স্বাস্থ্য

অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ও প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত, A detailed study about anxiety disorder and panic attack in bengali

অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ও প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত, A detailed study about anxiety disorder and panic attack in bengali
Key Highlights

অত্যাতঙ্ক আক্রমণ হল একপ্রকার ভয়ের তরঙ্গ যা অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে জন্ম নিয়ে থাকে এবং এই সমস্যা একজন মানুষকে ভয়ের অতিশায্যে নিয়ে চলে যায়। কোনোও আগাম বার্তা বা উপসর্গ ছাড়াই এটি যেকোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।

অত্যাতঙ্ক আক্রমণ বা প্যানিক অ্যাটাক কী ? What is anxiety disorder and panic attack

এই সমস্যার কোনোও পরিষ্কার কারণ এখনও জানা যায়নি। এমনকি একজন বিশ্রামায়িত অথবা ঘুমন্ত মানুষের মধ্যেও হঠাৎ করে এই ভয়ের তরঙ্গটি আক্রমণ করতে পারে।
যেমন-  এমন কোনোও ঘটনা যা কোন ব্যক্তিকে পূর্বে বিপদে ফেলেছিল এবং তখন সে সেই বিপদ থেকে বের হতে পারেনি, এমন অবস্থায় বা একই স্থানে পুনরায় এসে পড়লে অত্যাতঙ্ক আক্রমণ ঘটতে পারে।

প্যানিক অ্যাটাক এর লক্ষণগুলো, Symptoms of panic attack

Also read :

● এক্ষেত্রে কোনোও আগাম বার্তা ছাড়াই বা পূর্ব কোন লক্ষণ প্রকাশ না করে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ভয় ব্যক্তির মনকে গ্রাস করে ফেলে। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশ হয়ে থাকে।
● প্যানিক অ্যাটাক হলে খুব দ্রুত গতিতে হৃদ স্পন্দন হতে থাকে। স্নায়বিক কিছু কারনে অ্যামিগডালা সক্রিয় হয়ে যায় এবং এর ফলে হৃদ স্পন্দন বৃদ্ধি পায়।

অ্যামিগডালা হল আমাদের মস্তিষ্কের সেই অংশ যা কোনো ঘটনায় আকস্মিক প্রতিক্রিয়া কিংবা ভয় এর প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকে। এমন সময় অনেকের অনুভব হয় যেন তার হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।
● প্যানিক অ্যাটাক হলে বুকে ব্যাথা অনুভব হয়। এরূপ অনুভুতিকে অনেকে হার্ট অ্যাটাকের সাথে গুলিয়ে ফেলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্যানিক অ্যাটাক সনাক্ত করার উপায় হচ্ছে বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভব করা, যেখানে হার্ট অ্যাটাক হলে সাধারনত বুকের বাম পাশে ব্যাথা করে।

● হঠাৎ করেই শরীর গরম হয়ে যাওয়া অথবা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যা। প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত ৫-১০ মিনিট স্থায়ী হয় কিন্তু সেই সময় শরীর ঠান্ডা বা গরম হয়ে যাওয়ার অনুভূতিটা প্রায় ঘন্টা খানেক থাকতে পারে।
● প্রচন্ড ঘাম হয় এবং শরীর কাঁপতে থাকে। এমন সময় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে অনেক দুর্বল অনুভব করে।
● এমন সমস্যায় অনেক ক্ষেত্রে শ্বাস কষ্ট হতে পারে, কারণ প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার ফলে শরীরে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়। তখন মানুষ দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নিতে থাকে কারণ মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।
● আক্রান্ত ব্যক্তির এরকম অনুভব হতে থাকে যেন সে হয়তো মারা যাচ্ছে। মানুষের অবচেতন মনের গভীরে থাকা ভয়ের বিষয়গুলো এই সময় মনে হানা দেয় যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুভয় গ্রাস করে।
● এছাড়াও এমন অনুভব হতে পারে যেন  ব্যক্তি নিজের মানসিক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলছে। মস্তিষ্ক অসামাঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করতে শুরু করে দেয়। একসময় মনে হয় দৌড়াতে আবার হঠাৎ মনে হচ্ছে স্থির থাকতে।

অ্যাংজাইটি অ্যাটাক কী ? What is anxiety attack or anxiety disorder

অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, প্যানিক অ্যাটাকের থেকে বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা হয়। অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের ক্ষেত্রে কোনো এক উদ্দীপকের প্রভাব থাকে। কোনও উদ্দীপকের দরুন একজন ব্যক্তি এরূপ অ্যাটাকের সম্মুখীন হতে পারে। এছাড়াও এই ধরনের অ্যাটাকের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বেশ কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন অবধি স্থায়ী হতে পারে।

অ্যাংজাইটি অ্যাটাক এর লক্ষণগুলো : Symptoms of anxiety disorder

● খুব সহজেই ভয় পাওয়া অথবা চমকে ওঠা।
● হঠাৎ করে বুকে ব্যথা অনুভব হওয়া।
● মাথা ঘোরার সমস্যা।
● অল্প কোন কাজ করতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া।
● একটু পর পর মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
● হঠাৎ খুব দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া।
● শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
● হঠাৎ করে পেশিতে ব্যথা অনুভব হওয়া।
● অকারণে চিন্তিত বোধ করা।
● দম বন্ধ লাগতে শুরু হয়।

প্যানিক অ্যাটাক ও অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের মধ্যে  পার্থক্য : difference between anxiety disorder and panic attack

প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের মধ্যে কিছু পার্থক্য সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন, যাতে  আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

১) প্যানিক অ্যাটাক কোনও আগাম বার্তা না দিয়ে হঠাৎ করেই আসতে পারে তবে অন্য দিকে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক কোনও পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে হতে পারে।

Also read :

২) প্যানিক অ্যাটাক এর বেশিরভাগ লক্ষণই একটু আতঙ্কজনক হয়ে থাকে, যেমন- এক্ষুনি মারা যাবে এমন অনুভুতি আসে। অন্যদিকে অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী লক্ষণগুলোর কম বেশি হওয়ার প্রবলতা লক্ষ্য করা যায়।

৩) কোনো ব্যক্তির প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ করেই হয়ে থাকে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা মেনে হয় না, কিন্তু অন্যদিকে অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি কোনো কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তত থাকলেও ঘন ঘন হতে পারে।

৪) প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত কয়েক মিনিটের জন্য হতে পারে কিন্তু অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বেশ কিছু সময় ধরেই স্থায়ী থাকে।

অ্যাংজাইটি অ্যাটাক হলে কী করবেন? Steps to control anxiety disorder and panic attack

● অ্যাটাক হওয়ার পরে পরিস্থিতি কী হচ্ছে সে ব্যাপারে সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্যানিক কিংবা  অ্যাংজাইটি অ্যাটাক এর লক্ষণগুলো মাথায় রাখতে হবে এবং বুঝে নিতে হবে আপনার আসলে কোন সমস্যাটি হয়েছে। অন্য কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে থাকলে আস্তে আস্তে ভয় কেটে যাবে ।

● আস্তে আস্তে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এরকম অ্যাটাক হলে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে তাই শান্তভাবে আস্তে আস্তে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য সহজ পদ্ধতি হল, প্রত্যেক শ্বাস নেয়ার সময় ১-৪ অবধি গুনুন।
● অ্যাটাকের পর শিথিলকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগেই জেনে রাখতে হবে, কারণ অ্যাটাকের পর এই শিথিলকরণ পদ্ধতি আক্রান্তকে সাহায্য করবে। অনলাইনে এ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও-অডিও পাওয়া যায়।
● অ্যাংজাইটি অ্যাটাক যাদের হয় তাদের মন একাগ্র রাখার জন্যে ম্যাডিটেশনের মাইন্ডফুলনেশ পদ্ধতি বেশ কার্যকরী।

প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি অ্যাটাক থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়, How to get relief from anxiety disorder and panic attack

● দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

● অ্যাটাক এর জন্য দায়ী উদ্দীপকের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

● নিত্যদিন মেডিটেশন, যোগা প্রভৃতি নিয়ম করে করার চেষ্টা করতে হবে।

● মনে আনন্দ জোগানোর জন্য কিছু না কিছু করার উদ্দেশ্যে রোজ সময় বের করা।

● পছন্দমত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রাখা।

Also read :

উপসংহার, Conclusion

প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের মত সমস্যার যথাযথ চিকিৎসা করা না হলে এটি প্যানিক ডিসর্ডার এবং অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের দিকে ধাবিত হয় এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে কোন ব্যক্তির দেহের সাধারণ কার্যাবলিও থমকে যেতে পারে। তবে দ্রুত চিকিৎসার দ্বারা সমস্যাগুলি দূর হয়ে যেতে পারে অথবা অ্যাটাকের প্রকোপ কম করা যেতে পারে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তি পুনরায় সাধারণ জীবনযাপনও করতে পারেন।