আবহাওয়া

Weather Update | সময়ের আগে বর্ষার প্রবেশ হলেও রাজ্যে দেখা নেই বৃষ্টির! ভূমিধসের জেরে অবরুদ্ধ উত্তর সিকিম! বন্যা পরিস্থিতি অসম-মণিপুরে!

Weather Update | সময়ের আগে বর্ষার প্রবেশ হলেও রাজ্যে দেখা নেই বৃষ্টির! ভূমিধসের জেরে অবরুদ্ধ উত্তর সিকিম! বন্যা পরিস্থিতি অসম-মণিপুরে!
Key Highlights

মৌসম ভবন জানিয়েছে, আপাতত তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি মিলবে না। রাজ্যেও সময়ের আগেই বর্ষা ঢুকেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গেই আপাতত আটকে আছে তা। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণে আগামী কয়েক দিনে আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কবে বর্ষা ঢুকবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে প্রবেশ করেছে বর্ষা। কিন্তু সেভাবে দেখা নেই বৃষ্টির। তাপমাত্রা, গরম কমার বদলে তা যেন বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মৌসম ভবন জানিয়েছে, আপাতত তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি মিলবে না। রাজ্যেও সময়ের আগেই বর্ষা ঢুকেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গেই আপাতত আটকে আছে তা। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া রিপোর্ট (west bengal weather report) বলছে, দক্ষিণে আগামী কয়েক দিনে আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কবে বর্ষা ঢুকবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এদকিকে যেমন বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে রয়েছে আম জনতা, সেখানে বর্ষা ভারতে প্রবেশ করতে না করতেই  ভূমিধসে ভয়ঙ্কর অবস্থা উত্তর সিকিমে। শনিবার থেকে চুংথাং–লাচুং (Lachung) সড়কে যান চলাচল বন্ধ।  সিকিমে ভূমিধস (landslide in sikkim) এর জেরে আটকে পড়েছেন অন্তত দেড় হাজার পর্যটক। এই ঘটনায় নতুন করে লাচুং ভ্রমণের পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখেছে সিকিম প্রশাসন। অন্যদিকে, লাগাতার বৃষ্টির জেরে অসম, মণিপুরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

কবে হবে বৃষ্টি?

মৌসম ভবনের তরফে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ, ৩ জুন দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাপপ্রবাহ জারি থাকবে। পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে তাপপ্রবাহ বইবে। এরপর আগামী ৪ জুন পর্যন্ত ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি এবং জম্মু-কাশ্মীরের কিছু অংশে তাপপ্রবাহ বইতে পারে।  উত্তর প্রদেশে ৫ জুন পর্যন্ত এবং রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে তাপপ্রবাহ জারি রয়েছে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি পরিমাণ বৃ্ষ্টিপাত হতে পারে তামিলনাড়ু, পুদুচেরী, করাইকানাল, অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকা ও তেলঙ্গানায়। জানা গিয়েছে, আগামী সাতদিন এই বৃষ্টিপাত জারি থাকবে। ৬ জুন পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও মেঘালয়ে। অরুণাচল প্রদেশ ও ত্রিপুরাতে।

পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া :

আলিপুর হাওয়া দফতর জানিয়েছে,ধীরে ধীরে বদলাবে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (west bengal weather)।  বুধবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি চলতে পারে। কলকাতা-সহ সর্বত্রই বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে খবর। দক্ষিণের বাকি জেলাগুলিতে হাওয়ার বেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। তবে বুধবারের পর দক্ষিণে আপাতত আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার থেকে সব জেলায় শুকনো আবহাওয়া থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। কিছুটা বাড়বে তাপমাত্রাও। দক্ষিণবঙ্গে দু’দিন পর থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে পারে আরও দুই থেকে তিন ডিগ্রি। তবে ইতিমধ্যেই উত্তরে বর্ষা ঢুকে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া রিপোর্ট (west bengal weather report) অনুযায়ী, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে সোমবার এবং মঙ্গলবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়াও। এছাড়া মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বুধবার থেকে উত্তরের জেলাগুলিতে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। 

উল্লেখ্য, গত ৩১ মে বর্ষা ঢুকেছে উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণে বর্ষা প্রবেশের সময় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ। উত্তরে বর্ষা ঢুকে পড়ায় মনে করা হয়েছিল সময়ের আগেই বর্ষা ঢুকবে দক্ষিণবঙ্গেও। কিন্তু তা হচ্ছে না। আপাতত বর্ষা উত্তরেই আটকে আছে। যে কারণে গত কয়েক দিনে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে গুমোট হয়ে আছে আবহাওয়া।  তবে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (west bengal weather) ধীরে ধীরে বদলাবে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস।

সিকিমে ধস!

