মিশন নির্মল বাংলা

WB Mission Nirmal Bangla | "মিশন নির্মল বাংলা – গ্রাম বাংলার অহংকার"

WB Mission Nirmal Bangla | "মিশন নির্মল বাংলা – গ্রাম বাংলার অহংকার"
Key Highlights

আসুন জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি সফল উদ্যোগ "মিশন নির্মল বাংলা" কিভাবে গরিব মানুষদের শৌচালয় স্বাস্থ্যবিধিতে সাহায্য করেছে।

ভূমিকা | Introduction of Mission Nirmal Bangla

ভারত সরকারের দ্বারা চালু করা 'স্বচ্ছ ভারত অভিযানে'র রূপেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয় আরেকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প যা 'মিশন নির্মল বাংলা' নামে বর্তমানে বহুল পরিচিত একটি নাম । পশ্চিমবঙ্গ সরকার 'স্বচ্ছ ভারত' প্রকল্পের কর্মসূচি পূর্ণগঠিত করার সিধান্ত নিয়েছিলেন এবং ফলস্বরূপ মিশন নির্মল বাংলা অভিযান টি পায় তার স্বার্থক রূপায়ণ।

স্বচ্ছ বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যেই রাজ্য সরকারের এই অভিনব পরিকল্পনা । সমাজে প্রধানত গ্রাম বাংলার দিকে উন্মুক্ত স্থানে মলমুত্র ত্যাগ করার প্রতিবাদী পদক্ষেপ হিসেবেই রূপায়িত হয় মিশন নির্মল বাংলা। গ্রামীণ এলাকায় যেখানে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই উক্ত প্রকল্পের অধীনে শৌচাগার নির্মাণ করার কাজ সুনিশ্চিত করেছে রাজ্যের সরকার এই প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে।

প্রকল্পটির শুভারম্ভ | Launch of Mission Nirmal Bangla

গত ২০১৩ সালের ১৯শে নভেম্বর ওয়ার্ল্ড টয়লেট ডে'র বিশেষ দিনটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুপ্রেরণায় এবং তত্ত্বাবধানে নির্মল বাংলা মিশন চালু হয়। গত সাড়ে চার বছরে ৮টি জেলা, ২,২৬৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২৮,১০২টি গ্রাম নির্মল হয়েছে। এই উদ্যোগ লাভ করেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য | Purpose of Mission Nirmal Bangla

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যই হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ে তোলা বা এককথায় বলা যায় স্বচ্ছ বাংলা গড়ে তোলা এ প্রকল্পের প্রধানতম উদ্দেশ্য। গ্রামবাংলায় যেখানে শৌচাগার নেই সেই সব প্রতিটি জেলায় যাতে শৌচাগারের সু বন্দোবস্ত করে দেওয়া যায় ,এমন মহান উদ্দেশ্য নিয়েই চালু করা হয় এই মিশন। নির্মল বাংলা মিশন হল রাজ্যের গ্রামীণ এলাকা থেকে উন্মুক্ত মলত্যাগ দূর করার মিশন। এটি জাতীয় নির্মল ভারত অভিযানের রাজ্য প্রতিপক্ষ। গ্রামাঞ্চলের গরীব পরিবারগুলিতে অনাবৃত খোলা জায়গায় মলত্যাগ নিশ্চিত করার জন্য ল্যাট্রিন নির্মাণ করে এই অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলা ই হল রাজ্য সরকারের অভিপ্রায়। এ ছাড়াও এই অভিনব স্কিমটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সংখ্যক কার্যকরী টয়লেট, রাস্তায় নিয়মিত বিরতি, পাবলিক প্লেস ইত্যাদি সুবিধাসমূহ ও সুনিশ্চিত করবে।

কারা পাবে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের সুবিধা | Elegibility for Mission Nirmal Bangla

পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যেসব মানুষ জনেরা মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের সুবিধা পাবেন, তাঁরা হলেন-

  1. পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী সকল পরিবার এই প্রকল্পের অধীনে উৎসাহ ভাতা লাভ করবে।
  2. দরিদ্র সীমার উপরে বসবাসকারী কিছু দলভুক্ত পরিবার যেমন- তপশিলি উপজাতি,তপশিলি জাতিভুক্ত পরিবার এবং প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার অথবা ভূমিহীন শ্রমিক পরিবার এছাড়াও পরিবারের অক্ষম সদস্যরাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।

মিশন নির্মল বাংলার সুবিধাসমূহ | Benefites of Mission Nirmal Bangla

  1. মিশন নির্মল প্রকল্পটি স্বচ্ছ সমাজ গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে মানুষের উন্মুক্ত স্থানে মলমুত্র ত্যাগ করার বদভ্যাস দূরীভূত করার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনেছে । 
  2. পশ্চিমবঙ্গে নির্মিত প্রতিটা শৌচাগারের পাশাপাশি কঠিন এবং তরল বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পানীয় জলের সুব্যবস্থা ও করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি শৌচাগার নির্মাণ করার জন্য সরকার ১২০০০ টাকা বরাদ্দ করেছে যার মধ্যে ২০০০ টাকা শৌচাগারের জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হেতু ব্যবহার করতে হবে।
  3. মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের অন্তর্গত প্রতিটি পারিবারিক শৌচাগার নির্মাণের জন্য ১০০০০ টাকা উৎসাহ ভাতা হিসাবে প্রদান করা হবে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে শৌচাগার নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য পেতে হলে ওই পরিবারগুলিকে ৯০০ টাকা দিতে হবে।
  4. মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পটি চালু করার পরবর্তী সময় থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রসার, স্বাস্থ্যবিধি সম্মত অভ্যাস এবং পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 
  5. গ্রাম বাংলায় শিশু মৃত্যুর হার, জলবাহিত রোগের প্রকোপ ও মলবাহিত রোগ হ্রাস করা গিয়েছে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের অধীনে । তা ছাড়াও কম করা গেছে নানা ধরণের পেটের অসুখ ও। 
  6. মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রত্যেকটি গ্রামে শৌচাগার নির্মাণ করে স্বচ্ছ সমাজের ধারণাকে বজায় রাখা সম্ভব হয়ে উঠেছে।
  7. পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলির আশেপাশের একলাকা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয়েছে।
  8. এই প্রকল্প অনুযায়ী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার উপস্থিত থাকবে এবং সেই পরিবারের প্রত্যেক সদস্য সেই শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন।
  9. সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলিতে ও শৌচাগারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
  10. জনসমাগম হয় এমন স্থানে পথচারীদের এবং গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষদের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
  11. গ্রামে সকল অধিবাসীদের সুবিধার্থে পানীয় জলের ও সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
  12. গ্রামের প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছেলে এবং মেয়েদের অালাদা আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেলাভিত্তিক স্বীকৃতি | District-based recognition of Mission Nirmal Bangla

সমগ্র দেশের পারিবারিক হিসেবে শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য প্রথম চারটি জেলার মধ্যে তিনটি হল নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ,হুগলি এবং বর্ধমান জেলা। এদের মধ্যে নদীয়া জেলা দেশের প্রথম নির্মল জেলা হিসেবে ঘোষিত হয় যা কিনা দেশের মধ্যে প্রথম উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। এই জেলায় ৩.৪৭ লক্ষেরও বেশি শৌচালয় নির্মাণ হয়েছে। ৩১শে জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত আরও যে সাতটি জেলা নির্মল জেলা ঘোষিত হয়েছে, সেগুলি হল, হুগলী, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান। । 

প্রকল্পটির পরিকল্পনা এবং তার স্বার্থক রূপায়ন | Planning and implementation of Mission Nirmal Bangla

