Waste Reduce and Recycle | পরিবেশ সুস্থ রাখতে পরিবর্তন আনুন আপনার জীবনে
বাড়িতে সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই পরিবেশ থাকবে সুস্থ, কমবে দূষণ।
পৃথিবীতে দূষণ ও দূষণের পরিমান সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে পরিবেশ দূষণ (Environmental pollution) ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) হল সব থেকে বড় সমস্যা। দূষণ কমাতে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। তবে আমরা সাধারণ জনগণ দৈনিক বহু পদার্থ ব্যবহার করি যা থেকে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারতের সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের (CPCB) মতে, মাথাপিছু বর্জ্য উৎপাদন দৈনিক ০.২৬ কেজি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক ০.৮৫ কেজিতে পৌঁছেছে।
দৈনিক ব্যবহৃত পদার্থ থেকে যে দূষণ হয়, তা জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষণের পরিমান কমাতে আমাদের কিছুটা ভেবে চিন্তেই জিনিস পত্র ব্যবহার করতে হবে। এমনকি কোনও জিনিস পুনঃব্যবহার করেও কমানো যায় পরিবেশ দূষণ। সাধারণত কোনো ব্যবহৃত বস্তুকে পুনব্যবহার যোগ্য করার প্রক্রিয়াকে রিসাইক্লিং (Recycling) বলে। দেখে নিন বাড়িতেই কীভাবে দূষণ কমাতে ও বস্তু পুনঃব্যবহার করতে পারবেন।
১. পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার করুন | Use Reusable Bags :
বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution) সব থেকে বড় সমস্যা। যার ফলে প্লাস্টিক বর্জন করতে নানারকমের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। ইতিমধ্যেই বাজারে কোনো পণ্যের বিক্রয় বা ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ গুলি প্লাস্টিক বিহীন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে বর্তমানে পুনব্যবহারযোগ্য ব্যাগের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে শপিং মল, দোকান, বাজারে বর্তমানে ব্যবহৃত ব্যাগগুলি এমনভাবেই বানানো যাতে আপনি এটি পুনঃব্যবহার করতে পারবেন। দূষণ কমাতে ও পুনঃব্যবহার করতে চটের ব্যাগ (Jute bags ) ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্যাগ মজবুতও, সঙ্গে আপনি এটি বহু দিন ধরে ব্যবহার করতে পারবেন।
২. ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে বানান সার | Compost With Discarded Items :
বর্জ্য পদার্থ ও দূষণ কমাতে সব থেকে ভালো উপায় কম্পোস্ট (Compost) করা। আপনার রান্নাঘরে ব্যবহৃত অনেক বস্তুই প্রতিনিয়ত ফেলে দেওয়া হয়, যা আপনি কম্পোস্ট করে পুনঃব্যবহার করতে পারেন গাছের সার (Fertilizer) হিসেবে। রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া জিনিস কম্পোস্ট করতে, ফল এবং সবজির খোসা বা ফেলে দেওয়া অংশ, ডিমের খোসা বা এমনকি পচা ফল এবং সবজি ইত্যাদি একটি বালতিতে রেখে জমা করুন এবং সময় মতো সেটিকে নাড়িয়ে নিন। কয়েক মাস ধরে রান্নাঘরের এই সমস্ত বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমিয়ে রাখলেই তৈরী হয়ে যাবে আপনার গাছের জন্য পুষ্টিকর কম্পোস্ট।
৩. কাগজবিহীন বস্তু ব্যবহার করুন | Use Paperless Materials As Much As Possible :
