লাইফস্টাইল

Chicken Pox Diet | আবহাওয়ার পরিবর্তনে চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকেন পক্স! জানুন দ্রুত সুস্থ্য হতে কী খাবেন?

Chicken Pox Diet | আবহাওয়ার পরিবর্তনে চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকেন পক্স! জানুন দ্রুত সুস্থ্য হতে কী খাবেন?
Key Highlights

বছরের প্রথম ছ’মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চিকেন পক্স হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। চিকেন পক্স হলে তা নিরাময়ের জন্য যেমন সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সঠিক ডায়েটের।

শীতের বিদায়কালে যেমন ক্রমশ বাড়ছে গরম, তেমনি সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক ভাইরাস। এইসব ভাইরাসের মধ্যে ভ্যারিসেলা জস্টারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ এই ভাইরাসের ফাঁদে পড়লেই শরীরে দেখা দেয় চিকেন পক্স (Chicken Pox)! এই রোগকে আবার বলা হয় বসন্ত রোগও। একে অনেকে জলবসন্তও বলেন। আর এক ধরনের পক্স আগে হত। সেটা হল স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত। যদিও এখন তা অনেক কম দেখা যায়। এই রোগের চলতি নামে 'বসন্ত' থাকলেও শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যে কোনও সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম ছ’মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। চিকেন পক্স হলে তা নিরাময়ের জন্য যেমন সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সঠিক ডায়েট। এই সময়ে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পরে। যার ফলে এমন খাবার খেতে হবে যা শরীরে দ্রুত পুষ্টি যোগাবে, এনার্জি আনবে। দেখে নেওয়া যাক চিকেন পক্সে কী খাবেন (What to eat in chicken pox)? তবে তার আগে জানতে হবে এই রোগ সম্পর্কে।

চিকেন পক্স কী এবং কেন হয়? । What is Chicken Pox and Why Does It Happen?

 ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই এটিও একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভ্যারিসেলা জস্টার (ভি-জেড ভাইরাস) নামে এক ধরনের ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়। অনুকূল আবহাওয়া পেলেই এই ভাইরাস সক্রিয় হয় ওঠে। চিকেন পক্স খুব ছোঁয়াচে রোগ। এই কারণে খুব সহজে এবং দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ মানুষের দেহে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। তা ছাড়া, ফোস্কার মধ্যে যে রস থাকে তার মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই রস সুস্থ ব্যক্তির শরীরে লাগলে রোগ হতে পারে। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই এই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তবে ১-১৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।

চিকেন পক্স সংক্রমণ শনাক্ত এবং চিকিৎসা । Chicken Pox Infection Diagnosis and Treatment :

চিকেন পক্সের ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। শরীরে ঢোকার ১৪-২১ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।ক্লিনিক্যালি দু’-একটি র‌্যাশ না বের হওয়া পর্যন্ত সাধারণ ভাবে দেখে বোঝা যায় না যে চিকেন পক্স হয়েছে কি না। ওই র‌্যাশের রস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সব সময় তা করার দরকার হয় না। প্রাথমিক ভাবে র‌্যাশের প্রকৃতি ও ধরন দেখেই রোগ নির্ণয় করা হয়। যত দিন র‌্যাশ বের হয় তত দিন তো বটেই, র‌্যাশ বের হওয়া বন্ধ হওয়ার পরেও দিন সাতেক পর্যন্ত এক জন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে রোগটির সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এই রোগ হলে যা যা উপসর্গ দেখা যায়-

  • প্রাথমিক ভাবে জ্বর হবে এবং ক্রমশ ২-৩ দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা বাড়বে।
  •  সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা হবে।
  • ২-৩ দিন পর থেকে শরীরে র‌্যাশ বের হবে।
  • র‌্যাশ যখন বের হয়, তখন চুলকানির অনুভব হবে। প্রথমে শরীরের মধ্য অংশের সামনের দিকে, পরে মুখমণ্ডলে র‌্যাশ বের হয়। পরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে।
  • মুখগহ্বর এবং গলার মিউকাস আবরণীতেও র‌্যাশ বের হয়। ৫-৭ দিন পর্যন্ত র‌্যাশ বের হয়। সেটা ধীরে ধীরে জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়।
  • ৭-১০ দিন পর থেকে তা শুকোতে থাকে। শুকিয়ে যাওয়ার পরে র‌্যাশ থেকে খোসা উঠতে শুরু করে।
  • চিকেন পক্সে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরে।

