দেশ

Shakuntala Railways | স্বাধীনতার বহু বছর পরেও আজও দেশের এই একমাত্র রেলপথ ব্রিটিশদের দখলে! জানুন শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক সম্পর্কে!

Shakuntala Railways | স্বাধীনতার বহু বছর পরেও আজও দেশের এই একমাত্র রেলপথ ব্রিটিশদের দখলে! জানুন শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক সম্পর্কে!
Key Highlights

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে চাষ হওয়া তুলো মুম্বই বন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছিল শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক। এই রেলপথই আজও ব্রিটিশের দখলে।

ভারতের অন্যতম পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো রেল ব্যবস্থা। ভারতের রেলওয়ে ব্যবস্থা এশিয়ার বