Buddha Purnima | বৈশাখী পূর্ণিমার দিনই জন্মগ্রহণ ছাড়াও বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বুদ্ধদেব! জানুন এই দিনের মাহাত্ম্য ও কী কী করবেন?

Thursday, May 23 2024, 7:01 am
highlightKey Highlights

বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে মহাত্মা বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, জ্ঞান লাভ করেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। শুধু বৌদ্ধ নয়, হিন্দুদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু ধর্মে এই পূর্ণিমা তিথিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।


পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে মহাত্মা বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, জ্ঞান লাভ করেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এছাড়াও, ভগবান বিষ্ণু বুদ্ধের রূপে নবম এবং শেষ অবতার ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমা (purnima 2024) উৎসব বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। সেই মতো আজ, ২৩সে মে বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বুদ্ধ পূর্ণিমা। তাঁর জন্ম তিথি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতম উত্‍সব। শুধু বৌদ্ধ নয়, হিন্দুদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু ধর্মে এই পূর্ণিমা (purnima) তিথিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। হিন্দুরা গৌতমদেবকে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসাবে মানেন। মানা হয় এদিন শুভ যোগে বিশেষ কিছু কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে মহাত্মা বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে মহাত্মা বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন

বুদ্ধ পূর্ণিমার তিথি, যোগ, সময় :

Trending Updates

 ২২ মে অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যা ৬.৪৭ মিনিট থেকে পড়ছে বুদ্ধপূর্ণিমা বা বৈশাখ পূর্ণিমা (purnima) এর তিথি। এই পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে ২৩ মে, বৃহস্পতিবার। ২৩ মে সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিটে শেষ হবে তিথি। চন্দ্রোদয়ের সময় ৭.০৩ মিনিট। উদয়া তিথি অনুসারে ২৩ মে এই শুভ দিনটি পালিত হবে। এই বছর বুদ্ধপূর্ণিমা তিথিতে একাধিক শুভ যোগ তৈরি হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। শিব যোগ, সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ ছাড়াও শুক্র ও সূর্যের যুতিতে তৈরি হবে শুক্রাদিত্য যোগ, রাজভঙ্গ যোগ। এছাড়াও তৈরি হচ্ছে গজলক্ষ্মী যোগ। জ্যোতিষমতে বিশ্বাস করা হয় যে, গজলক্ষ্মী যোগের হাত ধরে আসে ধন সম্পত্তি। বুদ্ধ পূর্ণিমার এই শুভ তিথিতে স্নানের পর দান করা শুভ বলে মনে করা হয়। ২৩ মে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ ৯ টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু করে পরের দিন ২৪ মে ৫ টা ২৬ মিনিটে শেষ হবে। সেই দিন পরিঘা যোগ ১২.১২ মিনিটে শেষ হবে। তারপর শিবোগ শুরু হবে। 

বুদ্ধ পূর্ণিমার পুজো :

গৌতম বুদ্ধের আরাধনাকে পুজো বলা হলেও অন্য দেবদেবীর মতো খুব একটা শাস্ত্রীয় নিময় নেই। এদিন কিছু নিয়ম মেনে পুজো করার নিয়ম আছে। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা উচিত। পুজোর অন্যতম শর্ত, বাড়ির প্রতিটি জায়গা পরিষ্কার করে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে হবে। বাড়িতে ঢোকার গেটে হলুদ, লাল সিঁদুর বা রং ব্যবহার করে স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা উচিত। এর পাশাপাশি পূর্ণিমার দিন গঙ্গাস্নানকে শুভ বলে মানা হয়। এর পর বোধি গাছের কাছে দুধ ঢেলে বুদ্ধদেবকে স্মরণ করে পুজো হয়। দানকর্মেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এদিন। গরিবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করলে শুভ ফল পাওয়া য়ায় বলেই মনে করেন বৌদ্ধরা।

শুধু বৌদ্ধ নয়, হিন্দুদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন
শুধু বৌদ্ধ নয়, হিন্দুদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন

বুদ্ধ পূর্ণিমার মাহাত্ম্য :

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কারণে বৈশাখ পূর্ণিমাকে একটি বিশেষ তিথি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এগুলি হলো- বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধের জ্ঞানলাভ এবং বুদ্ধের নির্বাণ। এছাড়াও ভগবান গৌতম বুদ্ধও এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কাকতালীয়ভাবে এই দিনে ভগবান বুদ্ধ বুদ্ধত্বও লাভ করেছিলেন। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি বুদ্ধ পূর্ণিমা ও বুদ্ধ জয়ন্তী নামে পরিচিত। এই উৎসব হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের অনুসারীরা পালন করে থাকেন। একটি হিন্দু বিশ্বাস আছে যে, এই দিনে ভগবান বিষ্ণু বুদ্ধ রূপে তার নবম অবতার হিসাবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বাস করা হয়, এই পূর্ণিমা তিথিতে বছরের পর বছর বনে বিচরণ ও কঠোর তপস্যা করার পর বুদ্ধ বোধগয়ার বোধিবৃক্ষের নিচে সত্যের জ্ঞান লাভ করেন। এই কারণেই বিহারে অবস্থিত বোধগয়া হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান।বৈশাখ পূর্ণিমার দিনে কুশীনগরে তাঁর মহাপরিনির্বাণও হয়েছিল। বুদ্ধ পূর্ণিমায়, ভগবান বুদ্ধের অনুসারীরা তাঁর শিক্ষা শোনেন এবং তাঁর দেখানো পথে চলার শপথ নেন। 

বুদ্ধ বন্দনা (buddha vandana) বলে, তৃষ্ণাই সকল দুঃখের মূল। লোভের কারণে মানুষ জগতের বিভিন্ন জিনিসের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং যখন সেই জিনিস সে পেতে পারে না বা পেয়েও ধ্বংস হয়ে যায় তখন সে দুঃখ পায়। যে প্রাণী তৃষ্ণার কারণে মৃত্যুবরণ করে, সে তার প্রেরণায় জন্ম নেয় এবং জগতের দুঃখের চক্রে পিষে যেতে থাকে। তাই তৃষ্ণা ত্যাগের পথই মুক্তির পথ। ভগবান বুদ্ধের অষ্টমুখী পথ দুঃখের সমাধানের পথ দেখায়। তাঁর এই অষ্টমুখী পথ জ্ঞান, সংকল্প, বক্তৃতা, কর্ম, জীবনযাপন, ব্যায়াম, স্মৃতি ও সমাধির প্রেক্ষাপটে যথাযথ উপলব্ধি করায়। গৌতম বুদ্ধ মানুষের অনেক দুঃখের জন্য তার নিজের অজ্ঞতা এবং মিথ্যা দৃষ্টিকে দায়ী করেছেন। মহাত্মা বুদ্ধ প্রথমবার সারনাথে প্রচার করেছিলেন। তাঁর প্রথম উপদেশ ধর্মচক্র প্রবর্তন নামে পরিচিত যা তিনি আষাঢ় পূর্ণিমার দিনে পাঁচজন ভিক্ষুকে দিয়েছিলেন। বৈষম্য ছাড়াও, প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ মহাত্মা বুদ্ধের শরণাপন্ন হয়েছিল এবং তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করেছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই বুদ্ধ 'শরণম গচ্ছামি, ধম্ম শরণম গচ্ছামি, সংঘ শরণম গচ্ছামি' স্লোগান সারা ভারতে ধ্বনিত হতে শুরু করে। 

বুদ্ধ বন্দনা বলে, তৃষ্ণাই সকল দুঃখের মূল
বুদ্ধ বন্দনা বলে, তৃষ্ণাই সকল দুঃখের মূল

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বনকারীরা বোধগয়ায় এসে বোধিবৃক্ষ কে ঘিরে উৎসব করে। বুদ্ধ পূর্ণিমা ২০২৪ (purnima 2024) এ ভগবান বুদ্ধের ২৫৮৬ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। বৈশাখ পূর্ণিমায়, পবিত্র নদীর জলে স্নান করে রাতে চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদনের পর বাড়িতে ভগবান সত্যনারায়ণের উৎসব করার প্রথা রয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এবং সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। এছাড়াও শাস্ত্র মতে  মানা হয়, বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে জল ভর্তি পাত্র দান করলে গরু দান করার মতো পুণ্য পাওয়া যায়। 




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File