রাজ্য

WB Sufal Bangla Scheme | 'সুফল বাংলা প্রকল্প'~ সরকারের এক সফল উদ্যোগ

WB Sufal Bangla Scheme | 'সুফল বাংলা প্রকল্প'~ সরকারের এক সফল উদ্যোগ
Key Highlights

কলকাতা এবং শহরতলিতে শুধু নয়। ‘সুফল বাংলা’র সুফল এ বার সব জেলাতেই ছড়িয়ে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার এবং শুধু শাক-সব্জি-চাল-ডাল নয়, হাঁস-মুরগি-পাঁঠার মাংস ছাড়াও আইসক্রিম, ঘোল-সহ ডেয়ারি-পণ্যও পাওয়া যাবে।

ভূমিকা | Introduction of Sufal Bangla Scheme

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষিজ বিপণন দফতরের আওতাধীন সুফল বাংলা প্রকল্প মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রেরণায় এবং সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলার সাধারণ মানুষের দরজায় দরজায় তাজা শাকসবজি পৌঁছে দেওয়ার এক অভিনব প্রকল্প।

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য যেমন আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম নিয়ে সারা দেশের গৃহস্থরা যখন জেরবার সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রকল্প, বহু মানুষকে বিশেষ করে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার স্বল্প আয়ের জনতাদের কাছে মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুফল বাংলা প্রকল্পের শুভারম্ভ এবং দায়িত্বভার | Responsibility of Sufal Bangla Scheme

সুফল বাংলা প্রকল্পটির সূত্রপাত ঘটে ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ থেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ টি মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে আলু এবং পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়ে থাকে । পরবর্তীকালে দুর্গাপূজা, কালীপুজা এবং ঈদের সময়ও এই কার্যক্রম চালু রয়েছিল।

এই প্রকল্পের সূচনারলগ্নে ছিল ১৪টি চলমান দোকান যেখানে কৃষকদের কাছ থেকে ফল ও সব্জি কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হত। উৎপাদক ও উপভোক্তা দু তরফের সুবিধার কথা মাথায় রেখে চালু করা হয় সুফল বাংলা প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পে সহযোগিতা করে থাকে দিল্লির ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা।

রাজ্য সরকার পশ্চিমবাংলা এগ্রি মার্কেটিং কর্পোরেশান লিমিটেডকে এই প্রকল্পের নো্ডাল এজেন্সি হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য | Purpose of Sufal Bangla Scheme

খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির দুর্ভাগ্যজনক দিক হল শহরের দরিদ্র ক্রেতারা যে বেশি দাম দিয়ে খাদ্যপণ্য ক্রয় করছেন তা গ্রামের কৃষকদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধান করার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রকল্পটি চালু করে থাকেন যাতে চাষিদের কাছ থেকে লাভজনক দামে সরাসরি কৃষিজ পণ্য সংগ্রহ করে যুক্তিযুক্ত দামে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় চলমান অথবা স্থায়ী বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে। 

  • কৃষক এবং গ্রাহকের উন্নতি সাধনই হল এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
  • সরকারী ক্রয়ের মধ্যে দিয়ে কৃষকদের লাভবান করে তোলা এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
  • সুফল বাংলা প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য হল এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষদের কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করা।
  •  কৃষকেরা যাতে তাদের উৎপাদিত সবজির সর্বাধিক মূল্য এবং বিক্রয়মুল্যের যথাযোগ্য অংশীদার হতে পারে। 
  • খুচরো মুল্যে উৎকৃষ্ট মানের তাজা ফল ও সবজি সরবরাহ করা ।
  •  ফল ও সবজি উৎপাদকদের খুচরো বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা ও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ।

