Mahatma Gandhi | ৩০সে জানুয়ারির দশ দিন আগেও গান্ধীজির ওপর হামলা করে নাথুরামরা! জানুন 'মহাত্মা'র মৃত্যু ও তাঁর ওপর হওয়া হামলা সম্পর্কে না জানা তথ্য!

Tuesday, January 30 2024, 11:07 am
highlightKey Highlights

২০২৪ সালে পালিত হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ৩০সে জানুয়ারি নাথুরাম গডসের ছোড়াগুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন মহাত্মা। গান্ধীজির মৃত্যুর ঘটনা ও তাঁর ওপর হওয়া হামলা সম্পর্কে।


জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পথ প্রদর্শক। কেবল  ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বে আজও তাঁর মহান চিন্তা, ভাবনা, বাণীকে অনুসরণ করা হয়। অহিংসার পথে থেকেও কী ভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, শত্রুকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়, তা গান্ধীজীকে ভালভাবে না জানলে বোঝা যাবে না। আক্ষরিক অর্থেই ‘জাতির জনক’ মহাত্মা গান্ধী। ২০২৪ সালে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী (Death anniversary of Mahatma Gandhi) এর দিন তাঁর মহৎ চিন্তা ভাবনার কথাই সকলের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)।

২০২৪ সালে পালিত হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর ৭৬তম  মৃত্যুবার্ষিকী
২০২৪ সালে পালিত হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে দিল্লিতে বিড়লা হাউসে প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তখনই তাঁর বুকে লাগে পরপর তিনটি গুলি। নাথুরাম গডসের ছোঁড়া গুলির আঘাতে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গান্ধী। সেইদিনই ইহলোক ত্যাগ করেন মহাত্মা। এরপর কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী (Gandhi Death Anniversary) ২০২৪ সালে পদার্পণ করলো ৭৬ বছরে। তবে নাথুরাম গডসের আক্রমণের আগেও বার বার গান্ধীজির উপর হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকীতে (Death anniversary of Mahatma Gandhi) জেনে নিন সেই সব অজানা হামলার ঘটনা এবং মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু সম্পর্কে কম জানা তথ্য।

মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু :

সালটা ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারি। ঘড়ির কাঁটায় তখন পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিট। পরপর তিনটি গুলির এফোঁড় ওফোঁড় করে যায়। 'হে রাম' বলে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। শেষ হয়ে যায় ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গান্ধীজির মৃত্যু ঘটনা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে যা অনেকেই হয়তো জানেন না। চলুন গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী (Gandhi Death Anniversary) উপলক্ষ্যে জেনে নেওয়া যাক সেই সব তথ্যগুলি।

  • নয়া দিল্লির বিড়লা হাউসের পিছনে একটি উঁচু লনে প্রার্থনার জন্য যাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সেই সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর অনুগামীরা। সেই সময়ই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় নাথুরাম গডসে।
  • গুলি লাগার পর গান্ধীজিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত বিড়লা হাউসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানেই কিছুক্ষণ পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
  • বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট আভাবেনের সাদা পোশাক আহত গান্ধীজির রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। জানা যায়, গান্ধীর চিকিৎসার জন্য সেই সময় কোনও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। গুলি লাগার পরেও প্রায় ১০ মিনিট বেঁচে ছিলেন। একটি ফাস্টএইড বক্স পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কোনও ওষুধ পড়েনি। নাথুরাম গডসের ছোঁড়া প্রথম গুলিটি লেগেছিল পেটের মাঝখানের ডানদিকে - নাভির ঠিক ওপরে। দ্বিতীয়টি পেটের মাঝখান থেকে মাত্র এক ইঞ্চি দূরে। তৃতীয় গুলিটি লেগেছিল ডানদিকে ৪ ইঞ্চি দুরে।
৩০ সে জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে নাথুরাম গুডসের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন মহাত্মা গান্ধী
৩০ সে জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে নাথুরাম গুডসের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন মহাত্মা গান্ধী
  • গান্ধীজির হত্যাকারী হিসেবে সবার আগেই উঠে আসে নাথুরাম গডসের নাম। কিন্তু এই ঘটনায় তিনি একা ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ছিল আরও পাঁচ জন। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পরই তারা গান্ধীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন। গান্ধীর হত্যাকারীদের এই দলে ছিলেন শঙ্কর কিস্তাইয়া, গোপাল গডসে, মদন লালা পাহওয়া , দিগম্বর রামচন্দ্র ব্যাজ, নারায়ণ আপ্তে, ডি সাভারকর ও নাথুরাম গডসে। উল্লেখ্য, এর আগেও নাথুরাম গডসের এই দল ২০ই জানুয়ারি একটি জনসভায় গান্ধীকে হত্যার জন্য পরপর দুটি গ্রেনেড ছুঁড়েছিল। কিন্তু সেই সময় প্রবল ভিড়ের কারণে তারা সাফল্য লাভ করেনি। তবে মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই গান্ধীর ওপর দ্বিতীয় হামলা হয়। তাতেই সফল হয় গডসেরা।
  • গান্ধীকে গুলি করা হয়েছিল একটি বেরেটা এম ১৯৩৪ পিস্তল দিয়ে। যা গডসে ও তাঁর সহযোগী নারায়ণ আপ্তে কিনেছিলেন। মনুবেন বলেন, তাঁকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে দেয় গডসে। তাঁর হাতে খাতা, জপমালা ছিল। সব নিয়েই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান মাটিতে। তখনই তিনি পরপর চারটে গুলির আওয়াজ শুনতে পান। আর শুনতে পান গান্ধীর কণ্ঠে হে রাম। মনুবেন লিখেছিলেন আভাবেনের কোলেই গান্ধীকে তিনি পড়ে থাকতে দেখেন।
গান্ধীকে গুলি করা হয়েছিল একটি বেরেটা এম ১৯৩৪ পিস্তল দিয়ে
গান্ধীকে গুলি করা হয়েছিল একটি বেরেটা এম ১৯৩৪ পিস্তল দিয়ে
  •  গডসে ও তাঁর সহযোগীরা গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি থেকেই। সেই সময়ে ভারত-পাকিস্তান নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। মুসলিম প্রীতির কারণে গান্ধী-গডসে দর্শনের সংঘাত শুরু হয়।
  • নাথুরাম বিনায়ক গডসে ছিলেন মহারাষ্ট্রীয়ান ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা ছিলেন ডাকঘরের কর্মী। ছোটবেলায় বাবা মায়ের কাছে থাকলেও পঞ্চম শ্রেণী থেকে তাঁর পড়াশুনা পিসির বাড়ি পুনেতে থেকে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াশুনা করেন তিনি। হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য হন। যদিও গান্ধীর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছি।
  • গডসেকে প্রথম পাকড়াও করেছিলেন হার্বাট রেইনার জুনিয়ার। তিনি ছিলেন তৎকালীন দিল্লিতে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাসের ভাইস কনসাল। সেনা বাহিনীর সদস্যরা না আসা পর্যন্ত গডসেকে পাকড়াও করে রেখেছিলেন তিনি।
  • গান্ধী হত্যার মাত্র ২১ মাস পরেই নাথুরাম গডসেকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তার আগে গডসেকে সিমলার পিঠারহফে পঞ্জাব হাইকোর্টের বিচারের জন্য রাখা হয়েছিল। তবে গডসের দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ গান্ধী হত্যার পরে তাঁর সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখতে অস্বীকার করে।
মহাত্মা গান্ধীকে শেষবারের মত দেখতে তাঁর অনুরাগীদের ভিড়
মহাত্মা গান্ধীকে শেষবারের মত দেখতে তাঁর অনুরাগীদের ভিড়

