প্রকল্প

WB Muktir Alo | মুক্তির আলো~ নতুন পথের দিশারী

WB Muktir Alo | মুক্তির আলো~ নতুন পথের দিশারী
Key Highlights

মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এক অভিনব প্রকল্প যার নাম 'মুক্তির আলো' কিভাবে সমাজে অন্ধকারে থাকা মহিলাদের সাহায্য করেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ভূমিকা | Introduction of Muktir Alo

পশ্চিমবঙ্গ নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রেরণায় বাস্তবায়িত হয়েছে এক অভিনব প্রকল্প যার নাম 'মুক্তির আলো'। বিভিন্ন কারণে অনেক অল্পবয়সি মেয়েদেরর স্থান হয় যৌনপল্লিতে। বহু ক্ষেত্রে তারা অন্য রাজ্যে বা দেশে পাচার হয়ে যায়। সব চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হল এই যে, উদ্ধারের পরেও তাদের পরিবারে বা সমাজে আর ঠাঁই মেলে না। সেই সব যৌনকর্মীদের উদ্দেশ্যে তৈরি এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করা হবে। আর্থিক সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার যাতে তারা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা শুরু করতে পারে। এই প্রকল্পের আওতায় যারা রয়েছেন তাদের অভিনয়ের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে থাকে ক্ষেত্রবিশেষে। এক কথা বলা যেতে পারে যে যৌনকর্মীদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে মুক্তির আলো প্রকল্পের মাধ্যমে ।

মুক্তির আলো প্রকল্পটির শুভারম্ভ | Launch of Muktir Alo

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুক্তির আলো প্রকল্পের নামকরণ ও শুভ সূচনা করেন গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালে। যৌনপল্লিতে ঠাঁই পেয়েছে এমন ভাগ্য বিতাড়িত মেয়েদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘মুক্তির আলো।

মুক্তির আলো প্রকল্পের উদ্দেশ্য কি? | Purpose of Muktir Alo

  1. ভাগ্যের তাড়নায় এবং বিভিন্ন কারণবশত অনেক অসহায় এবং অল্পবয়সি মেয়ে যাদের স্থান হয় যৌনপল্লিতে অর্থাৎ রেডলাইট এরিয়াতে তাদের অন্য রাজ্যে বা দেশে পাচার করা প্রতিরোধ করতে এবং সরকারি উদ্যোগে ও সম্পূর্ণ আর্থিক অনুদানে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের ও এই দুর্ভাগা নারী ও বালিকাদের পুনরুদ্ধারের পর কাউন্সেলিং এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করাই হলই প্রকল্পটির মুখ্য উদ্দেশ্য ।
  2. মুক্তির আলো প্রকল্পের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হল এই প্রকল্পটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য । 
  3. দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর মধ্যে যাঁরা এই পেশাটি ছেড়ে দিতে চান তাঁদের এবং যাঁরা পাচার হয়ে আসার ফলে এই পেশাটির সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের রোজগারের অন্য ব্যবস্থা করার মতন এক বলিষ্ঠ উদ্যোগের লক্ষ্য পূরণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রকল্পটি । 

এককথায় বলা যেতে পারে পাচার হওয়া নারী বা বিভিন্নভাবে নির্যাতিতদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই এই প্রকল্পের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য ।

মুক্তির আলো প্রকল্পের সুবিধা সমূহ | Benefits of Muktir Alo

  1. মুক্তির আলো প্রকল্প যোজনার অধীনে এই প্রথম সরকার উদ্যোগে নিয়ে সম্পূর্ণ আর্থিক অনুদান প্রদান করেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে যৌনকর্মীদের ও দুর্ভাগা নারী ও বালিকাদের পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
  2. যৌনকর্মীদের পুনরুদ্ধার করার পর তাদের কাউন্সেলিং এবং নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং তাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করার প্রচেষ্টা নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে মুক্তির আলো প্রকল্পের মাধ্যমে ।
  3. মুক্তির আলো প্রকল্পটির মাধ্যমে যৌনকর্মীদের ৯ মাসের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে; মাসিক স্টাইপেণ্ড দেওয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তারা যদি কোন ব্যবসা শুরু করতে কিছুক্ষণ সেক্ষেত্রে তাদের ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
  4. এই প্রকল্পের আওতায় যৌনকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাদের থাকা-খাওয়া, কাউন্সেলিং-এর বন্দোবস্ত করার সাথে সাথে মাসিক ভাতারও সু ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
  5. প্রকল্পের আওতায় যেসব যৌনকর্মীরা আছেন তাঁরা যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন তবে প্রশিক্ষণ শেষে ইচ্ছুক শিক্ষানবিশদের স্বাবলম্বনের জন্য সরকার থেকে এই প্রকল্প থেকে এককালীন মূলধনও দেওয়া হয়ে থাকে।
  6. ‘মুক্তির আলো’ প্রকল্পে ব্লক প্রিন্টিং ও স্পাইস গ্রাইন্ডিং-এর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং ‘ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘টায়ার টিউবের পুনর্ব্যবহার’-এর উপর ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে ।

মুক্তির আলো প্রকল্পে কারা প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন | Eligibility for Muktir Alo scheme

