Sunita Williams | তৃতীয় বারের জন্য মহাকাশে পাড়ি দেওয়া হলো না ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামসের! শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেল অভিযান!
৭ই মে, মঙ্গলবার তৃতীয় বারের জন্য মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল সুনীতা উইলিয়ামসের।এই নতুন মহাকাশযানের প্রথম মানব অভিযানে উড়ে যাওয়া প্রথম মহিলা হিসাবে ইতিহাস তৈরি করতেন সুনিতা। এই অভিযানে সুনীতার সঙ্গী ছিলেন বুচ উইলমোর। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই অভিযান আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
মহাকাশ অভিযানে আগে বিশ্বের নজর কেড়ে রেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস (Sunita Williams)। এরপর ফের তৃতীয় বারের মতো মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল মহাকাশচারীর। তবে প্রযুক্তিগত ত্রুটির জেরে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেল সেই অভিযান। মঙ্গলবারই তৃতীয় বারের জন্য মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। এই অভিযানে সুনীতার সঙ্গী ছিলেন বুচ উইলমোর। কিন্তু মহাকাশে ওড়ার আগেই স্থগিত হয়ে গেল সুনীতাদের যাত্রা। সূত্রের খবর, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই অভিযান আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কবে আবার এই মহাকাশ অভিযান হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
সুনীতা উইলিয়ামসের তৃতীয় মহাকাশ অভিযান :
৭ই মে, মঙ্গলবার বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়ে, তৃতীয়বারের মতো মহাকাশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল সুনীতা উইলিয়ামসের। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা বেজে ৪ মিনিটে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালের কেনেডি স্পেস সেন্টার (Kennedy Space Center in Cape Canaveral) থেকে বোয়িং স্টারলাইনারের উৎক্ষেপণ নির্ধারিত ছিল। ১৫ই মে তাঁদের পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। অন্যান্য মহাকাশযানগুলি সাধারণত সমুদ্রে ল্যান্ড করে। তার পরিবর্তে স্টারলাইনারের স্থলে নামার কথা ছিল। উল্লেখ্য, সিএসটি-২০০ বোয়িং স্টারলাইনার স্পেস ক্যাপসুলের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয় ২ বছর আগে। অবশ্য কখনও মানুষ চাপিয়ে এই মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়নি। এই আবহে আজ অভিযানের কিছুক্ষণ আগেই তা ভেস্তে যায়। নাসা জানিয়েছে, উড়ানের ৯০ মিনিট আগে বিপত্তি বাধে। মহাকাশযানের অক্সিজেন রিলিফ ভালভে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, এই ভালভের মাধ্যমে বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই আবহে সুনীতা উইলিয়ামস (Sunita Williams) এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারিকের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সেই অভিযান স্থগিত করা হয়।
কিন্তু, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা হয়েছে। ফের কবে উৎক্ষেপণ হবে, তার কোনও নতুন তারিখও ঘোষণা করেনি নাসা। রিপোর্ট অনুযায়ী, আপাতত ২৪ ঘণ্টার জন্য অভিযান পিছিয়ে গিয়ে থাকতে পারে এই মহাকাশ অভিযান। মঙ্গলবার রাতে ফের অভিযান শুরু হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নয়া দিন ক্ষণের ঘোষণা হয়নি এখনও। জানা গিয়েছে, অ্যাটলাস ভি রকেটে করে সিএসটি-২০০ বোয়িং স্টারলাইনার স্পেস ক্যাপসুলটিকে মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠানোর কথা ছিল।
ভারতীয়-মার্কিন মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস :
বিশ্বের মহাকাশচারীদের কথা উঠলে প্রথম যেক'টা মানুষের কথা উঠে তার মধ্যে অন্যতম সুনীতা উইলিয়ামস। ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেই সুনীতা উইলিয়ামস সম্পর্কে (about sunita williams) কমবেশি জানেন। ভারতীয়-মার্কিন মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস এর আগে মহাকাশে ৩২২ দিন কাটিয়েছেন। এক সময় মহিলা হিসেবে সর্বোচ্চ সময় স্পেসওয়াকের রেকর্ড তাঁর দখলেই ছিল। পরে তাঁর সহকর্মী পেগি হুইটসন তাঁর রেকর্ড ভেঙেছিলেন। সুনিতা উইলিয়ামসকে বলা হয় মহিলা মহাকাশচারীদের পোস্টার গার্ল। ১৯৬৫ সালের ১৯সে সেপ্টেম্বর সুনীতা জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমেরিকার ওহিওতে। সুনীতা উইলিমাসের বাবা গুজরাটি এবং মা স্লোভানিয়ার মানুষ। ১৯৮৩-তে সুনীতা উইলিয়ামস ম্যাসাচুয়েটসের নিধাম হাইস্কুল থেকে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর তিনি পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে ইউনাইটেড স্টেটস নাভাল অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতকতা লাভ করেন। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি হাসিল করেন। ১৯৮৭-তে তিনি আমেরিকার নেভিতে ছ মাসের অস্থায়ী চাকরিতে ডাইভিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৯৮-তে মহাকাশ যাত্রার জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন সুনীতা উইলিয়ামস। একটি সাক্ষাৎকারে সুনীতা বলেছিলেন যে, তিনি যখন প্রথমবার মহাকাশে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ভগবত গীতা, ভগবান গণেশের একটি মূর্তি এবং কিছু সিঙ্গাড়া।
২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রথমবার মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুনীতা। ২০০৭ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মহাকাশে ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে থাকাকালীন, তিনি চারবারে মোট ২৯ ঘণ্টা ১৭ মিনিট, মোট সাতবার স্পেসওয়াকে করে রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। দ্বিতীয় মহাকাশ যাত্রা করেছিলেন ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। মহাকাশে ছিলেন ওই বছরের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। উল্লেখ্য, সবথেকে দীর্ঘতম মহাকাশে স্পেস ওয়াক করার রেকর্ডও সুনীতার দখলে। ১০. ৫০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট তিনি নাগাড়ে মহাকাশে হেঁটেছেন। পাশাপাশি দুবার মহাকাশ যাত্রায় সুনীতা উইলিয়ামস মোট ৩২২ দিন মহাকাশে থেকেছেন। এমন মানুষের পুরস্কারের ঝুলিও ভরা থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই সেই সূত্রে সুনীতা উইলিয়ামস ডিফেন্স সুপিরিয়র সার্ভিস পদক পেয়েছেন দু-বার। নেভি কমেন্ডেশন পদকও পেয়েছেন দুবার। এছাড়াও পেয়েছেন 'দ্য লিজিয়ন অফ মেরিট অ্যান্ড দ্য মেরিন ক্রপ অ্যাচিভমেন্ট' পদক। স্বাভাবিকভাবেই সুনীতা উইলিয়ামসের জীবনী (Sunita Williams Biography) সকলকে অনুপ্রাণিত করে।
প্রসঙ্গত, সুনীতা উইলিয়ামস সম্পর্কে (about sunita williams) আশ্চর্য করা তথ্য এখানেই শেষ নয়। এদিন স্টারলাইনার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ হলে, এই নতুন মহাকাশযানের প্রথম মানব অভিযানে উড়ে যাওয়া প্রথম মহিলা হিসাবে ইতিহাস তৈরি করতেন সুনীতা। অর্থাৎ সুনীতা উইলিয়ামসের জীবনী (Sunita Williams Biography)-তে যোগ হতো নয়া সাফল্য। উইলিয়ামস এবং উইলমোরের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৮ দিন থাকার কথা ছিল। উৎক্ষেপণের জন্য মহাকাশযানটি পুরোপুরি তৈরি ছিল। ৫৮ বছর বয়সি সুনীতা এবং ৬১ বছর বয়সি ব্যারি মহাকাশযানে নিজ নিজ আসনে বসেও গিয়েছিলেন। পরে টেকনিশিয়ান পাঠিয়ে দু'জনকে বের কের আনা হয় মহাকাশযানের ভিতর থেকে। এদিকে এই মহাকাশ অভিযানটি সুনীতা উইলিয়ামসের জীবনের তৃতীয় হওয়ার কথা। এর আগে ৩২২ দিন মহাকাশে কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে সুনীতার। উল্লেখ্য, স্পেস ট্যাক্সিকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে ছিল ‘ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স এলএলসি’ (ULC)-র অ্যাটলাস-৫ রকেট। দীর্ঘ দিন ধরেই বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ সফরের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু নানা প্রযুক্তিগত সমস্যায় ভুগছিল বোয়িং। নিরাপদে তারা মহাকাশে মানুষ পৌঁছে দিতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মঙ্গলবার সুনীতাদের অভিযান বাতিল হওয়ার পর সেই প্রশ্ন আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।