 মহাত্মা গান্ধীর উপর হামলার প্রচেষ্টা :

 মহাত্মা গান্ধীর ওপর বহুবার আক্রমণের প্রচেষ্টা করা হয়েছে। ১৯০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানদের একটি গ্রুপ হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল গান্ধীজির উপর। এরপর ১৯৩৪ সালের ২৫ জুন, সনাতনী হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা পুনেতে তাঁর গাড়িতে বোমা ছোঁড়ার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। তবে সেই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান গান্ধীজি। অন্য একটি গাড়িতে সেই বোমা গিয়ে লাগে।

১৯৪২ সালের ২৪ সে ডিসেম্বর একজন ব্রিটিশ সার্জেন্ট মদ্যপ অবস্থায় আগা খান প্যালেসের তারঘেরা এলাকায় গিয়ে জেল সেন্ট্রির অস্ত্র ছিনতাই করে চিৎকার শুরু করেন 'গান্ধীজি কোথায়?'। এই ঘটনা দ্বারা আশঙ্কা করা হয়েছিল যে, ওই সার্জেন্ট গান্ধীজিকে হত্যা বা তাঁর ক্ষতির পরিকল্পনা করেছিল। পুলিশ আধিকারিক ভিডি ওয়াগলের সেই সময় ওখানে পোস্টিং ছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, সার্জেন্ট গান্ধীজিকে দেখতে পেয়ে আকাশে দু রাউন্ড গুলিও চালিয়েছিলেন। পরে সেই সার্জেন্টের চাকরি গিয়েছিল।এরপর ১৯৪৬ সালে ৩০সে জুন গান্ধীজি ট্রেনে মুম্বই থেকে পুনেতে ফিরছিলেন। সেই সময় ট্রেন বেলাইন করার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ। গান্ধীজি লিখেছিলেন, এনিয়ে সাতবার ক্ষমাশীল ভগবান মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন তাঁকে।

গান্ধীজির কথায় 'একাধিকবার তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন ভগবান'
গান্ধীজির কথায় 'একাধিকবার তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন ভগবান'

বলা হয়, গান্ধীজির ওপর হামলার পরিকল্পনার ঘটনার কথা একথা বার বার ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করত ব্রিটিশ শাসকরা। তবে শেষ পর্যন্ত নাথুরামের গুলিতেই মৃত্যুবরণ করেন মহাত্মা। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি থেকেই এই পরিকল্পনা শুরু করে নাথুরাম গডসে ও তার সহযোগীরা। এই দলে ছিলেন শঙ্কর কিস্তাইয়া, গোপাল গডসে, মদন লালা পাহওয়া , দিগম্বর রামচন্দ্র ব্যাজ, নারায়ণ আপ্তে, ডি সাভারকর ও নাথুরাম গডসে। এর আগেও নাথুরাম গডসের এই দল ২০ই জানুয়ারি একটি জনসভায় গান্ধীকে হত্যার জন্য পরপর দুটি গ্রেনেড ছুঁড়েছিল। কিন্তু সেই সময় প্রবল ভিড়ের কারণে তারা সাফল্য লাভ করেনি। তবে মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই গান্ধীর ওপর দ্বিতীয় হামলা করে গডসে ও তাঁর দল। সেই ঘটনায় গোটা বিশ্ব হারায় 'মহাত্মা'কে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File