Adenovirus | কলকাতায় শিশুদের মধ্যে বাড়ছে অ্যাডেনোভাইরাস! জানুন কীভাবে রক্ষা করবেন আপনার খুদেকে!
বর্ষাকালে শহরের হাসপাতালে আসা বহু শিশুর মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে অ্যাডেনোভাইরাসের স্ট্রেন। বর্ষার মরশুমে আপনার সন্তানকে এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মানতে হবে বিশেষ সাবধানতা।
বর্ষাকালে এমনিতেই জ্বর, সর্দি-কাশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলে বড়রাই ভোগেন ঠান্ডা লাগাতে। এই মরশুমে ছোটদের ভোগান্তি আরও বেশি। তবে এরই মধ্যে আরও চিন্তা বাড়াচ্ছে আরেক রোগ। শহর কলকাতার (Kolkata) হাসপাতালগুলি থেকে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ফের শিশুদের মধ্যে ছড়াচ্ছে অ্যাডেনোভাইরাসের (Adenovirus) সংক্রমণ। একাধিক হাসপাতালেই এই সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন একাধিক শিশু।
জানা গিয়েছে, কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের আউটডোরে জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ নিয়ে আসা অধিকাংশ শিশুর শরীরেই অ্যাডেনোভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া গেছে। আগেও শিশুদের মধ্যে এই সংক্রমণ মাথাচারা দিয়েছিলো। তবে বর্ষাকালে এই সংক্রমণের দাপট বেশিই বাড়তে চলেছে বলে জানালেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই ভাইরাস মূলত সর্দি-কাশির জন্য দায়ী, কিন্তু এখন করোনার মতোই রূপ বদলে আরও বেশি সংক্রামক ও ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
অ্যাডেনোভাইরাস কী? । What is Adenovirus?
অ্যাডেনোভাইরাস হল ভাইরাসের একটি গ্রুপ যা বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বর্তমানে, ৫০ টিরও বেশি প্রকারের অ্যাডেনোভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। এই ধরণের ভাইরাস প্রধানত চোখের আস্তরণ, শ্বাসনালী, ফুসফুস, অন্ত্র, মূত্রনালী এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সংক্রামিত করে। এগুলি জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, ডায়রিয়ার সাধারণ কারণ। উল্লেখ্য, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে অ্যাডেনোভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হয়। এই সংক্রমণ হলে শরীরে হালকা উপসর্গ দেখা যায় এবং চিকিৎসার পর কয়েক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। তবে অ্যাডেনোভাইরাস ইমিউন সিস্টেমকে (Immunity System) দুর্বল করে দেয়, যা বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক পর্যায়ে যেতে পারে।
অ্যাডেনোভাইরাসের উপসর্গ । Adenovirus Symptoms :
চিকিৎসকদের মতে, যে শিশুদের বয়স দু’বছরের কম, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকেব। এক বছরের কম বয়স হলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি। ফলে কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বড়দের কারও জ্বর-সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে অবশ্যই বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, বড়দের থেকেই এই সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে ছড়ায়। অ্যাডেনোভাইরাস হলে যে সব সংক্রমণ দেখা যায় তা কিছুটা নিম্নরূপ।
- ১. অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের প্রচন্ড জ্বর হয়, যা বেশ কয়েকদিন স্থায়ী থাকে।
- ২. শিশুরা এই সংক্রমণে সংক্রমিত হলে ক্রমাগত নাক থেকে জল পড়তে পারে। পাশাপাশি কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে কানের সমস্যা যেমন ব্যথা হওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
- ৩. কিছু শিশুর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ যেমন ব্রঙ্কিওলাইটিস (Bronchiolitis) বা নিউমোনিয়া (Pneumonia) হতে পারে। পাশাপাশি গলা ব্যথাও আরেকটি সাধারণ উপসর্গ।
- ৪. অ্যাডেনোভাইরাসের কিছু স্ট্রেন পাকস্থলী এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে (Gastrointestinal Tract ) সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর ফলে ডায়রিয়া (Diarrhea), পেট ফাঁপা এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের (Gastroenteritis) অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- ৫. অনেক সময় এই ভাইরাস মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যার ফলে প্রস্রাবের সময় বেদনাদায়ক ব্যথা এবং রক্ত বেরোতে পারে।
- ৬. দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বুক ধড়ফড় করা, এই সংক্রমণের আরেক লক্ষণ।
উল্লেখ্য, যেসব শিশুর ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে অ্যাডেনোভাইরাস গুরুতর এবং অপ্রতিরোধ্য সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
অ্যাডেনোভাইরাস থেকে কীভাবে সতর্ক থাকবেন । How to Protect from Adenovirus :
অ্যাডেনোভাইরাস যেকোনো ঋতুতেই হতে পারে। কিন্তু বর্ষাকালে এই সংক্রমণ বেশি বৃদ্ধি পায়। আর যেহেতু এই সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই আপনার শিশুকে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- ১. এই ভাইরাস ড্রপলেট (Droplets) বা নাক-মুখ থেকে বেরোনো জলকণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাই মাস্ক পরা খুবই জরুরি।
- ২. মাস্কের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের (Hand Sanitizer ) ব্যবহার, ভিড় এড়িয়ে চলা এগুলোও মানতে হবে।
- ৩. বারে বারে হাত ধুতে হবে। বিশেষত বাইরে থেকে এলে হাত ভাল করে ধুয়ে, স্যানিটাইজ করতে হবে।
- ৪. কারুর ঠান্ডা লাগলে অর্থাৎ জ্বর, সর্দি, কাশি হলে তার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
অ্যাডেনোভাইরাসের প্রতিকার । Remedy for Adenovirus :
- অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণের কোন প্রতিকার নেই। যদি কোনও শিশু এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তাহলে সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত উপসর্গগুলির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়।
- অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে যদি শ্বাসযন্ত্রের ওপর বেশি প্রভাব পরে তাহলে সে ক্ষেত্রে শিশুকে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ান। খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার সন্তান হাইড্রেটেড (Hydrated) থাকে। প্রয়োজনে ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolytes) খাওয়াতে পারেন।
- আপনার সন্তানের শ্বাসনালী খোলার জন্য ব্রঙ্কোডাইলেটর (Bronchodilators) ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলি প্রায়শই একটি মাস্ক দ্বারা বা ইনহেলারের (Inhaler) মাধ্যমে একটি অ্যারোসল মিস্টে (Aerosol Mist) পরিচালিত হয়।
- অ্যাডেনোভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর অনেক শিশুই খুবই অসুস্থ হয়ে পরে। যার ফলে বেশ কিছু সময়ের জন্য শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে। ফলে এই ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করার জন্য যান্ত্রিক বায়ুচলাচল বা শ্বাসযন্ত্রের প্রয়োজন হতে পারে।
- অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে যদি অন্ত্রের সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে ওরাল রিহাইড্রেশন (Oral Rehydration) গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, অ্যাডেনোভাইরাস যেকোনো ঋতুতেই আক্রমণ করতে পারে আপনার শিশুকে। কেবল শিশুদেরই নয় বড়োদেরও এই ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে। তবে ছোটদেরই এই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, বিশেষত ১০ বছরের কম শিশুদের। এছাড়াও বর্ষাকালে এই সংক্রমণ বেশি বৃদ্ধি পিকে জ্বর, সর্দি , কাশি থেকে। ফলে যদি সময়ে বিশেষ সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- শিশু
- শহর কলকাতা
- বর্ষাকাল
- শরীর সুস্থতা