বর্ষা শুরু হতেই ভয়াবহ সিকিমের আবহাওয়া (sikkim weather)। উত্তর সিকিমের লাচুংয়ে ধসের জেরে বন্ধ সড়কে যান চলাচল। পাহাড়ি রাস্তায় বড় বড় চাঁই পড়ে রয়েছে। এমনকী একাধিক রাস্তা মাঝখান থেকে ফেটে গিয়েছে। তার মধ্যেই মুষলধারে চলছে ভারী বৃষ্টি। শনিবার থেকে চুংথাং–লাচুং (Lachung) সড়কে যান চলাচল বন্ধ। তারপর রবিবার সিকিমে অতিভারী বর্ষণের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। বাতিল হতে পারে উড়ান পরিষেবাও। এই ঘটনায় নতুন করে লাচুং ভ্রমণের পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখেছে সিকিম প্রশাসন। নাগাড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে উত্তর সিকিমে ধস নেমেছে। উত্তর সিকিম যাওয়ার পথে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ। পর্যটকদের গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লাচুংয়ে কমপক্ষে দেড় হাজার পর্যটক আটকে পড়েছেন বলে সূত্রের খবর। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। 

অন্যদিকে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমী বায়ু উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে পৌঁছতেই ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তর সিকিমের গ্যাংটক–মংগন এবং চুংথাং–লাচুং সড়ক।  সিকিমে ভূমিধস (landslide in sikkim) এর জন্য অনেক সড়ক ভেঙে চুরমার হয়েছে। ধসের জেরে সিকিমের এই পর্যটন স্থানে আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। আপাতত লাচুংয়ের হোটেলগুলিতে সকলের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আজ, সোমবার সিকিমের উত্তর ও পূর্ব অংশে নতুন করে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়েরও সতর্কতা রয়েছে। এই দুর্যোগের জেরে বিঘ্ন ঘটেছে সিকিমগামী রেললাইন তৈরির কাজে। সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত রেল প্রকল্পের ক্যানেল ভাসছে।

অসম, মণিপুরে বন্যা !

লাগাতার বৃষ্টির জেরে অসম, মণিপুরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মণিপুরে আটটি জেলার ৩৪৮টি গ্রামও ও শহুরে এলাকায় প্রায় দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় রেমেলের পরে অবিরাম বৃষ্টিতে ভাসছে মণিপুর। রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, কাংপোকপি, বিষ্ণুপুর, ননি, চুরাচাঁদপুর, সেনাপতি এবং কাকচিং-এর পাহাড় ও উপত্যকা এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। মণিপুরে বন্যায় এখনও পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। জল ঢুকে গিয়েছে সরকারি কার্যালয়েও। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজ ও সরকারি অফিস সহ একাধিক ভবন জলমগ্ন। কোনও হোটেলে হাঁটু জল, কোনও হোটেলে আবার কোমর পর্যন্ত জল। রাজভবন চত্বর, গভর্নরের অফিস এবং সেক্রেটারিয়েট, স্টাফ কোয়ার্টার এবং নিরাপত্তা কর্মীদের থাকার জায়গাতে জল থই থই অবস্থা।

অন্যদিকে, বন্যা বিধ্বস্ত অসমও। ১০টি জেলার ছয় লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে খবর। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বেড়েছে নদীর জলস্তর। ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে কপিলি, বরাক ও কুশিয়ারা নদীর জল। হাইলাকান্দি হেজাই, মরিগাঁও, করিমগঞ্জ, নগাঁও, কাছাড়, ডিব্রুগড়, গোলাগাঠ, কার্বি আংলং পশ্চিম ও ডিমা হাসাও জেলা মিলিয়ে ছয় লাখের উপর মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২৮ মে থেকে বন্যা ও ঝড়ে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৫ ।