Vitamin D | বর্ষায় সূর্যালোকের অভাবেও শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ করুন ড্ৰাই ফ্রুটস এবং বাদাম খেয়ে!
ভিটামিন ডি-র প্রধান উৎস হল সূর্যালোক। তবে বর্ষায় সূর্যের সেরকম দেখা মেলে না। ফলে শরীরে দেখা দেয় ভিটামিন ডি-র অভাব। এই অভাব এবার দূর করুন ড্ৰাই ফ্রুটস এবং বাদাম খেয়ে।
আমাদের শরীরের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন (Vitamin)। এর একাধিক প্রকার হয়, যার প্রত্যেকটাই আমাদের শরীরের জন্য দরকার। এই প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম হল ভিটামিন ডি (Vitamin D)। এই ভিটামিন সানসাইন ভিটামিন (Sunshine Vitamin) হিসাবেও পরিচিত কারণ, এটি আমাদের শরীর সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে সবচেয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে যায়। ভিটামিন ডি-র প্রধান উৎস হল সূর্য। ফলে বর্ষাকালে (Monsoon) আকাশ মেঘাছন্ন থাকায় শরীর পযাপ্ত সূর্যালোক পায় না। যার ফলে এই ঋতুতে ভিটামিন ডি-র অভাব বেশি পরিমাণে দেখা দিতে পারে। জেনে নিন ভিটামিন ডি-র অভাবে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে এবং কীভাবেই বা বর্ষায় শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ বৃদ্ধি করবেন।
ভিটামিন ডি-র অভাবে শারীরিক সমস্যা । Physical Problems Due to Lack of Vitamin D :
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আমাদের শরীরে নানা রকমের অসুবিধার কারণ হয়ে উঠতে পারে। যার ফলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকা খুব প্রয়োজন। ভিটামিন ডি-র অভাবে আমাদের শরীরে ছোটো থেকে বড় হতে পারে। দেখে নিন আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে । Immune System Becomes Weak :
ভিটামিন ডি-র অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরে। এর ফলে যার শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব রয়েছে সে ঘন ঘন অসুস্থ্য হয়ে পরে। বর্ষাকালে সূর্যালোকের কমিটির জন্য শরীরে ভিটামিন ডি কম উৎপাদন হয়, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পরে এবং এই কারণের জন্যই বর্ষার মরশুমে চারিদিকে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হন জনসাধারণ।
ভিটামিন ডি-এর অভাব ক্লান্তি । Vitamin D Deficiency Causes Fatigue :
আপনি যদি কোনো কারণ ছাড়াই সব সময় ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে দ্রুত আপনার ভিটামিন ডি পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরে শক্তি যেমন কমে যায় তেমনই প্রভাব পড়ে মেজাজেও। এর ফলে ঘন ঘন ক্লান্তি বোধ হয়।
আরও পড়ুন : বর্ষায় ক্লান্তি-দুর্বলতা কিছুতেই কাটছে না? এই বিশেষ যোগা করলেই বাড়বে স্ট্যামিনা! চনমনে হবে শরীর!
মানসিক স্বাস্থ্য । Mental Health :
ভিটামিন ডি-র অভাব শরীরের মতো মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। ভিটামিন ডি-র অভাব বিষন্নতার কারণ হতে পারে। এছাড়াও মনোযোগের অভাবও ভিটামিনের অভাবে দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন : ঘন ঘন মাথা ঘুরছে? চোখে দেখছেন অন্ধকার? লো ব্লাড প্রেসার নয়, হতে পারে আরও গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা!
ত্বক ও চুলের ক্ষতি । Skin and Hair Damage :
অত্যধিক চুল পড়া এবং দুর্বল চুলের বৃদ্ধি ভিটামিন ডি এর অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। কম ভিটামিন ডি চুলকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন তাদের ব্যবহৃত শ্যাম্পুর জন্য চুল পড়ছে। যার ফলে তারা শ্যাম্পু পরিবর্তন করেন। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ দেয় না। এক্ষেত্রে শ্যাম্পু না বদলে ভিটামিন ডি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বর্ষাকালে সূর্যালোকের অভাবে শরীরে ভিটামিন ডি কম উৎপাদন হয় এবং যার ফলে এই মরশুমে চুল পরে বেশি। কেবল চুলই নয়, ভিটামিন ডি-র অভাবে ত্বকেও নানা সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকে ফুসকুড়ি এবং ব্রণের সমস্যা খুব বেড়ে যায় ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে।
ভিটামিন ডি ড্রাই ফ্রুটস এবং বাদাম । Vitamin D Dry Fruits and Nuts :
বর্ষাকালে প্রায় সব সময়ই মেঘাছন্ন থাকে আকাশ। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত সূর্যের রস্মি লাগে না। যেহেতু ভিটামিন ডি- র প্রধান উৎস হল সূর্যালোক, ফলে এই মরশুমে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তবে সুস্থ্য থাকতে হলে এই অভাবকে দূর করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর ভিটামিন ডি-র খামতি দূর করতে পারে ঠিক খাদ্যাভাস। এমন বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খেলে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-র খামতি পূরণ হবে। তবে বর্তমানে প্রায় সকলেই পড়াশোনা বা কাজের চাপে একটুও সময় পান না খাদ্যাভাসের দিকে নজর দেওয়ার জন্য। তাহলে উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু ড্ৰাই ফ্রুটস এবং বাদাম রয়েছে যাতে ভিটামিন ডি ভরপুর (Vitamin D Dry Fruits)। ফলে কাজের ফাঁকে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ড্ৰাই ফ্রুটস খেলেই শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব মিটবে। দেখে নিন এই তালিকায় রয়েছে কোন কোন ড্ৰাই ফ্রুটস।
১. কাজু । Cashew Nuts :
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ শুকনো ফল ও বাদামের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে কাজুবাদাম! এটি উচ্চ ভিটামিন ডি সম্পন্ন সুস্বাস্থ্য এক প্রকারের বাদাম। ভিটামিন ডি ছাড়াও কাজুতে রয়েছে ভিটামিন বি৬ (Vitamin B6), ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium), ম্যাঙ্গানিজ (Manganese) এবং ফসফরাস (Phosphorus)। ভিটামিন ডি-র অভাব পরিপূর্ণ করা বাদেও কাজু ওজন কমাতে সাহায্য করে, হৃদপিন্ড ভালো রাখে এবং শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
২. হ্যাজেলনাট । Hazelnut :
হ্যাজেলনাট যেমন সুস্বাদু তেমনই এর উপকারিতাও অনেক বেশি। এই বাদামে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন ডি। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ (Vitamin B6), ফোলেট (Folate), ফসফরাস (Phosphorus), পটাসিয়াম (Potassium) এবং জিঙ্ক (Zinc)। হ্যাজেলনাট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমানোর সঙ্গে প্রদাহও কমাতে সক্ষম।
৩. আলমন্ড । Almond :
আলমন্ডেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণের সঙ্গে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে, স্মৃতিশক্তিকে তীক্ষ্ণ রাখতে, মস্তিষ্ক সুস্থ্য রাখতে বিশেষভাবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, রোজ সকালে জলে ভেজানো ৪ থেকে ৫টা আলমন্ড খাওয়া উচিত। তবে আপনি যদি এভাবে আলমন্ড না খেতে চান, তাহলে বাদাম দুধ আপনার জন্য দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে।
৪. ডুমুর । Figs :
ডুমুর ভিটামিন ডি-এর একটি বড় উৎস। এছাড়াও এতে ফসফরাস (Phosphorus) এবং ক্যালসিয়ামও (Calcium) বেশি পরিমাণে থাকে। ডুমুর হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করে হাড় মজবুত রাখে। এই শুকনো ফলের মধ্যে ভিটামিন ডি বাদে অন্যান্য যেসব ভিটামিন পাওয়া যায় তা হল ভিটামিন সি (Vitamin C), ভিটামিন এ (Vitamin A) এবং ভিটামিন বি (Vitamin B), যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী।
৫. খেজুর । Dates :
ভিটামিন ডি-র অভাব পূর্ণ করার পাশাপাশি রক্তাল্পতার (Blood Pressure) সমস্যাও দূর করতে সক্ষম খেজুর। শরীরে আয়রনের (Iron) পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে এই ড্রাই ফ্রুটস। খেজুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি (Vitamin C) এবং ভিটামিন ডি (Vitamin D), যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে অর্থাৎ ত্বকের গঠন দৃঢ় রাখে। এর ফলে রোজ খেজুর খেলে সহজে বলিরেখা বা রিঙ্কেলস দেখা যাবে না আপনার ত্বকে। এছাড়াও আপনার ত্বক মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে খেজুর। এক্ষেত্রে রোজ দু থেকে তিনটি খেজুর খেতে পারেন।
বর্ষাকালে সূর্যালোকের অভাবের ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব পূরণ করার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সঠিক খাবার খাওয়া প্রয়োজন। শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ করার জন্য উপরোক্ত বাদাম এবং ড্ৰাই ফ্রুটস সকালে খেতে পারেন বা কাজের ফাঁকে খেতে পারেন। এতে আপনার খিদেও মিটবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবেন।