WB Khadyasathi | পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক সফল উদ্যোগ “খাদ্যসাথী প্রকল্প”
আসুন জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি সফল উদ্যোগ "খাদ্যসাথী" কিভাবে গরিব মানুষদের সাহায্য করেছে।
ভূমিকা | Introduction of Khadyasathi
প্রতিনিয়তই বাজারের জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে এবং এই কঠিন পরিস্থিতি দরিদ্র পরিবারের অবস্থার আরও অবনতি ঘটাচ্ছে , আর্থিক অনটনের কারণ বশত প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য কিনতে পারছে না তারা। এইসব অসহায়, দরিদ্র এবং নিম্নবিত্ত মানুষের কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে খাদ্য সাথী প্রকল্প । উক্ত প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৮.৪৯ কোটি মানুষের কাছে ২ টাকা কেজি দরে চাল এবং গম সরবরাহ করবে এবং ৫০ লাখ মানুষ বাজারের দামের অর্ধেক দামে খাদ্যশস্য লাভ করতে সক্ষম হবে।
প্রকল্পটির শুভারম্ভ | Launch of project Khadyasathi
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যানার্জি ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে কম ভর্তুকিযুক্ত দামে গোটা রাজ্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করার উদ্দেশ্যে হেতু খাদ্যসাথী প্রকল্পটি চালু করেন।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের উদ্দেশ্য | Purpose of Khadyasathi
প্রধানত দরিদ্র এবং বঞ্চিত পরিবারগুলিকে খাদ্য সরবরাহের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্পটি চালু করে। সুলভ মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা প্রদান করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। রাজ্যের দরিদ্র পরিবারগুলি যাতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্যশস্য কিনতে পারে সেটাই এই প্রকল্প অন্যতম প্রধান লক্ষ্য যার ফলে অভাবজনিত সমস্যা দূর করা অনেকাংশে সম্ভব হবে । তাছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষকে অর্ধেক বাজার মূল্যে চাল ও গম দেওয়া হবে সরকারের তরফ থেকে যাতে কোনও দরিদ্র মানুষ অনাহারে না থাকে।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা | Benefits of Khadyasathi
খাদ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধাগুলি নিচে উল্লিখিত হল -
- এই প্রকল্পের অধীনে ব্যক্তিরা প্রতি কেজি ২ টাকা দরে চাল এবং গম পাবে।ইতিমধ্যে সরকার ৭.৪৯ কোটি মানুষকে কেজি প্রতি ২ টাকা হিসেবে খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছে।
- সরকার পশ্চিমবঙ্গের ৯০ শতাংশ লোকজনকে চাল এবং গম প্রদান করবে।
- খাদ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে যে দরিদ্র মানুষেরা আছেন তাঁরা বাজারের দামের অর্ধেক দামে খাদ্যশস্য কিনতে পারবেন।
- পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক মাথা পিছু পরিবারকে ৩৫ কেজি চাল ও গম দেওয়া হবে।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের যোগ্যতা | Eligibility for Khadyasathi
খাদ্য সাথী প্রকল্প এর অধীনে শুধুমাত্র অসহায় এবং দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলিই এ প্রকল্পের সুবিধা পাবে। নিচে উল্লিখিত হল এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা :
- যিনি আবেদনকারী তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারী যদি রেশন কার্ড ধারক হন শুধুমাত্র তাহলেই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
- কেবলমাত্র আর্থিক দিক দিয়ে অসহায় এবং দরিদ্র পরিবারগুলি ই এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য।
- অভিনব এই খাদ্য প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের আওতার মধ্যে থাকবেন, জলপাইগুড়ি এবং জঙ্গলমহল এলাকার ৩৩ লক্ষ মানুষ, পুরুলিয়ার ১২ লক্ষ খরা কবলিত মানুষ, চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার, ঘূর্ণিঝড় কবলিত মানুষ, জমি হারানো সিংগুরের বাসিন্দা , কলকাতার সকল গৃহহীন মানুষজন ; এছাড়া ও খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় থাকছে দার্জিলিঙের পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসকারী মানুষজনও।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নথি বা ডকুমেন্টস | Required documents for Khadyasathi
আবেদনকারী যদি খাদ্যসাথী প্রকল্পের সমস্ত সুবিধা লাভ করতে চান তাহলে তাঁকে নিম্নলিখিত নথিপত্র গুলি প্রদর্শন করতে হবে : -
- আধার কার্ড (Aadhaar card)
- রেশন কার্ড (ration card)
- যিনি আবেদনকারী তাঁকে অতি অবশ্যই প্রথমেই ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
ডিজিটাল রেশন কার্ড এর ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য এবং আবেদন করার নিয়মসমূহ | Application rules for Khadyasathi
ডিজিটাল রেশন কার্ড উপলব্ধ করার প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাই আবেদনকারীর যদি রেশন কার্ড সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকে, তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের ওয়েবসাইটে লগ ইন করতে পারেন, https://food.wb.gov.in ডিজিটাল রেশন কার্ড সম্পর্কিত আবেদনকারীর কিছু করণীয় থাকলে তাঁকে নিম্নলিখিত ফর্মগুলি ডাউনলোড করতে হবে, সেগুলি পূরণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দফতর, বরো বা পৌরসভা অফিসে তা জমা দিতে হবে ।
কী কী প্রয়োজনে কোন কোন ফর্ম ভরবেন ?
