Chandrayaan 3 | রাত ১২টা বাজতেই পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের প্রবেশ দ্বার! বড় পরীক্ষা চন্দ্রযান-৩ এর!

Monday, July 31 2023, 1:28 pm
highlightKey Highlights

পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করবে চন্দ্রযান-৩। জানুন কীভাবে চাঁদের কাছে যাবে চন্দ্রযান। পাশাপাশি কক্ষপথে প্রবেশের পরেই বা কী করবে ইসরোর মহাকাশযান।


আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা, এরপরেই পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ শেষ করে চাঁদের দিকে আরও এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3)। এখনও পর্যন্ত এই চন্দ্রাভিযান সফলভাবেই চলছে বলে জানিয়েছে ইসরো (ISRO)। পাশাপাশি কবে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁবে সেই বিষয়েও তথ্য দিলো ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization)।

পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ শেষ করে চাঁদের দিকে আরও এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান ৩
পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ শেষ করে চাঁদের দিকে আরও এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান ৩

ইসরো সূত্রে খবর, প্রায় ১৫ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে এবার ১লা অগাস্ট চাঁদের আরও কাছে যেতে চলেছে চন্দ্রযান-৩। আগামীকাল অর্থাৎ অগাস্ট মাসের পয়লা তারিখে চন্দ্রযান-৩ কে ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশনের (Translunar Injection) মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথের দিকে পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জানা গিয়েছে, এদিন রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে এই ট্রান্সলুনার পদ্ধতি শুরু করা হবে। আশা করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়াটি স্থায়ী থাকবে ২৮ থেকে ৩১ মিনিট। এই সময় মহাকাশযানের প্রোপালশান মডিউলের (Propulsion Module) ইঞ্জিনগুলি গতি বাড়ানোর কাজ শুরু করবে।

 ১লা অগাস্ট চন্দ্রযান-৩ কে ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথের দিকে পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু করা হবে
 ১লা অগাস্ট চন্দ্রযান-৩ কে ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথের দিকে পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু করা হবে

ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন কী? । What is Translunar Injection?

এই পদ্ধতিতেই পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করবে চন্দ্রযান-৩। ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে মূলত একটি মহাকাশযানকে ধাক্কা মেরে চাঁদের রাস্তার দিকে পাঠানো হয়। তবে এর জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত গতি। ফলে এই পদ্ধতিতে গতি বাড়িয়ে মহাকাশযানটিকে চাঁদের কক্ষপথের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। এই বর্ধিত বেগ মহাকাশযানটিকে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। তারপর অন্য একটি কক্ষপথে প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মহাকাশযানটি পেরিজি বিন্দুতে (Apogee Point)  থাকাকালীন এই গতি বাড়িয়ে দেওয়ার হয়। এরপর মহাকাশযানটি চাঁদের বলয়ে প্রবেশে সক্ষম হয়।

ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে মূলত একটি মহাকাশযানকে ধাক্কা মেরে চাঁদের রাস্তার দিকে পাঠানো হয়
ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে মূলত একটি মহাকাশযানকে ধাক্কা মেরে চাঁদের রাস্তার দিকে পাঠানো হয়

কেন পেরিজিতে থাকাকালীনই পরিচালনা করা হবে ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন প্রক্রিয়া? । Why Should Translunar Injection Procedures be Performed During Perigee?

পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ১ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড থেকে ১০.৩ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড গতিবেগে ঘুরপাক খাচ্ছে চন্দ্রযান-৩। পেরিজিতে থাকাকালীন চন্দ্রযান-৩-এর গতিবেগ সবথেকে বেশি বৃদ্ধি হবে, যা ১০.৩ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড। অন্যদিকে অ্যাপোজিতে (Apogee) অর্থাৎ যে বিন্দু থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের দূরত্ব বেশি, সেখানে থাকাকালীন চন্দ্রযানের গতিবেগ সবথেকে কমে যাচ্ছে। ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে চন্দ্রযান-৩ কে চাঁদের কক্ষপথে পাঠানো হবে গুলতির মতো তাক করে। তবে এর জন্য প্রয়োজন বেশি গতিবেগের। এছাড়াও চাঁদের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মহাকাশযানটির কোণ পরিবর্তন করতে হবে। পেরিজিতে থাকাকালীন সঠিক কোণে পরিবর্তন এবং বেশি গতিবেগ দুই পাওয়া যাবে।

ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে  প্রয়োজন বেশি গতিবেগের
ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে  প্রয়োজন বেশি গতিবেগের

জানা গিয়েছে, ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশনের প্রক্রিয়াটি চালুর পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকে চলবে প্রস্তুতি পর্ব। থ্রাস্টারগুলি ফায়ারের (Thrusters Fire) আগে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ধরে সেগুলিকে সক্রিয় করা হবে। থ্রাস্টারগুলির ফায়ারিং শুধু যে মহাকাশযানটিকে চাঁদের দিকে এগিয়ে দেবে তাই নয় পাশাপাশি এটির বেগ বাড়াতেও সাহায্য করবে। ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশনের পরে চন্দ্রযান-৩-এর গতিবেগ পেরিজিতে যা ছিল তার থেকে প্রায় ০.৫ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বেশি বৃদ্ধি হবে বলে আশা।

১.২ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মোটামুটি এই মহাকাশযানটির সময় লাগবে ৫১ ঘণ্টা
১.২ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মোটামুটি এই মহাকাশযানটির সময় লাগবে ৫১ ঘণ্টা

ইসরো জানিয়েছে, ১.২ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মোটামুটি এই মহাকাশযানটির সময় লাগবে ৫১ ঘণ্টা। তবে চন্দ্রযানকে চাঁদের কক্ষপথে পাঠানোই সবথেকে কঠিন কাজ নয়। এটি চন্দ্রাভিযান মিশনের একটি অংশ। কারণ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের পর শুরু হবে সেই কঠিন পর্যায়। একাধিক কৌশলের মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশযাটির দূরত্ব কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে এবং প্রবেশ করানো হবে ১০০ কিলোমিটার বৃত্তাকার কক্ষপথে। এই পর্যায়ে প্রোপালশান মডিউলটি ল্যান্ডার মডিউল (Lander Module) থেকে আলাদা হয়ে যাবে। আনুমানিক ১৭ই  অগাস্ট এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার কথা। এরপর সব ঠিক থাকলে চাঁদের ভূমিতে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করবে ২৩ শে অগাস্ট।

চাঁদে অবতরণের পর ১৪ দিন ধরে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে চন্দ্রযান
চাঁদে অবতরণের পর ১৪ দিন ধরে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে চন্দ্রযান

উল্লেখ্য, ১৪ই জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-৩ মিশনের জন্য মোট খরচ হয়েছে ৬১৫ কোটি। ইসরো জানিয়েছে, চাঁদে অবতরণের পর ১৪ দিন ধরে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে চন্দ্রযান। এই মিশন সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করলে মিশন সফল হলে ভারতের মহাকাশ অনুসন্ধান যাত্রায় একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পাশাপাশি বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চিত্রও। ফলে বিজ্ঞানী-সহ গোটা দেশবাসীর অসংখ্য মানুষই প্রার্থনা করছেন চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য লাভের জন্য।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File