নারী পাচারের শিকার দুর্ভাগা মহিলারা ও বালিকারা, যৌনকর্মী এবং তাঁদের কন্যাসন্তানগণ~ এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ দিতে কারা আবেদন করতে পারবেন

যৌন এলাকায় কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এমন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এই পরিষেবা দিতে আগ্রহী।

কোথায় করতে হবে যোগাযোগ | Contact for Muktir Alo 

মুক্তির আলো প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং যোগাযোগ করতে নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তর-এর অধীনস্থ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ নারী উন্নয়ন নিগমের দ্বারস্থ হতে হবে । ঠিকানা :- নির্মাণ ভবন, লবণ হ্রদ, কলকাতা–৯১

প্রকল্পের বাস্তবায়ন | Implementation of Muktir Alo

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ২০১৬ সালে শুরু হওয়া 'মুক্তির আলো' প্রকল্প থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭৫ জন যৌনকর্মী উপকৃত হয়েছেন ।স্বনির্ভর করার উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তির আলো প্রকল্পে ইতিমধ্যে ব্লক প্রিন্টিং ও স্পাইস গ্রাইন্ডিং-এর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যৌনকর্মীদের এবং পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুসারে ‘ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘টায়ার টিউবের পুনর্ব্যবহার’-এর উপর কর্মীরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন । মুক্তির আলো প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে ক্যাফেটেরিয়া খুলেছেন এক পাহাড়ি কন্যা। আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রবেশের ঠিক সামনেই খোলা হয়েছে এই ক্যাফেটেরিয়া যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তি’।এছাড়াও মুক্তির আলো প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৫০ জনকে মশলা তৈরি ও ব্লক প্রিন্টিং এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মুক্তির আলো – ২ প্রকল্পের আওতায় আরও ২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের সময় তাদের ২৫০০ টাকা স্টাইপেন্ড ও প্রদান করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। বাসস্থানের ব্যবস্থা অর্থাৎ থাকা ও পরিবহনের সমস্ত খরচ দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এসব ভাগ্য বিতাড়িত মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ২৫ হাজার টাকা নিয়ে স্টার্ট আপ ব্যবসা চালু করার জন্য সাহায্যও করেছে রাজ্য সরকার। খিদিরপুরের মুনশিগঞ্জ ও আলিপুর আদালত চত্বরেও নির্মাণ করা হয়েছে সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া মেয়েদের ক্যাফেটেরিয়া। শীঘ্রই বিকাশ ভবনেও হবে এই ক্যাফেটেরিয়া ;যে ছয়টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছিল, তাদের মধ্যে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবেদন গৃহীত হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।

আরটিআই থেকে এই তথ্য জানা গেছে যে, উওমেন ইন্টালিঙ্ক ফাউন্ডেশন এবং ডিভাইন স্ক্রিপ্ট নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই প্রকল্প থেকে সুবিধা পাওয়া যথাক্রমে ৫০ জন এবং ২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রথম সংস্থাটির জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ৩১ লক্ষ ৪৯ হাজার ২৬০ টাকা। দ্বিতীয় সংস্থাটির জন্য এই অঙ্কটি হল, ২৪ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা যা নিতান্তই কম নয় ।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এই তথ্যটিও জানানো হয়েছে যে উপরোক্ত দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই তাদের জন্য বরাদ্দ অর্থের যথাযোগ্য ব্যবহার করেছে যেখানে এক-একজনের জন্য মাথাপিছু খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত । 

শেষ কথা | Ultimatum of Muktir Alo

মুক্তির আলো প্রকল্পটি মূলত যৌনকর্মীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে রূপায়িত এক প্রকল্প আর তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা ও পুনর্বাসনের দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি মোটেই খুব সহজ বিষয় নয়। তাই, সংখ্যার ওপর কেবলমাত্র নজর না দিয়ে ,এ- ব্যাপার টি বিবেচনা করা প্রয়োজন, যদি পিছিয়ে পড়া এবং অবহেলিত একটি মহিলাকেও আমরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারি, তবে সেটাও একটা বড় সাফল্য।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

মুক্তির আলো প্রকল্পটির শুভারম্ভ কবে হয় ?

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুক্তির আলো প্রকল্পের নামকরণ ও শুভ সূচনা করেন গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।

মুক্তির আলো প্রকল্পে কারা প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন ?

নারী পাচারের শিকার দুর্ভাগা মহিলা ও বালিকারা, যৌনকর্মী এবং তাঁদের কন্যাসন্তানগণ~ এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

মুক্তির আলো প্রকল্পে কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে ?

‘মুক্তির আলো’ প্রকল্পে ব্লক প্রিন্টিং ও স্পাইস গ্রাইন্ডিং-এর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং ‘ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘টায়ার টিউবের পুনর্ব্যবহার’-এর উপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।

মুক্তির আলো প্রকল্পটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কোথায় করতে হবে যোগাযোগ ?

মুক্তির আলো প্রকল্পের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং যোগাযোগ করতে নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তর-এর অধীনস্থ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ নারী উন্নয়ন নিগমের দ্বারস্থ হতে হবে । ঠিকানা :- নির্মাণ ভবন, লবণ হ্রদ, কলকাতা–৯১