- ভর্তুকি যুক্ত খাদ্যশস্যের আওতায় আসতে চাইলে রেশন কার্ডের জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করতে : ফর্ম III-R/ফর্ম III-U
- পরিবারের কিছু সদস্য ডিজিটাল রেশন কার্ড না পেয়ে থাকলে : ফর্ম IV-R/ফর্ম IV-U
- রেশন কার্ডে নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ সংশোধন করতে হলে: ফর্ম V-R/ফর্ম V-U
- একটি নতুন রেশন দোকানে নিজের নামটি স্থানান্তরিত বা পরিবর্তনের জন্য : ফর্ম VI-R/ফর্ম VI-U
- মৃত্যু কিংবা অন্য কোনও কারণে রেশন কার্ড জমা দিতে গেলে ফর্ম ৭ পূরণ করে জমা দিতে হবে।
- বিকল্প রেশন কার্ড পেতে হলে ফর্ম ৯ পূরণ করে জমা দিতে হবে। হারিয়ে যাওয়া ডিজিটাল রেশন কার্ডের ফটোকপি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কার্ড না থাকলে পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের রেশন কার্ডের ফটোকপি জমা দিলেও চলবে।
- ভর্তুকীহীন রেশন কার্ড পেতে গেলে আবেদনকারীকে ফর্ম ১০ পূরণ করে জমা দিতে হবে।
আবেদনকারীর যদি পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের বা PDS মাধ্যমে অর্থাৎ রেশন ডিলারদের কাছ থেকে খাদ্যশস্য প্রাপ্তি সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে তারা 1967 অথবা 18003455505 এ ফোন করতে পারেন।( সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা) যে সব গ্রাহক দের এখনও পুরনো রেশন কার্ড বর্তমান, তারা অবশ্য পিডিএসবিহীন পণ্য (এরকম ৫০ টি জিনিস) এবং কেরোসিন তেল সংগ্রহ করতেন পারেন।
নিচের এই লিংকে ক্লিক করে খাদ্যসাথী ফর্মের পিডিএফটিকে ডাউনলোড করতে পারেন :
প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও সাফল্য
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গের ৮ কোটি ৬৬ লক্ষ মানুষ অর্থাৎ রাজ্যের ৯০.৬শতাংশ মানুষ বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় এসেছেন।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পুষ্টি-পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন শিশু, মা ও তাদের পরিবারের জন্য মাসে ৫ কিলোগ্রাম চাল, ২.৫ কিলোগ্রাম গম, ১ কিলােগ্রাম মুসুর ডাল ও ১ কিলোগ্রাম ছোলা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ কুপনের প্রচলন করে। গণবণ্টন ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও গতিশীল করার জন্য ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করা ও সার্বিক কম্পিউটার ব্যবস্থাপনার সফল প্রয়াগে গত পাঁচ বছরে সম্ভব হয়েছে সফলতার সাথে।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা কি?
এই প্রকল্পে আবেদনকারী রেশনে ২ টাকা কেজি দরে চাল এবং গম পাবেন।
খাদ্যসাথী প্রকল্পের জন্য ডিজিটাল রেশন কার্ড কি লাগবেই?
এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে আবেদনকারীকে অতি অবশ্যই প্রথমে ডিজিটাল রেশন কার্ড করাতেই হবে।
কারা খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবে?
জঙ্গলমহল অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন, দার্জিলিং এর পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন, পুরুলিয়া জেলায় এবং চা বাগানে কর্মরত, সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, এছাড়াও কলকাতার গৃহহীন মানুষেরা খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
খাদ্যসাথী প্রকল্পে প্রত্যেক পরিবার কত পরিমাণ চাল ও গম পাবে?
এই প্রকল্পের অধীনে প্রত্যেক পরিবার মাসে মাথাপিছু 35 কেজি চাল এবং গম পাবেন।
- Related topics -
- খাদ্যসাথী প্রকল্প
- প্রকল্প
- মমতা ব্যানার্জী
- মুখ্যমন্ত্রী
- রাজ্য