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাংলার মানুষ উন্নয়নের এক নতুন আস্বাদ পেয়েছে। পঞ্চায়েতের সাহায্যে , সরকার তাদের এই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়িত করেছে। মিশন নির্মল বাংলা কর্মসূচীতে রাজ্য খুব ভালো কাজ করেছে এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও এই কর্মসূচি যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে জেলার সমস্ত গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে, এবং রাস্তাঘাটের ব্যবধানে উন্মুক্ত শৌচ মুক্ত এলাকা নির্মাণ করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তা সম্পূর্ণ রূপে পালন করা হয়েছে এবং তা সফল ও হয় । ২০১৪-১৫ আর্থিক বর্ষে ‘নির্মল বাংলা’ স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচীতে ‘দেশ সেরার’ শিরোপা লাভ করে পশ্চিমবঙ্গ ,ভারত সরকারের কাছ থেকে । উক্ত কর্মসূচীতে প্রায় ৮.৪৭ লক্ষ শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, যা সমগ্র দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নির্মল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু মৃত্যু, জলবাহিত এবং মলবাহিত রোগের প্রকোপ কমেছে এবং নানা ধরণের পেটের অসুখ বহুগুণ হ্রাস করে আনা গেছে।

আমরা জানি যে খোলা স্থানে মুল্মুত্র ত্যাগ করা বন্ধ করতে পারলে রোগমুক্ত জীবন পাওয়া সম্ভব। এতদিন অবধি বিদ্যালয়ে শৌচাগার না থাকার কারণে মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিতির হার বেশি ছিল। তবে এই প্রকল্পের অধীনে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে শৌচাগার গড়ে তোলার কর্মসূচি সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছে আর যার ফলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হার হ্রাস পেয়েছে। শৌচাগার ব্যবহার করার পাশাপাশি আবর্জনা সঠিক স্থানে ফেলা, সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা ও পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার সু অভ্যাস গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আম জনতার মধ্যে বাংলার এই প্রকল্পটি।

গত চার বছরে ৫৮,৭৩,৫৪০ বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করা গেছে। জনসাধারণের জন্য ১,৬০৮টি শৌচাগার তৈরী করা হয়েছে।গত কয়েক বছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে । ২০১২-১৩ সালে ২৫৪.৪১ কোটি টাকা থেকে ২০১৭-১৮ সালে এই বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৬৬১.২৫ কোটি টাকা। বিগত কয়েকবছরে এই প্রকল্প ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে । সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১.৩৫ কোটি পরিবার এর ফলে উপকৃত হয়েছে। নির্মল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলা আপাতত খোলা শৌচালয় মুক্ত বা open defecation free ; সেরকমটাই দাবি করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা | Future Planning of Mission Nirmal Bangla

গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে ৫০০টি অতিরিক্ত সাধারণ শৌচাগার তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে দপ্তরের। এছাড়া আরও ৫০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দেওয়া হবে এবং এর সাথে সাথে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের প্রচারমূলক কর্মসূচিতেও নজর রাখা হচ্ছে।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের উদ্দেশ্য কী ?

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যই হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ে তোলা বা এককথায় বলা যায় স্বচ্ছ বাংলা গড়ে তোলা এ প্রকল্পের প্রধানতম উদ্দেশ্য ।

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের সুবিধা কি?

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় প্রত্যেকটি বাড়ি, রাস্তা- ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হবে। শৌচাগারের পাশাপাশি এই প্রকল্পে অধীনে পানীয় জলের ব্যবস্থা, কঠিন এবং তরল বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পটি কবে চালু হয় ?

গত ২০১৩ সালের ১৯শে নভেম্বর ওয়ার্ল্ড টয়লেট ডে'র বিশেষ দিনটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুপ্রেরণায় এবং তত্ত্বাবধানে নির্মল বাংলা মিশন চালু হয়।

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের অধীনে শৌচাগার করার জন্য কত টাকা আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে?

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে অন্তর্গত প্রতিটি পরিবারকে ১০০০০ টাকা উৎসাহ ভাতা হিসাবে প্রদান করা হবে।