দেশ

Chhatrapati Shivaji Jayanti | বীর যোদ্ধার পাশাপাশি, নেতৃত্ব ছিল তাঁর মজ্জাগত! পড়ুন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ সম্পৰ্কে!

Chhatrapati Shivaji Jayanti | বীর যোদ্ধার পাশাপাশি, নেতৃত্ব ছিল তাঁর মজ্জাগত! পড়ুন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ সম্পৰ্কে!
Key Highlights

শিবাজী ছিলেন জাতীয়তাবাদী এবং হিন্দুত্ববাদী সম্রাট, যিনি সর্বদা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। ভারতের অন্যতম সাহসী এবং প্রগতিশীল শাসক ছত্রপতি শিবাজীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ১৯ সে ফেব্রুয়ারি ছত্রপতি শিবাজী জয়ন্তী পালিত হয়।

শিবাজি ভোঁসলে, যিনি ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ নামেই অধিক পরিচিত। বীর যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতিই শুধু নয়, নেতৃত্ব ছিল তাঁর মজ্জাগত। ভারতের অন্যতম সাহসী এবং প্রগতিশীল শাসক ছত্রপতি শিবাজীর (Chhatrapati Shivaji) জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ১৯ সে ফেব্রুয়ারি ছত্রপতি শিবাজী জয়ন্তী (Chhatrapati Shivaji Jayanti)পালিত হয়। মারাঠা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজি একজন মহান যোদ্ধা ছিলেন। পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং মহারানা প্রতাপের পরে, মারাঠা শাসক ছত্রপতি শিবাজীর নাম ভারতের সাহসী যোদ্ধাদের তালিকায় সবার আগে উঠে আসে, কারণ শিবাজী মহারাজ, পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং মহারানা প্রতাপের মতো, তাঁর শেষ সময় পর্যন্ত বিদেশী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী এবং হিন্দুত্ববাদী সম্রাট, যিনি সর্বদা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। এছাড়াও ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ হলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। শিবাজী বিজাপুরের আদিলশাহি সালতানাতের সাথে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং হেরে যান। পরে তিনি ১৬৭৪ সালে মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজা ‘ছত্রপতি’ হিসেবে মুকুট ধারণ করেন।

শিবাজীর প্রারম্ভিক জীবন ও পরিবার :

ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের পুরো নাম ছিল শিবাজি ভোঁসলে। তিনি ১৬৩০ সালের ১৯সে জানুয়ারি মারাঠা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিবাজীর পিতার নাম শাহজি ভোঁসলে এবং মা জিজাবাই। শিবাজি মহারাজ শিবনেরির দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। শিবনেরি ফোর্ট মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে অবস্থিত। শিবাজীর স্ত্রীর নাম সাহিবাই নিম্বালকর এবং ছেলের নাম ছিল সম্ভাজি রাজে ভোসলে। শিবাজী মহারাজের বাবা শাহাজি ভোঁসলে ছিলেন বিজাপুরের সুলতানের সেনাবাহিনীর সেনাপতি, কিন্তু শিবাজী ছোটবেলা থেকেই সবসময় স্বাধীন নীতির কথা বলতেন। তবে শিবাজী মহারাজ শৈশবে একজন দক্ষ শিশু ছিলেন। কথিত আছে, শিবাজী মহারাজ শৈশব থেকেই রামায়ণ ও মহাভারত পড়তে খুব পছন্দ করতেন। শিবাজী মহারাজ যোদ্ধার পাশাপাশি পণ্ডিতও ছিলেন। তিনি অনেক ধরনের ধর্মীয় ও প্রাচীন বই পড়তে পছন্দ করতেন। শিবাজীর মা জিজাবাই শিবাজীকে ধর্মীয় গ্রন্থের জ্ঞান দিয়েছিলেন। তিনি এতটাই তুখোড় ছিলেন যে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে, শিবাজি যুদ্ধের নিয়ম এবং যুদ্ধের পদ্ধতি বুঝতে পেরেছিলেন। শিবাজী মহারাজের পিতামহ মালোজি ভোঁসলে তাকে যুদ্ধ ও রাজনীতি সম্পর্কিত জ্ঞান দিয়েছিলেন।

