দেশ

Cyclone Biparjoy and Flash Flood in Sikkim | 'বিপর্যয়'র তান্ডব চললো গুজরাটে! হড়পা বানে বিপর্যস্ত সিকিম, আটকে বহু পর্যটক!

Cyclone Biparjoy and Flash Flood in Sikkim | 'বিপর্যয়'র তান্ডব চললো গুজরাটে! হড়পা বানে বিপর্যস্ত সিকিম, আটকে বহু পর্যটক!
Key Highlights

বৃহস্পতিবার রাতে গুজরাটে তান্ডব চালায় 'বিপর্যয়'। এরপর গন্তব্য রাজস্থানে। সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি। বন্ধ জাতীয় সড়ক ১০ ও ৬।

ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' (Cyclone Biparjoy) বেশ চিন্তায় ফেলেছিলো প্রশাসন-সহ গোটা দেশকে। আবহাওয়া সূত্রানুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ ১৫ই জুন ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে আঘাত হানার কথা ছিল 'বিপর্যয়'র। তবে শক্তি কমিয়ে ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে গুজরাটে (Gujrat) আছড়ে পরে এই ঘূর্ণিঝড়।

খবর ছিল প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে ল্যান্ডফল করবে 'বিপর্যয়'। তবে বেশ শক্তি কমিয়ে প্রায় ১১৫ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে গুজরাটের কচ্ছের মাণ্ডবী (Mandabi) ও জাখাউ বন্দর (Jakhau Bandar) এলাকায় আছড়ে পরে ঘূর্ণিঝড়। তবে এক সময় এই গতিবেগ বেড়ে ছাড়ায় ১৪০ কিলোমিটারের মাত্রা। মাঝরাত পর্যন্ত চলে ঝড়ের তান্ডব। প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির জেরে তছনছ হয়ে পরে দ্বারকা (Dwarka), সৌরাষ্ট্র (Saurashtra), পোরবন্দর (Porbandar), কচ্ছ উপকূল (Kutch Coast) এলাকা। বিপর্যয়'র গতিবেগ রাতে সময়ের থাকে বলে জানায় আবহাওয়া দফতর। আজ অর্থাৎ ১৬ই জুন ভোর পর্যন্ত ঝড়ের প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। জানা গিয়েছে, আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার এবং রবিবারের মধ্যে 'বিপর্যয়' গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। যা ক্রমশ এগোতে পারে রাজস্থানের (Rajasthan) দিকে। যার ফলে ইতিমধ্যেই রাজস্থানের বিভিন্ন জেলায় হাই অ্যালার্ট (High Alert) জারি করা হয়েছে হাওয়া অফিস ও প্রশাসনের তরফ থেকে।

ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' ভালো রকমই প্রভাব ফেলবে বলে আগেই আশঙ্কা করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। সেই কথা সত্যি করেই বৃস্পতিবার সকাল থেকেই  মহারাষ্ট্র (Maharashtra) ও গুজরাট সংলগ্ন আরব সাগরে (Arabian Sea) ফুঁসছিল এই ঘূর্ণিঝড়। রাতে ল্যান্ডফল করার পর থেকেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে 'বিপর্যয়'। সময়ের আগেই উপকূলবর্তী এলাকা থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রশাসনের তরফ থেকে। তবুও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে গুজরাটে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, জখম হয়েছেন প্রায় ২২ জন। গুজরাট  সরকার জানাচ্ছে, সব মিলিয়ে ৫২৪টি গাছ উপড়েছে ‘বিপর্যয়’। বহু জায়াগায় উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, যার জেরে বিদ্যুৎহীন প্রায় ৯৪০টি গ্রাম।

ঝড় মোকাবিলা করতে ১৮টি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছিল প্রশাসন। তৈরী রাখা হয় সেনা, নৌ ও বায়ুসেনা বাহিনী, ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। সময়ের আগে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় এক লাখ মানুষকে। দুর্গতদের জন‌্য রাজ‌্যজুড়ে ১৫১২টি শিবির তৈরি করে প্রশাসন। কমলা সতর্কতা (Orange Alert) জারি করা হয় মোরবি (Morbi), জামনগর (Jamnagar), রাজকোট (Rajkot), পোরবন্দর (Porbandar) এবং জুনগড়ে (Junagarh)। হলুদ সতর্কতা (Yellow Alert) জারি গির সোমনাথ (Jari Gir Somnath), অমরেলি (Amreli), ভালসাদ (Valsad), নবসারি (Navsari), সুরত (Surat), ভরুচ (Bharuch), আনন্দ (Anand), সুরেন্দ্রনগর (Surendranagar), আমেদাবাদ (Ahmedabad), গান্ধীনগর (Gandhinagar), মেহসানা (Mehsana), পাটনা (Patna), বানসকণ্ঠ (Banaskantha), সবরকণ্ঠে (Sabarkantha)। লাল সতর্কতা (Red Alert) জারি হয় কচ্ছ, সৌরাষ্ট্রে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখেন গুজরাটের মুখ‌্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প‌্যাটেল (Bhupendra Patel)। মুখ‌্যমন্ত্রীকে ফোন করে খোঁজ নেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (PM Narendra Modi)। গুজরাট প্রশাসন জানিয়েছে, তারা এই ঝড় মোকাবিলা করার জন্য যতটা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এবং ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কা করেছিলেন, ঝড়ের গতিবেগ কমে যাওয়ায় সেই আশঙ্কা খুব একটা সত্যি হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিকিম (Sikkim)। অতিরিক্ত এবং ভারী বৃষ্টির ফলে হড়পা বানের (Harpa Ban ) জেরে প্রভাব পড়েছে পেগং (Pegong) এলাকায়। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH 10)।  সিকিমের প্রশাসন এবং 'বর্ডার রোডস সংস্থা'র  (Border Roads Organisation) তরফে জানানো হয়, উত্তর সিকিমের পেগং এলাকায় হড়পা বানের জেরে আটকে পড়েছেন পর্যটক। ইতিমধ্যেই তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, এদিন উত্তর সিকিমের পেগং এলাকায় আকস্মিক এই বন্যার জেরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিঘ্নিত হয়েছে ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মুষলধারে বৃষ্টিপাতের জেরে নিকটবর্তী নদীগুলি উপচে পড়ায় সেখানে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন প্রায় দুশ জন যাত্রী এবং পর্যটক। ওই এলাকার রাস্তা পরিষ্কার করে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হলেও, ওই রাস্তা যানবাহন চলার উপযোগী করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, এই বন্যার কারণে বেশ ক্ষতি হয়েছে জাতীয় সড়কে।

অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মেঘালয়ের (Meghalaya) পূর্ব জয়ন্তীয়া পাহাড় জেলার সুনাপুর (Sonapur) এলাকায় ধস (landslides) নামে।  ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH 6)। সেই সঙ্গে ধস নেমেছে সিকিমের লাচুং (Lachung), লাচেন (Lachen) সহ একাধিক জায়গায়। জানা গিয়েছে, সেখানে আটকে পড়েছেন প্রায় ৩ হাজার পর্যটক। বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অসমের (Assam) তিনটি জেলাতেও। জানা গিয়েছে, ধেমাজি (Dhemaji), ডিব্রুগড় (Dibrugarh) এবং লখিমপুর (Lakhimpur) জেলার একটি বড় অংশ জলমগ্ন হয়েছে। ফলে সমস্যার মধ্যে পড়েছেন প্রায় ২৯ হাজার বাসিন্দা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা লখিমপুর জেলায়।