অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের জীবনী, Biography of Bangladeshi economist Abul Barkat in Bengali
অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অর্থনীতি বিভাগের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক এবং সভাপতি। ২০০৯ সালে তিনি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পদে নিযুক্ত হন এবং বর্তমানেও একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন মুক্তি যোদ্ধা হিসেবেও বহুল পরিচিত এক ব্যক্তিত্ব ।
ড. আবুল বারকাতের জন্মকাল ও পারিবারিক জীবন বৃত্তান্ত, Birth and early life
আবুল বারকাতের জন্ম হয়েছিল ১৯৫৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম ছিল ডা. আবুল কাশেম এবং মায়ের নাম নূরুন নাহার। আবুল বারকাত ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। কুষ্টিয়া শহরেই তিনি নিজের শৈশবকাল কাটিয়েছিলেন।
ড. আবুল বারকাতের বৈবাহিক জীবন, Married life
অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ড. সাহিদা আখতারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে এই দম্পতির সংসারে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয় । তাদের নাম হল অবন্তি, আনোখি এবং অরণি।
শিক্ষা অর্জন, Educational qualifications
আবুল বারকাত স্থানীয় বিদ্যালয় থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাশ করেন। পরে ১৯৭৩ সালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচ এস সি পরীক্ষায় উচ্চমানে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।
ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে মেধা বৃত্তি প্রদান করা হয়। একই বছরে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার উদ্দেশ্য নিয়ে আবুল বারকাত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যান। সেখানে অধ্যয়নকালে, ১৯৭৮ সালে মস্কোর 'মস্কো ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল ইকোনমি' থেকে অর্থনীতি বিভাগে এমএসসি-তে সকল বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ গ্রেড এবং অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক অর্জন করেন তিনি।
একই প্রতিষ্ঠানে থেকে 'উন্নয়নের রাজনৈতিক-অর্থনীতি' বিষয়ে গবেষণা করেন এবং ১৯৮২ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক, Career experiences
ড. আবুল বারকাতের কর্মজীবন শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮২ সালে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক বারকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি নিজেকে অন্যান্য সংস্থার সাথেও যুক্ত রেখেছেন। বাংলাদেশের জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবেও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন ড. বারকাত। এই সবের পাশাপাশি তিনি 'হিউম্যান ডেভলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার' নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক প্রধান উপদেষ্ঠার পদে নিযুক্ত।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে কর্মরত। তিনি 'ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স' -এর গভর্নিং বডির সদস্য ও ডিরেক্টর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনস্থ ‘জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ’ নামক বিভাগের চেয়ারম্যান এবং প্রকল্প পরিচালক। এক কথায় বলতে গেলে তিনি অর্থনীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মের সাথে জড়িত রয়েছেন।
বাংলাদেশে তিনিই প্রথম অর্থনীতিবিদ যিনি পানীয় জলে আর্সেনিক বিষক্রিয়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতি অধ্যয়ন করেছিলেন। গবেষণার পর ড. বারকাত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই বিষক্রিয়ার ফলে "আর্সেনিকোসিস" নামক একটি রোগ হয় যা মূলত দরিদ্রদের প্রভাবিত করে। এর জন্য তিনি তাঁর জেষ্ঠ ভ্রাতা অধ্যাপক আবুল হুসামের সাথে সোনো-ফিল্টার উদ্ভাবনে অংশ নিয়েছিলেন। এই ফিল্টারের দীর্ঘস্থায়ীতার জন্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (NAE –USA) দ্বারা প্রদত্ত '২০০৭ মিলিয়ন ডলার গ্রেঞ্জার চ্যালেঞ্জ' পুরস্কার পায়।
গবেষণা ভিত্তিক কর্মসমূহ, Experimental activities
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বিভিন্ন সময়ে নিজের গবেষণাগুলো সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর ৬০০ টিরও বেশি গবেষণা কর্ম রয়েছে। তিনি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ২৪ টি গবেষণামূলক গ্রন্থ লিখেছেন, বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশের জন্য ১১৯ টি প্রবন্ধ এবং ২২১ টি গবেষণা মনোগ্রাফ রচনা করেছেন।
এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ২৩৪ টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ১০ টি লোকবক্তৃতা এবং স্মারক বক্তৃতাও দিয়েছেন।
প্রকাশনা সমূহ, Publications
