases : 

মাথাব্যথার সঙ্গে জ্বর, বমি, ঘাড়ে আর গলায় ব্যথা হলে তা মস্তিষ্কে ইনফেকশন (Brain Infection) হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এছাড়াও মাথাব্যথার সঙ্গে কেউ যদি অজ্ঞান হয়ে যায়, তবে তা মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের (Brain Hemorrhage) কারণ। দিনের পর দিন যদি মাথাব্যথা চলতে থাকে তবে তা ব্রেন টিউমার (Brain Tumor) বা মস্তিষ্কের কোনো অসুখের সংকেত হতে পারে।

উল্লেখ্য, মাথা ব্যথা  ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী দুই প্রকার হয়ে থাকে। ক্ষণস্থায়ী বা এপিসোডিক মাথাব্যথা (Episodic Headache) এক মাসে ১৫ দিনের বেশি হয়না। যেখানে দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক মাথা ব্যথা (Chronic Headache) মাসে ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে হয়। বহু ক্ষেত্রে ক্রনিক মাথাব্যথা চরম পর্যায়ে যেতে পারে। এছাড়াও মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং এর চিকিৎসা না করলে হতে পারে একাধিক রোগ | ফলে আপনার যদি ক্রনিক মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।