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ যুবক সময়কালে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বিবাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  ফলে ছত্রপতি শিবাজী  পুনের লাল মহলে সাহি বাই নিম্বলকরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং পরে একটি পুত্র সন্তান লাভ হয়। যার নাম ছিল সম্ভাজি রাজে ভোঁসলে।  শিবাজীর পুত্র সম্ভাজিও শৈশব থেকেই অত্যন্ত নির্ভীক ও দক্ষ শিশু ছিলেন। সম্ভাজি ১৬৮০ থেকে ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মারাঠা সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন।

শিবাজীর যুদ্ধ ও শাসনকাল :

যৌবনে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিবাজী মহারাজের মারাঠা সাম্রাজ্য নিয়ে আলোচনা ও দায়িত্বও বেড়ে যায়। শিবাজি মহারাজ তাঁর শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার কারণে অল্প বয়সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ শুরু করেন। ইতিহাস অনুসারে, শিবাজি মহারাজ ১৯৪৬ সালে ১৭ বছর বয়সে প্রথমবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমনকি উল্লেখযোগ্যভাবে যুদ্ধের সময়, শিবাজি মুলা আফজাল খানের কাছ থেকে চাকান, কোন্দানা, তোরান, কল্যাণ, থানে, ভিওয়ান্ডির মতো বহু প্রাচীন দুর্গ ছিনিয়ে নিয়ে মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। শিবাজি অল্প বয়সে মুঘলদের কাছ থেকে তাদের দুর্গ কেড়ে নিয়ে তাদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন, যার ফলে তা  মুঘলদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছিল।

বিজাপুরের শাসক আদিলশাহ শিবাজীর পিতা শাহাজি ভোঁসলে, তার সেনাপতিকে বন্দী করেন। তাই শিবাজীর ভয়ে আদিলশাহ তাঁর পিতাকে বন্দী করেন। ফলে এরপর শিবাজি মহারাজ কিছু সময়ের জন্য কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেননি। তবে এই সময়ে তিনি তার সেনাবাহিনীকে আগের চেয়ে শক্তিশালী করেছিলেন। এরপর আদিলশাহের বন্দিদশা থেকে বাবাকে উদ্ধার করে শিবাজী মহারাজ আবার যুদ্ধ শুরু করেন। ছত্রপতি শিবাজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফজাল খানকে সর্বদা পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়।  আফজাল খান শিবাজী মহারাজকে সন্ধি আলোচনার মাধ্যমে শিবাজীকে কাছে ডেকে প্রতারণা করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। সন্ধি আলোচনার সময় আফজাল খান শিবাজী মহারাজকে জড়িয়ে ধরে অস্ত্র দিয়ে হত্যার প্রয়াস করেন। কিন্তু শিবাজি লোহার বর্ম পরেছিলেন, যার কারণে তিনি রক্ষা পান।  সেই সময়ে শিবাজী তার ছুরি দিয়ে সেই দৈত্য আফজাল খানের পেট ছিঁড়ে ফেলেন। আফজাল খানকে এভাবে হত্যা করা এবং আফজাল খানের সাথে যুদ্ধের এই গল্পটি মারাঠা সাম্রাজ্য এবং মহারাষ্ট্রের ইতিহাসে খুব বিখ্যাত। কারণ শিবাজী মহারাজের চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা আফজাল খানকে এভাবে হত্যা করার ঘটনা ছিল বেশ আশ্চর্যজনক।

বিজাপুরের কাছে প্রতিটি পরাজয়ের পর বিজাপুরের বেগম আওরঙ্গজেবের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সাহায্য গ্রহণ করে, আওরঙ্গজেব তার মামা শায়েস্তা খানকে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে হত্যা করার জন্য দেড় লাখ সৈন্য নিয়ে পুনে আক্রমণ করতে পান। শায়েস্তা খান পুনেতে শিবাজী মহারাজের লাল কেল্লা দখল করেন। কিন্তু রাতে শিবাজী মহারাজের বাহিনী আবার লাল কেল্লা আক্রমণ করে দখল করে নেয়। এতে শায়েস্তা খানকে পরাজিত হয়ে পালাতে হয়। এই পরাজয়ের পর আওরঙ্গজেব তার বিশেষ যোদ্ধা জয় সিংকে শিবাজীর সাথে যুদ্ধ করতে পাঠান। এই যুদ্ধে শিবাজী পরাজিত হন। ফলস্বরূপ, ২৩টি দুর্গ মুঘলদের দিতে হয়েছিল, কিন্তু কিছু সময় পরে শিবাজি আবার ২৩টি দুর্গ জয় করে মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।

শিবাজীর সাম্রাজ্য ও সেনা :

শিবাজি তার রাজত্বকালে মহারাষ্ট্রের মারাঠা সাম্রাজ্যের বিকাশ ও প্রসার করেছিলেন। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের রাজত্বকালে মারাঠা সাম্রাজ্যের সীমানা উত্তরে বারাণসী থেকে দক্ষিণে নাসিক হয়ে কোলহাপুর সাতারা পর্যন্ত এবং কর্ণাটক থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত ছিল। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ মুঘলদের কাছ থেকে দুর্গ ও রাজ্যগুলিকে মুক্ত করেন এবং মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। উল্লেখ্য, শিবাজি মহারাজের একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল, যা শিবাজি মহারাজ প্রস্তুত করেছিলেন। শিবাজী মহারাজের সেনাবাহিনীতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য ছিল, যারা স্থায়ীভাবে এবং নিয়মিত নিযুক্ত ছিল। এছাড়াও শিবাজীর সেনাবাহিনীতে ১২টিরও বেশি হাতি এবং ১০০,০০০ পদাতিক সৈন্য ছিল। পাশাপাশি শিবাজীর সেনাবাহিনীতে অনেক গোলন্দাজও ছিল। সমুদ্র,পাহাড়, মালভূমি ইত্যাদি সব জায়গা থেকে শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য শিবাজীর সেনাবাহিনীতে সব ধরনের সৈন্য ছিল। শিবাজী মহারাজ তার বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা দিয়ে তার সেনাবাহিনীতে গেরিলা যুদ্ধ ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই যুদ্ধ ব্যবস্থার অধীনে, সৈন্য এবং স্থানীয় জনগণ, আধাসামরিক বাহিনী বন ও পাহাড়ে লুকিয়ে থাকে এবং শত্রুবাহিনীকে আক্রমণ করে।

শিবাজীর জীবনাবসান :

শিবাজি মহারাজ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ক্রমশ তার স্বাস্থ্যের উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হতে থাকে। অবশেষে, ১৬৮০ সালে, বীর ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ তাঁর রাজধানী রায়গড়ে ৩রা এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার পুত্র সম্ভাজি মারাঠা সাম্রাজ্যের দখল নেন এবং বহু বছর শাসন করেন।

 শিবাজি তাঁর রাজত্বকালে অনেক যুদ্ধ করেছেন এবং অনেক মুঘলকে জয় করে মারাঠা সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়েছিলেন।  রায়গড় দুর্গে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল এবং তিনি সেখানেই থাকতেন। উল্লেখ্য,  শিবাজী মহারাজকে তাঁর ভালো কাজের জন্যই 'ছত্রপতি' উপাধি দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে, ভারতের সাহসী যোদ্ধাদের তালিকায় ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে একটি বিশিষ্ট স্থান দেওয়া হয়েছে। ভারতের সাহসী যোদ্ধা পৃথ্বীরাজ চৌহান, মহারানা প্রতাপের মতো বীরদের সঙ্গে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের নামও আসে।

প্রসঙ্গত,  ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ শিব জয়ন্তী (Chhatrapati Shivaji Maharaj Shiv Jayanti) উপলক্ষ্যে এই দিনটি মহারাষ্ট্র এবং ভারতের বিভিন্ন মারাঠা-ভাষী সম্প্রদায় জুড়ে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে পালিত হয়। ছত্রপতি শিবাজিকে তাঁর ৩৯৪তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। শিবাজীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা, নির্ভীক যোদ্ধা, সংস্কৃতির রক্ষক এবং সুশাসনের প্রতীক, ছত্রপতি শিবাজীর অসামান্য নেতৃত্ব আজও তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। সত্য ও ন্যায়ের তিনি ছিলেন আপোষহীন যোদ্ধা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা অমিত শাহও শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছেন, বীরত্ব এবং আত্মসম্মানের প্রতীক ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে অভিনন্দন। শিবাজি মহারাজ ভারতীয় সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মুঘল ও অন্যান্য বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তাঁর বীরত্ব,অদম্য সাহসিকতা হিন্দু সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজভুত করেছিল।