ISRO Chandrayaan 3 | মহাকাশে ভারত বনাম রাশিয়া! চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আগে পা রাখবে কে? চন্দ্রযান-৩ নাকি লুনা?
১১ই অগাস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলো রাশিয়ার চন্দ্রযান 'লুনা'। রাশিয়ার এই মহাকাশযানও চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে একই দিনে নামবে চাঁদে। কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে কোন দেশের লক্ষ্য পূরণ হবে তা নিয়ে শুরু জল্পনা।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গড়ার জন্য গত ১৪ই জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের (Satish Dhawan Space Center, Sriharikota) 'লঞ্চিং প্যাড' থেকে দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে ভারতের (India) মাটি ছেড়ে পাড়ি দেয় ইসরোর চন্দ্রযান-৩ (ISRO Chandrayaan 3)। পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের কক্ষপথে বর্তমানে প্রদক্ষিণ করছে চন্দ্রযান-৩। সময়ে সময়ে ইসরো জানাচ্ছে তার গতিবিধি। পাশাপাশি চন্দ্রযান-৩ পাঠাচ্ছে চাঁদ ও পৃথিবীর ছবিও। তবে এবার চন্দ্রযান-৩ এর আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়ে ফেলতে পারে রাশিয়ার (Russia) চন্দ্রযান!
আজ, ১১ই অগাস্ট, শুক্রবার সকালেই মহাকাশের উদ্দেশ্যে ভোস্টোচনি মহাকাশ লঞ্চপ্যাড (Vostochny Space Launch Pad) থেকে পাড়ি দিয়েছে রাশিয়ার লুনা ২৫ (Russian Luna 25) । প্রায় ৫ দশকের ব্যবধানে অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের পর চাঁদ ছোয়ার লক্ষ্যে মহাকাশযান পাঠিয়েছে রাশিয়া। সূত্রের খবর, চাঁদের বলয়ে পৌঁছতে রুশ মহাকাশযানটির লাগবে প্রায় পাঁচদিন। এরপর প্রায় ৫ থেকে ৭ দিন চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে কক্ষপথে নীচে নামতে থাকবে রাশিয়ান চন্দ্রযান। এরপর ২৩ সে অগাস্ট অর্থাৎ যেদিন ইসরোর চন্দ্রযান-৩ এরও চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা সেদিনই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে চলেছে লুনা।
প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সবথেকে কাছে অবতরণ করেছিল নাসার সার্ভেয়ার-৭ (NASA's Surveyor-7)। ১৯৬৮ সালে সেদিন ৪০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের কাছে অবতরণ করেছিল নাসার (NASA) এই মহাকাশযান। চন্দ্রযান-৩ এর আগে চন্দ্রযান ২ (Chandrayaan 2) এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের চেষ্টা করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization)। তবে চন্দ্রযান-২ মডেলটি সম্পূর্ণ সফলতা পায়নি। অল্পের জন্য দক্ষিণ মেরুতে ঠিক ভাবে অবতরণ করতে পারেনি চন্দ্রযান-২ মডেল। তবে সম্পূর্ণ অসফল কিন্তু হয়নি এই মুন মিশন। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানান, চন্দ্রযান-২ মডেলের ৯০ শতাংশ লক্ষ্যই পূরণ হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে গিয়ে মহাকাশযানটি ধ্বংস হলেও চাঁদের থেকে অনেক তথ্য এই মিশনের থেকে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই মিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এবার চন্দ্রযান-৩ মিশনে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।
ইসরো সূত্রে খবর, গত বুধবারই চাঁদে অবতরণ করার আরও এক ধাপ পেরোয় চন্দ্রযান-৩ (ISRO Chandrayaan 3)। ৭৪ কিমি x ১৪৩৭ কিমি কক্ষপথে নিক্ষেপ করা হয় ইসরোর মহাকাশযানকে। তবে পাশাপাশি জানানো হয়, যে কোনও রকম পরিস্থিতিতেই চাঁদে ল্যান্ড করতে পারবে চন্দ্রযান-৩ এর 'বিক্রম' ল্যান্ডার (Vikram Lander)। ইসরো প্রধান এস সোমনাথ (S Somnath) বলেন, চন্দ্রযান-৩ এর 'বিক্রম' ল্যান্ডারের ডিজাইন এমনভাবেই করা হয়েছে যে, যেকোনও ধরনের পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবে এটি। যদি সব ফেল করে যায়, সব সেন্সর ফেল করে যায়, কিচ্ছু কাজ না করে, তাহলেও বিক্রম ল্যান্ড করতে পারবে চাঁদের মাটিতে। ইসরো চেয়ারম্যান আরও জানান, আড়াআড়ি ভাবে রাখা 'বিক্রম' ল্যান্ডারকে উল্লম্বভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করানো হবে। অরবিটার (Orbiter) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় আড়াআড়ি ভাবে এগোবে ল্যান্ডারটি। এরপর বেশ কয়েকটি ধাপে চাঁদের মাটিতে লম্বালম্বি অবতরণ করবে সেটি।
তবে সব প্রস্তুতি, সব আশা, সব পরিকল্পনাই হয়তো বিফলে যেতে চলেছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছোঁয়ার জন্য বলতে গেলে চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে 'প্রতিযোগিতায়' নেমেছে রাশিয়ার 'লুনা'। কিন্তু 'লুনা'কে কার্যত স্বাগতই জানিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। প্রতিপক্ষ রসকসমস-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান সংস্থা ইসরো। টুইট বার্তায় রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস-কে অভিনন্দন জানিয়ে ইসরো লেখে, মহাকাশ যাত্রায় আরও একটি মিটিং পয়েন্ট পাওয়ায় বেশ আনন্দিত। পাশাপাশি, চন্দ্রযান ৩ এবং লুনা ২৫ যাতে তাদের লক্ষ্য পূরণে সফল হয় তার জন্য জানানো হয় শুভেচ্ছাও।
তবে কোন মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরু আগে ছুঁতে পারবে তা নিয়ে তৈরী হয়েছে বেশ জল্পনা। কারণ ইসরো সূত্রে খবর, চন্দ্রযান ৩ যখন চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে, তখন বন্ধ হবে প্রোপালশন মডিউলের ইঞ্জিন। এরপর 'বিক্রম' ল্যান্ডারের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে নামবে 'প্রজ্ঞান'। চাঁদের মাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে পালকের মতো করে সফ্ট ল্যান্ডিং করবে বিক্রম। এর জন্য লাগবে মোট ২০ মিনিট। বিক্রম চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর খুলে যাবে দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে 'প্রজ্ঞান'। কিন্তু এদিকে সূত্রের খবর, রাশিয়ার চন্দ্রযান 'লুনা'ও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে প্রায় একই সময়। অনেকেই বলছেন কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে 'লুনা'কে হারাতে পারে চন্দ্রযান-৩। আবার অনেকের মতে চাঁদের দক্ষিণ মেরু আগে ছোঁবে রাশিয়া। ফলত ২৩ সে অগাস্ট কোন দেশ তার লক্ষ্য আগে পূরণ করতে পারবে সেইদিকেই নজর গোটা বিশ্বের।