Saraswati Puja 2024 | জানেন কেন দেবী সরস্বতী শুক্ল বর্ণ? কেনই বা বিদ্যার দেবীর বাহন রাজহংস?
সরস্বতী দেবীর গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা। মায়ের হাতে বীণা থাকে বলেই দেবী সরস্বতীর আরেক নাম ‘বীণাপাণি’। জানুন সরস্বতী ঠাকুর সম্পর্কে না জানা তথ্য।
বাঙালির প্রাচীন ও অতি পরিচিত ঐতিহ্যমণ্ডিত পূজা হল বিদ্যার দেবী সরস্বতী পুজা (Saraswati Puja)। মাঘ মাসে শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবী (Saraswati Devi) পূজিত হন। বিদ্যার দেবী হওয়ায় এই পুজোতে বিশেষ ভাবে অংশ নেয় পড়ুয়ারা। ফলে বাঙালির ঘরে ঘরে তো বটেই, শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতেও সরস্বতী ঠাকুর (Saraswati Thakur) এর পুজো করা হয়। দেবী, শুক্ল বর্ণ, শুভ্র হংসবাহনা, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে অর্থাৎ একহাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক। তবে অনেকেই জানেন না দেবী সরস্বতীর সম্পর্কে অনেক তথ্য। যেমন-কেন তিনি শুক্ল বর্ণ? দেবী বীণাপানি কেন? দেবী হংসবাহনা কেন? দেবী সরস্বতীর হাতে পুস্তক কেন? আসুন সরস্বতী পুজা ২০২৪ (Saraswati Puja 2024) এর আগে জেনে নেওয়া যাক সরস্বতী দেবী সম্পর্কে।
ওম শ্রী সরস্বতী শুক্লবর্ণাং সস্মিতাং সুমনোহরাম্।।
সরস্বতী দেবী (Saraswati Devi) শুক্ল বর্ণা। অর্থাৎ শুক্লবর্ণ, সাদা হল ভাল গুণের প্রতীক, স্বচ্ছতা র প্রতীক, নির্মলতার প্রতীক। পবিত্র গীতার চতুর্দশ অধ্যায়ের শ্লোকে আছে, ‘তত্র সত্ত্বং নির্মলাত্বাৎ’ অর্থাৎ সত্ত্ব, তমো ও রজোগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ অতি পবিত্র গুণ। স্বচ্ছতার প্রতীক, নির্মলতার প্রতীক। আবার ওই অধ্যায়ের ১৭ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং’ অর্থাৎ সত্ত্বগুণে জ্ঞান লাভ হয়। তাই জ্ঞানময়ী সর্ব শুক্লা দেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তার গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা। পবিত্রতার মূর্তি আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী। অর্থাৎ জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লাদেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তাঁর গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা অর্থাৎ যার কোন দোষ নেই।
বীণা পুস্তক রঞ্জিত হস্তে।।
দেবী সরস্বতীর আরেক নাম ‘বীণাপাণি’। এই বীণার জীবন ছন্দময়। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পায়। বীণার সুর অত্যন্ত মধুর। তাই বিদ্যার্থীদেরও মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর ও সঙ্গীতময় হয়। সেই কারণেই সরস্বতী ঠাকুর (Saraswati Thakur) এর হাতে বীণা বিরাজ। এছাড়া 'পুস্তক' অর্থাৎ জ্ঞান ও বিদ্যা। আর বিদ্যার্থীদের লক্ষ্য এই জ্ঞান অন্বেষণ। আর জ্ঞান ও বিদ্যার অন্বেষণের জন্য জ্ঞানের ভান্ডার ‘বেদ’ তার হাতে রয়েছে। সেই বেদই বিদ্যা।
'হংসবাহনা' ।।
জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর বাহন রাজহংস। জানা যায়, হাঁস অসারকে ফেলে সার গ্রহণ করতে পারে। কাদায় মিশ্রিত স্থান থেকে তার খাদ্য খুঁজে গ্রহণ করতে পারে একমাত্র হাঁসই। দুধ ও জলের মিশ্রণ থেকে জল ফেলে শুধু দুধটুকুও গ্রহণ করতে পারে হাঁস। দেবী সরস্বতীর সঙ্গে পূজিত হয়ে সবাই যেন অসার, অকল্যাণকরকে পরিহার করে নিত্য পরমাত্মাকে গ্রহণ করে এবং পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে তারই শিক্ষা দেয় হাঁস। আর তাই দেবী হংসবাহনা।
দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে জানা যায়, পরম কুস্মন্দেরে প্ৰথম অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। তিনি বিষ্ণুর জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী। প্রথমে ব্রহ্মা দেবী সরস্বতীর পুজো করেন। পরে সরস্বতী পুজা (Saraswati Puja) জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায়, তিনি নারায়ণের থেকে সৃষ্টি হন তাই তিনি নারায়ণকে স্বামী হিসেবে ভাবতে লাগেন। পরে তিনি গঙ্গার দ্বারা অভিশাপ পান ও পুনরায় শিবের চতুর্থ মুখ থেকে সৃষ্টি হন ও ব্রহ্মাকে স্বামীরূপে গ্রহণ করেন। আর এরপরই মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর পুজো প্রবর্তন করেন শ্রী কৃষ্ণ।
- Related topics -
- অন্যান্য
- পুজো ও উৎসব
- লাইফস্টাইল
- সরস্বতী পুজো