বহু বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করার পাশাপাশি গাছের সংখ্যা হ্রাস হওয়ার ফলেও পরিবেশে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যতটা সম্ভব কাগজবিহীন বস্তুব ব্যবহার করুন। এটিএম-এ (ATM) টাকা তোলার পর বা কোথাও কিছু ক্রয় করার পর চেষ্টা করুন কাগজের বিল না নেওয়ার। এছাড়াও অনলাইন ক্যালেন্ডার, অনলাইন নোটপ্যাড ইত্যাদি ব্যবহার করুন। এতে কিছুটা হলেও কমবে কাগজের ব্যবহার ও দূষণ। এছাড়াও ব্যবহৃত কাগজ ফেলুন রিসাইকেল বিন অর্থাৎ পুনঃব্যবহার যোগ্য করার জন্য যে ডাস্টবিনে।
৪. খাদ্য অপচয় হ্রাস করুন | Reduce Food Waste :
বাইরে কোনও রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে অথবা বাড়তেই খাবার খাওয়ার সময় পেট ভরে গেলে অথবা খেতে ইচ্ছা না করলে অনেকেই খাবার ফেলে দেন। পচনশীল হলেও শেষমেশ সেটি বর্জ্য পদাৰ্থতেই পরিণত হয়। বহু দেশে দেখা যায় সেখানে খাবার নষ্ট করার প্রবণতা এতটাই বেশি যে, ফেলে দেওয়া খাবার থেকে অসংখ্য মানুষের পেট ভরানো সম্ভব। ফলে পরিবেশ রক্ষা করতে যতটা সম্ভব খাবার অপচয় করা বন্ধ করুন। প্রয়োজনে খাবারের এক্সপায়ার তারিখ (Expiration Date) লিখে রাখুন, যাতে সেটি নষ্ট হওয়ার আগেই আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
৫. আসবাব পুনঃব্যবহার | Reuse Furniture :
প্রায় সকলের বাড়িতেই বহু আসবাব থাকে যা আমরা ফেলে দিয়ে থাকি । তবে সেই আসবাব আপনি অন্য কাউকে ডোনেট (Donate) বা দান করে অথবা নিজেই পুনব্যবহারযোগ্য করে পরিবেশ দূষণ কমাতে পারেন। বর্তমানে এরকম বহু সংস্থা আছে যারা পুরোনো জিনিস নিয়ে সেটির বদলে কিছু টাকা বা জিনিস প্রদান করে এবং সেই পুরোনো জিনিসটিকে পুনব্যবহারযোগ্য করে তোলে। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো জিনিস যেমন ফোন, একটু খারাপ হলেই তা ফেলে রেখে নতুন একটা কিনে নিচ্ছেন অনেকে। এই ক্ষেত্রে খারাপ হয়ে যাওয়া ফোনটি আপনি ওএলএক্স (OLX) এর মতো সংস্থা দ্বারা অন্য কাউকে বিক্রয় করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি আসবাবের পরিস্থিতি অনুযায়ী মূল্যও পাবেন, অন্যদিকে জিনিসটি পুনঃব্যবহারও হবে। এছাড়াও বাতিল হয়ে যাওয়া আসবাব যেমন কাঠের চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি থেকে বুক সেল্ফ বা ঘর সাজানোর আসবাব তৈরী করেও আসবাব পুনঃব্যবহার করতে পারেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হচ্ছে, তেমনই বাড়ছে দূষণও। পরিবেশ দূষণের ফলে বহু জায়গায় মৎস্য চাষে ব্যাঘাত দেখা গিয়েছে। আবার কোথাও বায়ু দূষণের ফলে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের। পরিবেশ দূষণের ক্ষয়ক্ষতি প্রভাবের তালিকা সুদূর প্রসারিত। পৃথিবীতে দূষণ কমানোর জন্য অধিকাংশ দেশে রাস্তায় রাস্তায় রাখা হয়েছে ভিন্ন ধরণের ডাস্টবিন। যার মধ্যে আলাদাভাবে রয়েছে রিসাইক্লিং বিন ( Recycling bin), প্লাস্টিক বিন (Plastic bin) ইত্যাদি। এছাড়াও পরিবেশ দূষণ কমাতে নানান জায়গায় নানান ভাবে সতর্ক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তবে কেবল রাস্তায় বেরিয়েই নয়, পরিবেশ বান্ধবতার জন্য বাড়িতে এবং আপনার লাইফস্টাইলে আনুন পরিবর্তন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- পরিবেশ দূষণ
- পুনর্ব্যবহার
- পরিবেশ রক্ষা
- পরিবেশ বান্ধব