Epilepsy । ঘন ঘন মাথা ঘুরছে? চোখে দেখছেন অন্ধকার? লো ব্লাড প্রেসার নয়, হতে পারে আরও গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা!

Monday, August 7 2023, 9:16 am
highlightKey Highlights

মাঝের মধ্যে মাথা ঘুরে যাওয়া বা চোখে অন্ধকার দেখার মতো লক্ষণকে কম রক্তচাপ বা শারীরিক দুর্বলতা বলে মনে করেন অনেকেই। তবে এই লক্ষণ হতে পারে এপিলেপসি বা মৃগী রোগের।


হাটতে চলতে মাঝে মাঝে মাথা ঘুরে যাওয়া বা চোখে অন্ধকার দেখার ঘটনা খুব একটা বিরল নয়। অনেকেই এই সমস্যায় ভিজে থাকেন প্রায় প্রত্যেক দিন। সাডেন ব্ল্যাক আউট (Sudden Blackout) বা মাঝে মাঝে চোখে অন্ধকার দেখার ঘটনাকে অনেকেই বেশি গুরুত্ব দেন না। এরকম সমস্যা হলে অনেকেই একে শারীরিক দুর্বলতা বলে অগ্রাহ্য করেন।  কেউ কেউ আবার ব্ল্যাকআউটকে ব্লাড প্রেসার নেমে গিয়েছে বলেও মনে করে থাকেন। তবে সব সময় হঠাৎ মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার মানেই কিন্তু রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ নয়। হতে পারে ভয়াবহ রোগ, এপিলেপসি (Epilepsy)।

হঠাৎ মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার মানেই কিন্তু রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ নয়
হঠাৎ মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার মানেই কিন্তু রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ নয়

মাথা ঘোরার মত সমস্যাকে অনেক সময়ই আমরা অতি সাধারণ সমস্যা বলে এড়িয়ে যাই। মনে করি শারীরিক দুর্বলতা বা রক্তচাপ কমে যাওয়ার ফলে এই ঘটনা হয়ে থাকে। কিন্তু সব সময় কিন্তু তা হয়না। এই মাথা ঘোরা আসলে বড় রোগেরও লক্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মৃগী বা এপিলেপসির ক্ষেত্রে যখন তখন মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু শুধু মাথা ঘোরা মানেই কি মৃগী? তাও কিন্তু নয়।

মৃগী বা এপিলেপসির ক্ষেত্রে যখন তখন মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে
মৃগী বা এপিলেপসির ক্ষেত্রে যখন তখন মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে

এপিলেপসি কী? । What is Epilepsy?

এপিলেপসি বা মৃগী মস্তিষ্কের একটি দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগ। এই রোগে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত। এই রোগকে প্রধানত খিঁচুনি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যা শরীরের একাংশ বা পুরো শরীর জুড়ে হতে পারে। এই খিঁচুনিগুলি ক্ষনিকের জন্যও হতে পারে আবার দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। তবে একবার খিঁচুনি মানেই কিন্তু মৃগী রোগ নয়। মৃগী রোগকে দুই বা ততোধিক অপ্রীতিকর খিঁচুনি হওয়া হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এপিলেপসি দ্বারা বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন ব্যক্তি আক্রান্ত। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৫ মিলিয়ন লোক মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়। উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে, প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে ৪৯ জন মৃগী রোগে আক্রান্ত। নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলিতে, এই সংখ্যাটি প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে ১৩৯ জন পর্যন্ত হতে পারে।

এই রোগে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত
এই রোগে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত

এপিলেপসি হওয়ার কারণ । Causes of Epilepsy :

এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। নিউরোলজিস্ট অনিল ভেঙ্কিটাচালম বলছেন, স্ট্রোক, বা কোনও প্রকারের মস্তিষ্কে আঘাত এপিলেপসির মতো সমস্যাকে ডেকে আনতে পারে। এছাড়াও যদি মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম যায়, নিউরোডিজেনেরেটিভ (Neurodegenerative) রোগ, এইডসের (AIDS) মতো সংক্রামক রোগ, ব্রেন টিউমার (Brain Tumors) থাকলে এপিলেপসির সম্ভাবনা থাকে।  এছাড়াও চিকিৎসক বলছেন, যদি পরিবারে ডিমেনশিয়ার (Dementia) ইতিহাস থাকে, মাথায় চোট আঘাত লাগে, অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক সেবনের অভ্যাস থাকে,তাহলেও এই রোগ হতে পারে। এছাড়াও জন্মের সময় কম ওজন, মেনিনজাইটিস (Meningitis), কোনও মানসিক আঘাত থেকে এই শারীরিক সমস্যা হয়। এছাড়াও যেসব কারণে এপিলেপসি হতে পারে তা হলো -

  •  প্রসবপূর্ব বা প্রসবকালীন কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি। যেমন, জন্মের সময় অক্সিজেনের ক্ষতি বা ট্রমা, কম জন্ম ওজন।
  • জন্মগত অস্বাভাবিকতা বা জেনেটিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের ত্রুটি বা মাথায় গুরুতর আঘাত।
  • একটি স্ট্রোক যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমাণ সীমাবদ্ধ করে।
  • মস্তিষ্কের সংক্রমণ যেমন মেনিনজাইটিস (Meningitis), এনসেফালাইটিস (Encephalitis) বা নিউরোসিস্টিসারকোসিস (Neurocysticercosis)।
  • নির্দিষ্ট জেনেটিক সিন্ড্রোম যেমন,  ইনফ্লেমেটারি ব্রেন ডিসঅর্ডার (Brain Disorders) থেকেও এপিলেপসি বা মৃগী দেখা দিতে পারে।
  • মস্তিষ্কের টিউমার থাকলে এপিলেপসি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মস্তিষ্কের টিউমার থাকলে এপিলেপসি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
মস্তিষ্কের টিউমার থাকলে এপিলেপসি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

এপিলেপসির লক্ষণ । Epilepsy Symptoms :

 এপিলেপসিতে খিঁচুনির সমস্যা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশী স্থায়ী হয় না। তবে এটি ঘনঘন হয়। খিঁচুনির সঙ্গে থাকে জ্বরও। এপিলেপসির লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খিঁচুনি, মাথা ঘুরে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখাকে ব্লাড প্রেসার নেমে গিয়েছে বলে ভুল করবেন না। যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন এপিলেপসি হয়েছে তা হলো -

এপিলেপসির লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
এপিলেপসির লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

মাথা ঘোরা । Dizzy : 

 মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘন ঘন খিঁচুনি হয়। যে কোনও সময়, যে কোন জায়গায় হঠাৎ মাথা ঘুরে যেতে পারে। মাথা ঘুরে যাওয়ার সঙ্গে চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে অন্য রোগের সঙ্গে গুলিয়ে বা শারীরিক দুর্বলতা ভেবে ফেলে রাখবেন না। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।

মাথা ঘুরে যাওয়ার সঙ্গে চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে
মাথা ঘুরে যাওয়ার সঙ্গে চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে

 শরীরের কাঁপুনি ।  Body Tremors : 

মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সব সময় কাঁপুনি লেগেই থাকে। এই কম্পন কিছুক্ষণের জন্যও হতে পারে আবার দীর্ঘক্ষণের জন্যও হতে পারে। যদি কোনও রোগীর শরীরে মাঝেরমধ্যেই কম্পন বা ঝাঁকুনি দেখা দেয়, তাহলে সে মৃগী রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সব সময় কাঁপুনি লেগেই থাকে
মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সব সময় কাঁপুনি লেগেই থাকে

রেগে যাওয়া । Getting Angry : 

দেখা গিয়েছে, যারা এপিলেপসি বা মৃগী রোগে আক্রান্ত তারা সহজেই মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। যার ফলে খুব দ্রুত তারা রেগে যান।

মৃগী রোগে আক্রান্ত তারা সহজেই মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন
মৃগী রোগে আক্রান্ত তারা সহজেই মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন

মুখে ফেনা দেখা যায় । Foam Appears on The Face : 

 মৃগীরোগে আক্রান্তদের মুখ থেকে ফেনা বের হওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায়। এক্ষেত্রে মাথা ঘোরার সময় মুখে ফেনা বের হতে থাকে। এরকম ঘটনা ঘটলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

মৃগীরোগে আক্রান্তদের মুখ থেকে ফেনা বের হওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায়
মৃগীরোগে আক্রান্তদের মুখ থেকে ফেনা বের হওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায়

এপিলেপসির চিকিৎসা ও প্রতিরোধ । Epilepsy Treatment and Prevention :

যদি মস্তিষ্কের এক বা একাধিক জায়গার স্নায়ু বেশি পরিমাণে কোনও কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ে তাহলে ব্ল্যাকআউটের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় এপিলেপসি। বাংলায় একে তড়কা বা মৃগীরোগ বলে। এই ধরনের রোগ সন্দেহ করলে চিকিৎসকরা বেশ কিছু উন্নত মানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন।  যেমন মস্তিষ্কের এমআরআই (MRI ), ইইজি (Electroencephalogram)। অবশ্য দুটো পরীক্ষাতেই ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক রিপোর্ট আসতে পারে, যে কারণে এপিলেপসি বা তরকা জাতীয় রোগ নির্ণয় অনেকটাই ক্লিনিকাল অর্থাৎ রোগীর উপসর্গ ও পরিবারে অন্য কারও এমন হয় কিনা তা জেনে, চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করতে হয়।  

এই ধরনের রোগ সন্দেহ করলে চিকিৎসকরা বেশ কিছু উন্নত মানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন
এই ধরনের রোগ সন্দেহ করলে চিকিৎসকরা বেশ কিছু উন্নত মানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন

মৃগীরোগে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মানুষ খিঁচুনি মুক্ত হতে পারে যথোপযুক্ত অ্যান্টিসিজার (Antiseizure) ওষুধের ব্যবহার করে। নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে, মৃগীরোগে আক্রান্ত প্রায় তিন চতুর্থাংশ লোক তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নাও পেতে পারেন। কারণ অনেক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে, খিঁচুনির ওষুধের সহজলভ্যতা কম। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলির সরকারী ক্ষেত্রে জেনেরিক অ্যান্টিসিজার ওষুধের (Generic Anti Seizure Drugs) গড় প্রাপ্যতা ৫০ শতাংশের কম। যদিও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য-পরিচর্যা করে মৃগী রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ লোকের নির্ণয় ও চিকিৎসা করা সম্ভব। এপিলেপসির চিকিৎসা করা গেলেও এই রোগ থেকে সর্বদাই সচেতন থাকা দরকার। নিজের ভুলের জন্যই আপনার বা আপনার কাছের কারুর এই রোগ হতে পারে। আনুমানিক ২৫ শতাংশ মৃগী রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো-

  • মাথার আঘাত প্রতিরোধ করা। উদাহরণস্বরূপ, পড়ে যাওয়া, পথ দুর্ঘটনা, খেলতে গিয়ে আঘাত পাওয়ার মতো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এই আঘাত থেকে এপিলেপসি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • জ্বরে আক্রান্ত শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ওষুধ এবং অন্যান্য পদ্ধতির ব্যবহার জ্বরজনিত খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারে।
  • স্ট্রোকের সঙ্গে  সম্পর্কিত মৃগীরোগের প্রতিরোধ কার্ডিওভাসকুলার রিস্ক ফ্যাক্টর (Cardiovascular Risk Factors) হ্রাসের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে এপিলেপসি প্রতিরোধ কি না।
  •  তামাক এবং অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে গেলে এপিলেপসি হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

অবশ্যই মাথায় রাখবেন ঘন ঘন মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা এপিলেপসি বা মৃগী রজার লক্ষণ। এর সঙ্গে কিছুক্ষনের জন্য খিঁচুনিও হতে পারে। এই ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File