চিকেন পক্স কোনও জটিল রোগ নয়। এর জন্য অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ আছে। র‌্যাশ বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা প্রয়োগ করতে পারলে শরীরে অনেক কম র‌্যাশ বের হয় বা জ্বালা, যন্ত্রণা থেকে উপশম পাওয়া যায়। কিন্তু গর্ভবতী মা, সদ্যজাত বা ইমিউনো কম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হয়। তা না হলে, সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করতে হয়। যেমন, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বা বেশি চুলকানি হলে তা কমানোর জন্যেও ওষুধ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ভিটামিন ওষুধ দেওয়া হয়। এই সময়ে প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে বলা হয়। চিকেন পক্স ডায়েট (Chicken Pox Diet) মেনে চলতে হয়। প্রচুর পরিমাণ জল পান করতে বলা হয়।

চিকেন পক্স ডায়েট চার্ট । Chicken Pox Diet Chart :

চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে রোগীকে উচ্চ প্রাণীজ প্রোটিন সম্বৃদ্ধ খাবার দেওয়া উচিত। বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রাণীজ প্রোটিন জাতীয় খাবার দিতে হয়। তবে অবশ্যই তা সহজপাচ্য হতে হবে। তবে এমন কিছু খাবার আছে যা  এই সময়ে না খাওয়াই ভালো। দেখে নিন চিকেন পক্স হলে কী খাবেন (What to eat in chicken pox)।

কী খাবেন?

বেশি করে জল খান : চিকেনপক্সের সময় শরীরে জলের পরিমাণ কমতে থাকে। এ কারণে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই সময়েই শরীরে জল সঠিক পরিমাণে রাখতে হবে।

ফাস্ট ডায়েট: এ সময় ফাস্ট ডায়েট অনুসরণ করুন। এই খাবারের মধ্যে রয়েছে কলা, চাল, আপেল এবং টোস্ট।

ফলের পরিমাণ বাড়ান: চিকেন পক্স ডায়েট চার্ট (Chicken Pox Diet Chart) এ বেশি করে রাখতে হবে ফল। এক্ষেত্রে খেতে পারেন আঙুর, কলা। এই ফলগুলি এমনি খেতে ভাল না লাগলে, মিল্কশেক এবং জ্যুস আকারে খেতে পারেন।

ডাবের জল : ডাবের জলে শূন্য ক্যালোরি-সহ শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে। যা, আপনার শরীরে শীতল প্রভাব সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

সিদ্ধ সবজি:  এই সময়ে তেল ছাড়া সিদ্ধ সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। সেক্ষেত্রে গাজর, মিষ্টি আলু, আলু এবং বাঁধাকপি খেতে পারেন।

দই : এটি ত্বক নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। এতে ক্যালসিয়াম এবং প্রোবায়োটিকও রয়েছে। তাই দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।

অ্যান্টিভাইরাল: দই,ডাব, অ্যাপ্রিকট, চেরি, অ্যাভোকাডো, পেঁপে, আপেল, নাশপাতি, ডুমুর এবং আনারস ইত্যাদি খান।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: চিকেন পক্স ডায়েট চার্ট (Chicken Pox Diet Chart) এর খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ব্রকলি, পেঁপে, কিউই এবং স্ট্রবেরি রাখুন।

নিম পাতা : অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিম্যালারিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল সমৃদ্ধ নিম পাতা চিকেন পক্স নিরাময় করে। নিম পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া নিম সিদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করলেও উপকার পাবেন।  

কী খাবেন না?

চর্বি জাতীয় খাবার: চিকেন পক্স হলে চর্বি জাতীয় খাবার যেমন-মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারকেল বা চকোলেট জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ এগুলিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।

অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার:  শরীর সুস্থ রাখতে চিকিত্‍সকরা অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খেতে নিষেধ করেন। চিকেন পক্স হলে মুখের ভিতরে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাতে ঝাল লাগলে প্রদাহ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। তাই তেল-ঝাল-মসলাযুক্ত খাকার থেকে দূরে থাকুন।

বেশি ড্রাই ফ্রুট: আখরোট, চীনাবাদাম, কিসমিশের মতো খাবারে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশ বিস্তার করে। এমনিতে এই অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভাল হলেও চিকেন পক্স হলে এই খাবার থেকে দূরে থাকুন।

চিকেন পক্স হলে, এই রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠতে রোজ একবাটি করে মুসুরের ডাল, ব্রকোলি, মটরশুঁটি, আলুসেদ্ধ এসব খেতে হবে। কলা, তরমুজ, শসা, সবেদা, আপেল, শাঁখালু,  ন্যাশপাতি এসব ফল খেলেও উপকার পাবেন। বয়েলড চিকেন, হালকা মাছের ঝোল রাখুন ডায়েটে। ডিমের সাদা অংশ খান, কুসুম এড়িয়ে চলুন। রোজ একবাটি করে টক দই খান। পছন্দ হলে মিল্কশেকও চলতে পারে।