সুফল বাংলার বিপণনী | Marketing of Sufal Bangla Scheme

সুফল বাংলা’ বিপণিতে একই ছাদের তলায় থাকছে সবজি, ফল, মাংস, দুধ, মাংস এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য, চাল, ডাল এবং সব ধরনের সুগন্ধি চাল। এখনও পর্যন্ত ৪০টি বিপণি খােলা হয়েছে। এই প্রকল্পের মুখ্য কেন্দ্র হল সিঙ্গুরের তাপসী মালিক কৃষক বাজার। সুফল বাংলা প্রকল্পের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন কৃষিপণ্যের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য প্রচার করা হয়।

সুফল বাংলা প্রকল্পের সুবিধাসমূহ | Benefit of Sufal Bangla Scheme

করোনা আর লকডাউনের জেরে যখন সাধারণ মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত তখন তাঁদের কিছুটা স্বস্তি দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্প চালু করেন। এই প্রকল্প রাজ্যের কৃষকদেরও আয় বাড়াতে সাহায্য করেছে অনেক মাত্রায়। 

সুফল বাংলা প্রকল্পটি দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের খাদ্য অপুষ্টি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খুব উল্লেখযোগ্য এক পদক্ষেপ যার মাধ্যমে গ্রামীণ আয়বৃদ্ধি হয়েছে এবং খামার অথবা খামার বহির্ভূত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে গড়ে উঠেছে দারিদ্র দূরিকরণ সহায়ক একপ্রকার পরিবেশ।

প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায় যে কৃষকদের বদলে পকেট ভারী করছে মধ্যস্বত্বভোগীদের। সুফল বাংলা প্রকল্পে ,পশ্চিমবঙ্গ সরকার উপকারী মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা পালন করছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহ করছে এবং তাদের দাম দিচ্ছে সাধরণত কৃষকরা যা পেয়ে থাকেন তার চেয়ে অধিক। সব্জি সংগ্রহ করে তা গুদামে রাখা হচ্ছে যার মূল হাব হিসেবে বাছা হয়েছিল সিঙ্গুর কে। বর্তমানে এরকম ২০টি হাব রাজ্যে চালু আছে । এই প্রকল্পের অধীনে ৬০ হাজারেরও বেশি কৃষককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং এই প্রকল্পে নতুন কর্মসসংস্থানও হচ্ছে। এই প্রকল্পের ফলে কৃষক বন্ধুরা প্রভূত পরিমাণে লাভ করতে পারছেন। 

সুফল বাংলা প্রকল্পটি ফল উৎপাদকদের খুচরো বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে। ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের বিবিধ কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলে নানা ঋতুতে উৎপাদিত ফল যাতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা যায় সেই জন্য বেশ অনেকগুলি ক্রয় বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সারা রাজ্যে ।

এই প্রকল্পে কারা আবেদন করতে পারবেন | Eligibility criteria for Sufal Bangla Scheme

এই প্রকল্পের আওতায় ফসল বিক্রির জন্য ব্যক্তি-কৃষক এবং কৃষক দল নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন এবং নিবন্ধীকৃত ফার্মার্সপ্রােডিউসারস কোম্পানি লিমিটেডগুলি বিপণি পরিচালনার জন্য আবেদন করতে সক্ষম ।

কোথায় যোগাযোগ করতে হবে | Contact for Sufal Bangla Scheme

কৃষিজ বিপণন দপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপন ইউনিট (PMU) এই প্রকল্প  পরিচালনা করে। আগ্রহী ব্যক্তিরা উল্টোডাঙার উত্তরাপণে প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ে অথবা জেলা ও মহকুমার সংশ্লিষ্ট কৃষি বিপণন বিভাগের দপ্তরে যােগাযােগ করতে পারেন।

সুফল বাংলা প্রকল্পের ওয়েবসাইট | Sufal Bangla Scheme’s website

সুফল বাংলা প্রকল্পটির জন্য আরও বিস্তারিত জানতে এই লিংকটিতে ক্লিক করুন এবং পেয়ে যান যাবতীয় তথ্য। 