ড. আবুল বারকাত মানুষের অধিকারের উপর ভিত্তি করে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট মৌলিক গবেষণা সংক্রান্ত বিশেষ কিছু গ্রন্থ প্রনয়ন করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
● Development as Concientization (ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় প্রকাশিত (২০০৮), (২০১০)
● Deprivation of Hindu Minority in Bangladesh: Living with Vested Property (ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় প্রকাশিত ২০০৮,২০০৯)
● Political Economy of Land Litigation in Bangladesh: A Case of Colossal National Wastage (ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় প্রকাশিত ২০০৪, ২০০৬)
● Charland in Bangladesh: Political Economy of Ignored Resources (২০০৭)
● Political Economy of Khas Land in Bangladesh (ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় প্রকাশিত ২০০১, ২০০৯)
● Economics of Fundamentalism in Bangladesh (২০০৫, ২০০৮, ২০১২, ২০১৩)
● An Inquiry into Causes and Consequences of Deprivation of Hindu Minorities in Bangladesh through the Vested Property Act: Framework for a Realistic Solution (২০০০)
● Life and Land of Adibashis: Land Dispossession and Alienation of Adibashis in the Plain Districts of Bangladesh (২০০৯)
● Social Protection Measures in Bangladesh: As Means to Improve Child Well-being (২০১১)
● Political Economy of Madrassa Education in Bangladesh: Genesis, Growth, and Impact (২০১১)
● Poverty disparity inequality in Bangladesh: In search of a Unified Political Economic Theory (২০১৪)
এছাড়াও অধ্যাপক বারকাত বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। বিষয়গুলি হল: দুর্ভিক্ষ এবং জনসংখ্যাগত বিস্ফোরণ; বিশ্বায়ন, বৈদেশিক সাহায্য এবং মানব উন্নয়ন সংযোগ; ভূমি-কৃষি-কুম্ভ সংস্কার; সামাজিক পরিবর্তন; বিশ্বব্যাপী সমস্যা; পানীয় জলে আর্সেনিক বিষক্রিয়ার অর্থনৈতিক পরিণতি; বাংলাদেশে কালো টাকা; মানুষের বঞ্চনা ও উন্নয়ন; বাংলাদেশে আত্ম-কর্মসংস্থান; বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণ ও প্রভাব; যুবক ও কিশোরদের মধ্যে দারিদ্র্য; সংবিধান এবং উন্নয়ন ইত্যাদি।
তিনি তাঁর লেখায় ও চিন্তাধারায় সবসময় নিজের স্বাধীন সত্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন । সমাজ, অর্থনীতি তথা রাজনীতি বিষয়ে তাঁর অমূল্য গবেষণাগ্রন্থ, প্রবন্ধ, মনোগ্রাফ, অভিসন্দর্ভ, লোকবক্তৃতা – সবকিছু মিলিয়ে অনেক লেখা প্রকাশিত করা হয়েছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তি, Awards and recognition
কর্মজীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের কৃতিত্ব হিসেবে ড. আবুল বারকাত বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
● ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক, (১৯৯৯-২০০০) এবং (২০০৪-২০০৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
● মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক সম্মাননা, (২০০৮)
● ‘মুজিব স্বর্ণপদক’, ২০২১, (অর্থনীতিশাস্ত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রদত্ত)
উপসংহার, Conclusion
সমাজ বিশ্লেষক ড. আবুল বারকাত বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যকলাপের দ্বারা “গণমানুষের অর্থনীতিবিদ” হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন । অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগের পরিবেশ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ, মানব উন্নয়ন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ এবং দারিদ্র্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অধ্যাপক বারকাতকে অন্যতম খ্যাতিমান রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ছিলেন মৌলবাদের অর্থনীতি উদ্ঘাটনের পথপ্রদর্শক।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগে তাঁর অসীম অবদানের জন্য তিনি প্রচুর সম্মান লাভ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অনন্য স্থানের অধিকারী হয়ে থাকবেন।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
ড. আবুল বারকাত কে?
অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অর্থনীতি বিভাগের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
আবুল বারকাত কবে জন্মগ্রহন করেন?
১৯৫৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।
কর্মক্ষেত্রে কি কি পুরস্কার লাভ করেছিলেন অধ্যাপক আবুল বারকাত?
ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক, (১৯৯৯-২০০০) এবং (২০০৪-২০০৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় -মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক সম্মাননা, (২০০৮) -‘মুজিব স্বর্ণপদক’, ২০২১, (অর্থনীতিশাস্ত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রদত্ত)
- Related topics -
- জীবন ও জীবনী
- abul barkat
- অর্থনীতিবিদ