স্বাস্থ্য

Brain Eating Amoeba | পুকুরে স্নানের পর মস্তিষ্কে অ্যামিবার সংক্রমণ! প্রাণঘাতী রোগের নেই চিকিৎসাও!

Brain Eating Amoeba | পুকুরে স্নানের পর মস্তিষ্কে অ্যামিবার সংক্রমণ! প্রাণঘাতী রোগের নেই চিকিৎসাও!
Key Highlights

কেরালায় পুকুরে স্নান করার পর ১৫ বছরের নাবালকের মৃত্যু হয় মস্তিষ্কে অ্যামিবার সংক্রমণের কারণে। এই সংক্রমণ বাড়ছে কলকাতাতেও। সংক্রমণের জন্য নোংরা পুকুরকে দুষছেন চিকিৎসকরা। জানুন এই রোগ থেকে বাঁচতে কী করবেন, কী করবেন না।

 শহর এবং শহরতলি অঞ্চলে সাঁতার শেখার জন্য নানান নামি-দামি সুইমিং ইনস্টিটিউট থাকলেও, অধিকাংশের ছেলেবেলাই কেটেছে পুকুরের জলে সাঁতার কেটে। এমনকি এখনও পুকুর দেখলেই অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। এতে ক্ষণিকের জন্য শারীরিক এবং মানসিক স্বস্তি মিললেও সারা জীবনের জন্য হতে পারে ক্ষতি। এমনকি যেতে পারে প্রাণও! হ্যাঁ! পুকুরের জল কেড়ে নিতে প্রাণ! এক্ষেত্রে সাঁতারে দক্ষ হলেও লাভ নেই। কারণ পুকুরের জলেই রয়েছে প্রাণঘাতী অ্যামিবা (Amoeba)। যা জলের মধ্যে দিয়ে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে ছড়ায় সংক্রমণ এবং তাতে মৃত্যু নিশ্চিত!

সম্প্রতি, কেরালার আলাপ্পুজা (Alappuzha,Kerala) জেলার এক ১৫ বছরের কিশোর বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করার পর প্রবল জ্বর এবং শারীরিক অসুস্থতায় ভোগে। সময়ের সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে। এমনকি কয়েকদিন পর তার মৃত্যুও হয়। এরপর জানা যায়, এককোষী অ্যামিবার সংক্রমণে ওই নাবালকের শরীরে মেনিঙ্গো-এনকেফালাইটিস (Meningoencephalitis) হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কে প্রাণঘাতী সংক্রমণ। কেরালায় বছর পনেরোর ওই কিশোরের মৃত্যুর পর সেই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ (Veena George) জানান, জল থেকে হওয়া এই সংক্রমণের নাম প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিঙ্গো-এনকেফালাইটিস (Primary Amoebic Meningoencephalitis)। যা নেগেলেরিয়া ফাওলেরি (Naegleria Fowleri) নামক অ্যামিবা ঘটিত এক রোগ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই প্রাণঘাতী অ্যামিবা লবণাক্ত জলে বাঁচতে পারেনা। ফলে সমুদ্রের জলে এই অ্যামিবা থাকেনা, বরং এটি হ্রদ এবং নদীতে থাকে। কেরালার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, এই অসুখের কবলে যারা পড়ে, তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ১০০ শতাংশ। এই অসুখে গত কয়েক বছরে সেখানে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেবল কেরালাতেই নয়, এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক কলকাতাবাসীও। যদিও কলকাতায় এই একই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পর সম্প্রতি চার রোগীর মৃত্যু হলেও দুই রোগী বেঁচে গিয়েছেন। কলকাতার (Kolkata) চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনাকালের (Corona Period) পর এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগের চেয়ে বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। তবে এর নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে তা জানা যায়নি। তবে অপরিষ্কার পুকুরের জলকেই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

নেগেলেরিয়া ফাওলেরি কী? । What is Naegleria Fowleri?

নেগেলেরিয়া ফাওলেরি, সাধারণত "মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা" নামে পরিচিত। এটি একটি একক কোষের জীব যা একটি উষ্ণ মিষ্টি জলের পরিবেশ যেমন হ্রদ, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং এমনকি খারাপভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা অর্থাৎ নোংড়া সুইমিং পুলে পাওয়া যায়। এই অ্যামিবা এতটাই ছোট যে এটি শুধুমাত্র একটি মাইক্রোস্কোপ (Microscope) দিয়ে দেখা যায়।

জলের মাধ্যমে এই অ্যামিবা নাক দিয়ে শরীরে, বিশেষত মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। একবার মস্তিষ্কে প্রবেশ করার পর এই অ্যামিবা গুরুতর সংক্রমণের সৃষ্টি করে। যা প্রাথমিক অ্যামেবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস (Primary Amebic Meningoencephalitis) বা প্যাম  (PAM) নামে পরিচিত। এই জীবাণু ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভাল বৃদ্ধি পায়। যার ফলে গ্রীস্মকালে নোংড়া জলাশয়গুলি অ্যামিবার বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।

কীভাবে এই অ্যামিবা মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে? । How Does This Amoeba Spread in the Human Body?

এটি সাধারণত অনুনাসিক পথ অর্থাৎ নাক, মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। শরীরে প্রবেশ করার পরেই এটি মস্তিষ্কের টিস্যুগুলির মারাত্মক প্রদাহ এবং ধ্বংসের কারণ হয়ে ওঠে। তবে নেগেলেরিয়া ফাওলেরি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায় না। এই অ্যামিবা গরমকালে জলাশয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, বিশেষত জুলাই এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

কাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি? । Who is More At Risk?

নেগেলেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, এই রোগ খুবই বিরল। এই অ্যামিবা মস্তিষ্কে প্রবেশ করলেই প্রাথমিক অ্যামেবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস (PAM) নামে একটি গুরুতর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন, তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যাদের সাইনাসের (Sinus) মতো শারীরিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে বা যারা প্রায়ই পুকুরে স্নান করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রাণঘাতী অ্যামিবায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

নেগেলেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণের লক্ষণ । Symptoms of Naegleria Fowleri Infection :

 প্রাথমিক অ্যামিবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিসে আক্রান্ত হলে বা নেগেলেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণ হলে লক্ষনগুলি সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রচন্ড মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, বমি, ঘাড় ব্যথা, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি এবং হ্যালুসিনেশন (Hallucinations) হতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী কোমায় (Coma) চলে যেতে পারে এবং মৃত্যুও হতে পারে। অ্যামিবা মস্তিষ্কের টিস্যু দ্রুত ধ্বংস করে। ফলে এই সংক্রমণে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নেগেলেরিয়া ফাউলেরি সংক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।

নেগেলেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণের চিকিৎসা । Treatment of Naegleria Fowleri Infection.

অ্যামিবা সংক্রমিত এই রোগের জন্য ইউএস-ভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (US-based Centers for Disease Control) ওষুধের সংমিশ্রণে চিকিৎসার সুপারিশ করে। প্রায়শই অ্যামফোটেরিসিন বি (Amphotericin B), অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin), ফ্লুকোনাজোল (Fluconazole), রিফাম্পিন (Rifampin), মিল্টেফোসিন (Miltefosine) এবং ডেক্সামেথাসোন (Dexamethasone) এই ওষুধগুলি নেগেলেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।

পুকুরে স্নান করা কি বন্ধ করে দেওয়া উচিত? ।  Bathing in the Pond Should be Stopped?

নেগেলেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণ বেশি ঘটে জল থেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই প্রাণঘাতী অ্যামিবা পুকুরের মতো নোংরা জলেই বেশি বৃদ্ধি পায়। ফলে অনেকেরই প্রশ্ন তাহলে কি পুকুরে স্নান করা বন্ধ করে দেওয়া উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যাপারটা এত আতঙ্কের নয়। কারণ এমনিতে এই রোগ বিরল। তবে অপরিষ্কার বদ্ধ জলে ডুব দিয়ে স্নান করা ঠিক নয়। ফলে এই নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে বহু এনকেফালাইটিসের (Encephalitis) নেপথ্যে যে অ্যামিবাই থাকতে পারে, সেটা পরীক্ষা করা হয়ে ওঠে না অনেক সময়ে।

অ্যামিবা সংক্রমিত এই ভয়াবহ রোগ  বিরল হলেও, এর থেকে সাবধান থাকতেই হবে সকলকেই। উষ্ণ মিষ্টি জলাশয়ে অর্থাৎ হৃদ, পুকুরগুলি নিয়মিত ক্লোরিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। সাঁতার কাটা বা ডাইভিং করার সময় নাকের সুরক্ষা ব্যবহার করুন। সাঁতার কাটার পর বা পুকুরের জল ব্যবহার করার পর অবস্যই নিজের হাত, পা, শরীর সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। কারণ মাথায় রাখবেন, এই রোগ বিরল হলেও এই সংক্রমণ খুব মারাত্মক। পাশাপাশি এই রজার সে রকম নির্দিষ্ট চিকিৎসাও নেই।