প্রকল্পের রূপায়ণ এবং স্বার্থকতা | Implementation of Sufal Bangla Scheme

কোভিড -১৯ ও লকডাউনে বিপর্যস্ত মানুষের কাছে সস্তায় টাটকা শাক-সব্জি এবং ফল পৌঁছে দিয়ে নজির গড়ে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের সুফল বাংলা প্রকল্পটি। বাজারদরের আকাশছোঁয়া দামের থেকে অনেক কম মূল্যে পণ্যসামগ্রী পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর লকডাউনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। প্রত্যেকদিন আনুমানিক দেড় থেকে দু'লক্ষ মানুষের কাছে স্বল্প মূল্যে সব্জি পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য সরকারের অধীন এই কৃষি বিপণন সংস্থা। এ ছাড়াও এই প্রকল্পটির আওতায় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ন্যায্য মূল্যের দোকান ও কাউন্টার খোলা হয়েছে যেখান থেকে কম দামে সব্জি ক্রয় করতে পারছেন সাধারণ মানুষ । সুফল বাংলার স্টলে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ ও ১৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়ে থাকে। রাজ্য জুড়ে এরকম ১৪৪টি স্টল রয়েছে। কলকাতাতে রয়েছে ১১৬টি। এর মধ্যে স্থায়ী ও চলমান দু ধরনের দোকানই রয়েছে।বর্তমানে রাজ্যে ৪৭টি স্থায়ী দোকান ও ৯৭টি চলমান কাউন্টার রয়েছে যার সিংহভাগই কলকাতায়। যতবারই সব্জি ও ফলের আকাশছোঁয়া মূল্যের দামের জন্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে , তখনই সুফল বাংলার স্টল সাধারণ মানুষের কাছে কার্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সুফল বাংলায় সরকারের টার্গেট গ্রুপ হল কৃষক ও গ্রাহক। এই প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কৃষিবিপণন ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের নিয়ে একটি প্রাইসিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটি প্রতিদিন বাজার দর বিশ্লেষণ করে থাকে। ৬০ হাজারেরও বেশি কৃষককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায় । সুফল বাংলা নতুন কর্মসসংস্থান প্রদান করতে ও নিয়েছে অগ্রণী ভূমিকা ।

তাজা ফল ও সবজি বিপণনে গুদামীকরণ এবং অবিক্রয়যোগ্য ফল ও সবজিকে সুলভ দামে বিক্রয় করা করা হলো এই প্রকল্পের একটি অবিছেদ্য অংশ। এই প্রকল্পের স্বার্থক রূপায়ন এবং সাফল্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষভাবে গুদামিকরণ ব্যবস্থাপণা।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

সুফল বাংলা প্রকল্পটির কবে শুভারম্ভ হয়েছিল ?

সুফল বাংলা প্রকল্পটির সূত্রপাত ঘটে ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ থেকে।

সুফল বাংলা প্রকল্পটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য কী ?

রাজ্য সরকার চাষিদের কাছ থেকে লাভজনক দামে সরাসরি কৃষিজ পণ্য সংগ্রহ করে যুক্তিযুক্ত দামে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় চলমান অথবা স্থায়ী বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে। এই হল প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ।

সুফল বাংলা প্রকল্পটির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে কোথাও যোগাযোগ করতে হবে ?

কৃষিজ বিপণন দপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপন ইউনিট (PMU) এই প্রকল্প পরিচালনা করে। আগ্রহী ব্যক্তিরা উল্টোডাঙার উত্তরাপণে প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ে অথবা জেলা ও মহকুমার সংশ্লিষ্ট কৃষি বিপণন বিভাগের দপ্তরে যােগাযােগ করতে পারেন।

সুফল বাংলার প্রকল্পটির আওতায় গত বছর কত অর্থাৎ ২০২০ সালে কত টাকার ব্যবসা হয়েছে ?

গত বছর লকডাউনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে ।