Nag Panchami 2022: কেন নাগ পঞ্চমী একটি বিশেষ দিন? এই দিনের সাথে কি সম্পর্ক ভগবান কৃষ্ণের?
আপনি কি জানেন কেন আজকের দিনে নাগ পঞ্চমীর পুজো করা হয়? আজ বিশেষত উত্তর ভারতে নাগ পঞ্চমী উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমীকে নাগ পঞ্চমী বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমীতেও নাগ পঞ্চমী পালিত হয়। কৃষ্ণপক্ষে যে নাগপঞ্চমী পালিত হয়, তা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওডিশা ও রাজস্থানে দেখা যায়। আর উত্তর প্রদেশ-সহ দেশের অন্য়ান্য রাজ্যে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে নাগ পঞ্চমী পালিত হয়। চলতি বছরে ২রা অগাস্ট ২০২২ (মঙ্গলবার) শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালিত হচ্ছে নাগ পঞ্চমী (Nag Panchami)।
এই উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে শুরু হয়েছে বিশেষ পূজাপাঠ। বিশেষ করে উত্তর ভারতের মন্দিরগুলিতে নাগ পঞ্চমী উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। আজকের এই বিশেষ তিথিতে বিভিন্ন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, যেমন মধ্যপ্রদেশের মহাকাল মন্দিরে শিবের আরাধনার সঙ্গে সঙ্গে নাগ দেবতার পুজো হয়। তবে এদেশে এমন একটি মন্দির রয়েছে যেখানে নাগপঞ্চমী উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজো আয়োজিত হয়। বছরে কেবল এই একটি দিনেই খোলে মন্দিরের দরজা।
উজ্জয়িনীর নাগ চন্দ্রেশ্বর মন্দির ঘিরে রয়েছে একাধিক কাহিনি। শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষ তিথিতে এখানে গোটা দেশের মতোই ধুমধাম সহকারে আয়োজিত হয় নাগপঞ্চমীর অনুষ্ঠান। আর এমন দিনেই কেবলমাত্র নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের দরজা খোলে। গোটা বছরে শুধুমাত্র এই একটিমাত্র দিনে এই মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে নাগপঞ্চমী তিথিতেই কেবলমাত্র এই মন্দিরের ভিতর প্রকট হন নাগরাজ তক্ষক। আর সেদিনই তিনি ভক্তদের আশীর্বাদ দেন। সেই কারণে বছরে কেবলমাত্র নাগ পঞ্চমীর দিনই খোলা হয় মন্দিরের কপাট। আর মন্দিরের মূল মূর্তিতে দেখা যায় শিব-পার্বতী ও গণেশের মাথায় ছাতার মতো বিরাজ করছেন নাগরাজ।
নাগচন্দ্রেশ্বরের অজানা কথায় বলা হয়, শিবকে তুষ্ট করতে বছরের পর বছর নাগরাজ তক্ষক তপস্যা করেন। নাগরাজের তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেব তাঁকে বরদান করেন। এরপর থেকেই শিবের সঙ্গে নাগরাজ বসবাস শুরু করেন। প্রসঙ্গত, এই নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরই বিশ্বের একমাত্র মন্দির যেখানে বিষ্ণুর বদলে নাগশয্যায় থাকেন শিব। আর এই বিরল মূর্তি দেখতে পাওয়া যায় কেবলমাত্র নাগপঞ্চমীর দিন।
এই পুজোর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন যে নাগ প্রাচীন ভারতের অত্যন্ত প্রতাপী জাতি। আধুনিক নাগ এই নাগ প্রজাতিরই বংশজ। আবার অনেকের মতে, নাগবংশীরা নাগলোক সমুদ্রতল অথবা উষ্ণকোটিবন্ধীয় পর্বতমালায় থাকতেন। তাঁরা খুব পরিশ্রমী এবং জ্ঞানী ছিলেন। নাগকন্যারা নাকি খুব সুন্দরী হতেন। অর্জুনের স্ত্রী উলুপি ছিলেন এমনই এক নাগকন্যা। ভারতের পাশাপাশি চিনেও নাগলোক নিজের প্রতাপ বিস্তার করেছিল। ভারতের মতো সেখানেও তাদের পুজো হয়।
প্রসঙ্গত, উত্তর ভারতের বহু জায়গায় নাগ পঞ্চমী উপলক্ষে সাপকে দুধ খাইয়ে পুজো করা হয়।
নাগ পঞ্চমীর নির্ঘণ্ট:
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে ১৭ই শ্রাবণ পঞ্চমী তিথি আরম্ভ হবে ভোর ৫ টা ১৫ মিনিটে শুরু হবে শ্রীশ্রী নাগ পঞ্চমী তিথি।আর পঞ্চমী তিথি শেষ হবে ১৮ শ্রাবণ ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে।এই তিথিতেই শ্রীশ্রী মনসা দেবী ও অষ্টনাগ পূজার পালন করা হবে।
নাগ পঞ্চমী ও শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ক:
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, কালিয়া নামক একটি সর্পকে পাঠানো হয়েছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য। কৃষ্ণ তখন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিলেন। কালিয়া নাগ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার শুরু করে তাঁদের কষ্ট দিতে থাকে। গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে যান। এদিকে খেলার সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের খেলনা নদীতে পড়ে যায়। সেটা আনতে শ্রীকৃষ্ণ নদীতে নামলেই কালিয়াহামলা চালায়। কিন্তু কৃষ্ণের সামনে টিকতে না পেরে পরাজয় স্বীকার করে ও প্রাণভিক্ষা চায়। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের কখনও ক্ষতি করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দেয়। সেই থেকে এই দিনটি নাগ পঞ্চমী হিসাবে পালিত হয়। হিন্দু ধর্মে এটি অত্যন্ত পবিত্র দিন হিসাবে বিবেচিত হয়।
- Related topics -
- দেশ
- লাইফস্টাইল
- পুজো ও উৎসব