Saraswati Puja 2024 | শ্বেতবর্ণা নয়, তিনি শ্যামবর্ণা! ভোগে দেওয়া হয় মনুষ্য উচ্ছিষ্ট খাবার! জানুন সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ দেবী মাতঙ্গী সম্পর্কে!

Monday, February 12 2024, 3:21 pm
highlightKey Highlights

সরস্বতী দেবীর তান্ত্রিক রূপ মাতঙ্গী দেবী। বিশ্বাস করা হয়, দেবী মাতঙ্গী তাঁর ভক্তদের অন্তরের দুর্নীতি, পরশ্রীকাতরতা এবং কুণ্ঠাবোধের সমস্ত ক্লেদ নিজ অঙ্গে গ্রহণ করে মানুষের অন্তর শুদ্ধি করেন।


মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে পূজিত হন সরস্বতী দেবী (Saraswati Devi)। এবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সরস্বতী পুজা (Saraswati Puja) ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে বাগদেবীর আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালি। সরস্বতী দেবী (Saraswati Devi) এর হাতে শোভা পায় বীণা। যা শুধুমাত্র সুরেরই নয়, বুদ্ধি এবং মেধারও প্রতীক। তবে দেশের কিছু অংশে সরস্বতী পূজিত হন অন্যরূপে। সেই রূপে সরস্বতী ঠাকুর (Saraswati Thakur) রক্তবসনা। এই রূপ মাতঙ্গী দেবী (matangi devi)।

দশমহাবিদ্যার নবম রূপ এবং দেবী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপই হলেন দেবী মাতঙ্গী। বাগদেবীর মতো তিনিও বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী। কিন্তু সরস্বতীর সঙ্গে মাতঙ্গী দেবীর (matangi devi) রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। তন্ত্র ধর্ম মতে, মাতঙ্গীর বাহ্যিক রূপ, ভোগ এবং অন্যান্য বৈশিষ্টের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। দেবী মাতঙ্গীর আরেক নাম হলো উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনী। পুরাণ মতে, মাতঙ্গ নামের এক মুনির আশ্রমে দেবতারা যখন সাধনা করছিলেন, তখন দেবী মাতঙ্গী আবির্ভূতা হয়ে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই দেবীর মাথায় চাঁদ শোভিত। শাস্ত্রজ্ঞরা বলেন, যখন দেবী মহাকালীর রুদ্ররূপিণী পাপনাশিনী রূপ এবং দেবী সরস্বতীর অসীম জ্ঞান একইরূপে মিলিত হয়, তখন সৃষ্টি হয় দেবী মাতঙ্গীর। এজন্যে বিশ্বাস করা হয়, একমাত্র জ্ঞান ও শক্তির মিলিত রূপই পারে পাপকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে পুণ্যের আলো ছড়িয়ে দিতে।


বাঙালির ঘরে ঘরে, শিক্ষা কেন্দ্রে পূজিত শ্বেতবর্ণা সরস্বতী ঠাকুর (Saraswati Thakur) এর একহাতে থাকে বীণা এবং অন্যহাতে পুস্তক। তবে দেবী মাতঙ্গী শ্যামবর্ণা। তার চার হাতে বীণা, বরাভয় বা অভয় মুদ্রা, নর -করোটি এবং খড়্গ বিরাজ। এই নর- করোটির উপর আবার বসে থাকে টিয়াপাখি। এই টিয়াপাখিই দেবীর বাহন। কথিত আছে টিয়া পাখি ভবিষ্যত্‍দ্রষ্টা এবং মহাজ্ঞানী। একদিকে যেমন দেবী সরস্বতী শ্বেতবসনা, অন্যদিকে মাতঙ্গী ঠিক বিপরীত- রক্তবসনা। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে একটি বৈশিষ্ট। রক্তবসন এই দেবীর পরিধান নয়। রজঃস্বলা নারীর মাসিক প্রবাহ দ্বারা রঞ্জিত বস্ত্রই মাতঙ্গীর পরিধান। শ্বেতবর্ণা সরস্বতী পুজা (Saraswati Puja) এবং দেবীর অন্যরূপ, মাতঙ্গীর পুজোর রীতি নিয়মেও রয়েছে ভিন্নতা। সরস্বতী দেবীকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় ফল, খিচুড়ি, বাসন্তী পোলাও, মিষ্টি এবং অন্যান্য নিরামিষ শুদ্ধ খাবার। তবে দেবী মাতঙ্গী মনুষ্য উচ্ছিষ্ট খাবার ভোগ হিসাবে গ্রহণ করেন। এমনকি সেই খাবার নিরামিষ হোক কিংবা আমিষ। আর এই ভোগের কারণেই দেবীর আরেক নাম ‘উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনী’। 


মা সরস্বতীর আশীর্বাদেই মানুষ জ্ঞান, বাচন ও শিল্প জ্ঞান অর্জন করে।বিশ্বাস করা হয় যে, যাদের উপর মা সরস্বতী তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন তারা শিল্প, সঙ্গীত এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচুর সাফল্য পান। এদিকে, শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করেন, দেবী মাতঙ্গী তাঁর ভক্তদের অন্তরের দুর্নীতি, পরশ্রীকাতরতা এবং কুণ্ঠাবোধের সমস্ত ক্লেদ নিজ অঙ্গে গ্রহণ করে মানুষের অন্তর শুদ্ধি করেন। মানুষের মধ্যেই তাঁর উপস্থিতি। এমনকি এই কারণেই মানুষকে অবহেলা করে উত্‍কৃষ্ট ভোগ তাঁকে নিবেদন করলেও, তিনি সন্তুষ্ট হন না।
বাঙালির ঘরে ঘরে এবং দেশের অধিকাংশ অংশেই সরস্বতী দেবী শ্বেতবর্ণা রূপেই পূজিত হন। তবে দেবী মাতঙ্গীরও পুজো করা হয় দেশের কিছু অংশে। যেমন, আসামের কামাখ্যার মূল মন্দিরের ভিতরে তান্ত্রিক দশমহাবিদ্যার দশ দেবীর আলাদা মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে নবম মহাবিদ্যা- দেবী মাতঙ্গী কন্যারূপে বিরাজমান। এছাড়া কর্ণাটকের বেলেগাওঁ, অন্ধ্রপ্রদেশের মাদানাপাল্লাতে, তামিলনাড়ুর নাঙ্গুর এবং মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়াতে রয়েছে দেবী মাতঙ্গীর মন্দির।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File