বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ISRO and NASA | পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের 'মায়াবৃত্তে' চন্দ্রযান-৩! ৪৫দিনে মঙ্গলগ্রহে যান পাঠাবে নাসা!

ISRO and NASA | পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের 'মায়াবৃত্তে' চন্দ্রযান-৩! ৪৫দিনে মঙ্গলগ্রহে যান পাঠাবে নাসা!
Key Highlights

১লা অগাস্ট চাঁদের 'স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্সে' প্রবেশ করেছে চন্দ্রযান-৩। আগামী ৫ তারিখ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করবে মহাকাশযান। অন্যদিকে, মঙ্গলযান তৈরিতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার কথা জানালো নাসা।

অগাস্ট মাসের শুরুতেই সব দিক থেকেই মহাকাশ পাড়ি নিয়ে আসছে সুখবর। আজ অর্থাৎ ১লা অগাস্ট চাঁদের আরও কাছে পৌঁছে গেল চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের 'মায়াবৃত্তে' ঢুকে পড়ল ভারতের চন্দ্রযান-৩। মঙ্গলবার টুইট করে ইসরো (ISRO) জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই চলছে এই চন্দ্রাভিযানের যাত্রা। চন্দ্রযান-৩ এর শারীরিক অবস্থাও সুস্থ রয়েছে বলেই জানিয়েছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization)। অন্যদিকে, মঙ্গলযান তৈরিতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার কথা জানালো নাসা (NASA)।

১লা অগাস্ট চাঁদের 'স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স' (Sphere of Influence) অর্থাৎ 'মায়াবৃত্তে' ঢুকে পড়েছে চন্দ্রযান-৩। বর্তমানে চন্দ্রযান-৩ থেকে চাঁদের দূরত্ব প্রায় ৬২ হাজার ৬৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের প্রোপালসন মডিউলের (Propulsion Module) ইঞ্জিন এখন সক্রিয়। ইসরো জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩-কে ট্রান্সলুনার অরবিটে (Translunar Orbit) সফল ভাবে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জানা গিয়েছে, আগামী ৫ই অগাস্ট চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছবে চন্দ্রযানটি। এরপর সব ঠিক থাকলে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ড করবে ২৩শে অগাস্ট।

ইসরোর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী ৫ই অগাস্ট চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানটিকে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করানো হবে। এরপর এই মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে যাবে প্রোপালসন মডিউল ল্যান্ডার 'বিক্রম' (Lander Rover)। এটিই চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে মোট চার বার চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে।  প্রত্যেক বার পাক খেতে খেতে চাঁদের মাটির কাছাকাছি পৌঁছবে 'বিক্রম'। এরপর ধীরে ধীরে ২৩শে অগাস্ট ল্যান্ডারটি চাঁদের মাটিতে নামবে। তবে চাঁদের বুকে অবতরণের প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত জটিল। কারণ অবতরণের আগে সরেজমিনে দেখা হবে মাটির উপরকার পরিস্থিতি। এরপর নিরাপদ জায়গা বেছে নিয়ে পালকের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছোঁবে 'বিক্রম'। এরপর ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে রোভার 'প্রজ্ঞান' (Rover Pragyan)। এক চন্দ্রদিবসের জন্য অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ১৪ দিন চাঁদের বুকে ঘুরে বেরিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে এটি।

উল্লেখ্য, চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan-2) মিশন সম্পূর্ণভাবে সফল হয়নি। ফলে আগের ভুলের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযান-৩ এর স্বাস্থ্যের ওপর সারাক্ষণ নজর রাখছে ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এমনকি চন্দ্রযান- ৩ এর স্বাস্থ্য নিয়ে টুইট করে সাধারণ মানুষ তথা বিশ্বের সকলকেই বার্তা দিয়েছে ইসরো। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে চন্দ্রযান-৩ এর বেরোনোর পরই ইসরোর তরফে টুইটে বলা হয়েছে, চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক রয়েছে। এদিনের পেরিজি বার্ন (Perigee Burn) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চন্দ্রযান-৩-কে ২৮৮ কিলোমিটার X ৩৬৯৩২৮ কিলোমিটার অবস্থানে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। ন্যারফ ফলে মহাকাশযাটি চাঁদের বলয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এরপর পেরিলুনে (Perilune) অর্থাৎ কক্ষপথের যে বিন্দু থেকে চাঁদের দূরত্ব সবথেকে কম, সেখানে থাকার সময় লুনার অরবিট ইনজেকশনের (Lunar Orbit Injection) মতো জটিল কৌশলটি সম্পন্ন হবে।

ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে ঘুরে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের প্রকৃতি ও এর পরিবেশ নিয়ে 'ইন-সিটু কেমিক্যাল অ্যানালিসিস' (In-Situ Chemical Analysis) চালাবে। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে চাঁদ-চর্চা শুরু করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেকর্ড করে ফেলবে ভারত। এই বিরল কাজটি সুষ্ঠু ভাবে করার ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ দেশ হতে চলেছে ভারত।

অন্যদিকে, মহাকাশযানের উৎক্ষেপণে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে চলেছে নাসা। সূত্রের খবর, ২০২৫ সালের মধ্যে মঙ্গলগ্রহ অভিযানকে সামনে রেখেই পারমাণবিক শক্তিচালিত মহাকাশযান উৎক্ষেপণের লক্ষ্য নিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই মহাকাশযান তৈরিতে খরচ পড়বে আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায়  প্রায় ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ডেমোনস্ট্রেশন রকেট ফর অ্যাজাইল সিসলুনার অপারেশন্স (Demonstration Rocket for Agile Cislunar Operations)।

পারমাণবিক শক্তিচালিত মহাকাশযান তৈরির এই মিশনে নাসা-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির সংস্থা লকহিড মার্টিন (Lockheed Martin)। জানা গিয়েছে, এই সংস্থার তৈরী করা নকশা, তাদের তৈরি রকেটের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হবে। তার পর ওই রকেট পাঠানো হবে মহাকাশে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি, পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ইঞ্জিন রকেটের গতিবৃদ্ধি করে। এই পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় মহাকাশে রকেটকে ভাসিয়ে রাখতে পারে। ফলে পৃথিবী থেকে গন্তব্যে পৌঁছতেও কম সময় লাগবে। বর্তমানে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছতে যেখানে প্রায় সাত মাস সময় লাগে, সেখানে পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ইঞ্জিন দ্বারা মাত্র ৪৫ দিনেই পৌঁছনো যাবে মঙ্গলগ্রহে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে রকেট উৎক্ষেপণে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (Space Launch System ) ব্যবহার করে নাসা। কেবল নাসাই নয়, যুগ যুগ ধরে এই প্রযুক্তিই ব্যবহার করে আসছে গোটা বিশ্ব। এই পদ্ধতিতে জ্বালানির সঙ্গে অক্সিডাইজার মেশানো হয়, যা ধাক্কা দিয়ে মাটি থেকে শূন্যে তুলে দেওয়া হয় রকেটকে। তবে এরপর থেকে  পারমাণবিক শক্তিচালিত ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে চেইন রিয়্যাকশনের ওপরই ভরসা করতে চলেছে নাসা। এতে পরমাণুগুলি যত ভাঙবে, ততই শক্তি উৎপন্ন হবে এবং বর্তমান প্রযুক্তির চেয়ে তা প্রায় তিন গুণ বেশি শক্তিশালী হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫৯ সালেই রকেট উৎক্ষেপণে পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগানো ভাবনা মাথা আসে আমেরিকার। সেই মতো শুরু হয় গবেষণাও। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিন ফর রকেট ভেহিকল অ্যাপ্লিকেশন (Nuclear Engine for Rocket Vehicle Applications) নামের একটি রিয়্যাক্টর তৈরি করে সফল পরীক্ষাও হয়। কিন্তু ১৯৭৩ সালে অ্যাপোলো অভিযানের (Apollo Mission) সমাপ্তিতে পারমাণবিক শক্তিচালিত রকেট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নিয়ে নাড়া চারা করা হয়না। তবে এবার আবারও মহাকাশযানের ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার কথা চিন্তা করছে নাসা। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে নানান পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে।