স্বাস্থ্য

উষ্ট্রাসন করার নিয়ম, পদ্ধতি ও বিস্তারিত তথ্য, All details about Ustrasana in bengali

উষ্ট্রাসন করার নিয়ম, পদ্ধতি ও বিস্তারিত তথ্য, All details about Ustrasana in bengali
Key Highlights

শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য বেশ কিছু বিশেষ কৌশল রয়েছে যা রপ্ত করে নিলে আমরা দীর্ঘ দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারি। শরীর আর মনের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে আমাদের আয়ু অজান্তেই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। শরীরচর্চা বা যোগচর্চা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী, কারণ যোগাসন বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।

সুস্থ থাকতে হলে ‘উষ্ট্রাসন’ যোগ অভ্যাস করা জরুরি, Ustrasana benefits

নিয়মিত যোগাসন অভ্যাস আমাদের পেটের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, যকৃৎ- এর কার্যক্রম সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে, যার ফলে আমাদের হজমশক্তি উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য তথা অন্যান্য সমস্যা দূর হয়।

তাছাড়া রক্তচাপের সমস্যা দূর করতে যোগাসনের বিকল্প নেই বললেই চলে, কারণ যোগ ব্যায়াম আমাদের শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, যার প্রভাবে দেহের অভ্যন্তরীণ শক্তি প্রবাহের মাত্রা বেড়ে ওঠে এবং এর ফল স্বরূপ আমরা আরো কর্ম–উদ্যমী হয়ে উঠি।

আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কার্যকরী এমনই একটি আসন হল উষ্ট্রাসন; এই আসন করতে গেলে দেহের মধ্যভাগ উঁচু করে রাখার ফলে অনেকটা উটের দেহের ভঙ্গির মতো দেখতে হয় বলে একে উষ্ট্রাসন বলা হয়। 

‘উষ্ট্রাসন’ যোগ অভ্যাস করার নিয়ম ও পদ্ধতি ধাপে ধাপে নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে, Ustrasana explained  step by step

‘উষ্ট্রাসন’ ব্যায়ামটি অভ্যাস করার জন্য যে নিয়ম মেনে চলতে হবে তা হল:

Also read :

- প্রথমে বজ্রাসন ভঙ্গিতে বসে পড়ুন। এইভাবে দুই হাঁটু ভেঙে নিয়ে, পায়ের পাতা মুড়ে নিয়ে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে শিরদাঁড়া সোজা রেখে দাঁড়াতে হবে।
- আপনার পায়ের পাতা থেকে হাঁটু অবধি পায়ের নিম্নাংশটি মাটির সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।
- এবার আপনার দু’হাতের সাহায্যে দু’পায়ের গোড়ালি অথবা গোড়ালির ঠিক উপরের অংশটি ধরুন।
- এখন আপনার বুক ও পেট কে একসাথে যতটা সম্ভব উপরদিকে নিয়ে গিয়ে মাথা কিছুটা পেছনদিকে বেঁকে নিতে হবে যাতে দেহের ভঙ্গি ধনুকের মতো হয়।
- এই আসন করার সময় চোখ দুটো থাকবে ছাদের দিকে|
- সে সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং এই অবস্থায় ২০ সেকেন্ড থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হবে।
- তারপর আপনার হাত এবং শরীর আলগা করে নিয়ে আস্তে আস্তে পূর্বাবস্থায় এসে ফের হাঁটুর উপর দাঁড়িয়ে পড়ুন।
- এইভাবে আসনটি দিনে ২ থেকে ৩ বার করতে পারেন এবং আসন শেষে প্রয়োজনমতো শবাসন ভঙ্গিতে বিশ্রাম নিন।

উষ্ট্রাসন’ এর ফলে আমাদের দেহে কি কি উপকার হয়, Advantages of doing Ustrasana

- যে সব ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন, তারা যদি প্রতিদিন ভোর বেলায় একগ্লাস জল খেয়ে তারপর উষ্ট্রাসন যোগ করার নিয়মিত অভ্যাস তৈরি করেন তবে বিশেষ উপকার পাওয়া যেতে পারে।

 উষ্ট্রাসন যোগ নিয়মিত অভ্যাস করার ফলে আমাদের পেটে চর্বি জমা হতে পারে না। কোন ব্যক্তির দেহে চর্বি থাকলে এই আসন অভ্যাসের মাধ্যমে তা কমে যায় এবং কোমর ও পেটের আকৃতি সুন্দর-সুশ্রী করে তোলে।

- শরীরে গরম-ঠান্ডা লাগার অর্থাৎ শীত-তাপের সহ্যশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

- আমাদের হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড ও টনসিলের সমস্যা সমাধান করে অঙ্গগুলি সুস্থ এবং সক্রিয় রাখে।
- দেহের এড্রিনাল গ্রন্থিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত চলাচল করার কাজে সহায়তা করার মাধ্যমে তাদের সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।

- আজকাল অনেক মানুষ জয়েন্টের ব্যথায় জর্জরিত। এই আসন অভ্যাস করলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই জয়েন্টের ব্যথা এড়াতে প্রতিদিন উষ্ট্রাসন করা উচিত।

- এই আসন করার ফলে কাঁধ এবং পিঠের ব্যথা কম হতে পারে, এমনকি রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে।

- এসব ছাড়াও আমাদের কিডনি সুস্থ রাখে ব্যায়ামটি। যারা স্লিপ ডিস্কের সমস্যায় আক্রান্ত সেই ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যায়াম দারুণ কাযর্করী হতে পারে।

- এই ব্যায়াম অভ্যাসে মাথায় এবং ঘাড়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যার ফলে জ্ঞানেন্দ্রি়য় সম্বন্ধীয় অঙ্গগুলো উদ্দীপিত হয় এবং সঠিকভাবে কাজ করে। এর প্রভাব স্বরূপ আমাদের চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
- এই আসন অভ্যাস করলে ব্রেইনে রক্ত সরবরাহ সঠিকভাবে হয়, যার ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি উন্নত হবে, পড়াশোনা ও বিভিন্ন কাজকর্মে মনোযোগ বাড়বে।

- ‘উষ্ট্রাসন’ নিয়মিত করলে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, ঘুম কম হওয়ায় সমস্যা, মাথা ব্যথা, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর হয়।

Also read :

- এই আসন ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, লো ব্লাডপ্রেসার ইত্যাদি দৈহিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রেও উপকারী ভূমিকা পালন করে।

‘উষ্ট্রাসন’ করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, Precautions before doing Ustrasana

● আসনটি করার সময় বুকের উপর খুব বেশি চাপ পড়ে থাকে, তাই যদি কেউ হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে তাদের উষ্ট্রাসন করা উচিত নয় এবং উল্লেখ্য রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এ আসন করবেন না।

● কোনো রোগের বা শারীরিক সমস্যার কারণে যাদের পেটে অস্ত্রপচার হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই আসন করার আগে এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে● গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই আসনটি ডাক্তারের পরামর্শ মতো করা উচিত।

● আসনটি অভ্যাস করার সময় ধীরে ধীরে প্রতিটি ধাপ নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে, তাড়াহুড়ো করা উচিত হবে না। তাছাড়া দেহের কোনো অঙ্গে যেন অতিরিক্ত টান বা চাপ না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে|

উপসংহার, Conclusion

‘উষ্ট্রাসন’ যোগ অভ্যাস করার ফলে নানা রকম রোগ সারানো সম্ভব। তাছাড়াও শরীরের মেদ কম করা, ওজন কম করা, দেহের আকৃতি বা গঠন ঠিক করা, শারীরিক শক্তি বাড়িয়ে তোলা, হাড়ের জোড়ার নমনীয়তা বৃদ্ধি ঘটানো ইত্যাদি বিষয়ে এই ব্যায়ামের জুড়ি মেলা ভার।

Also read :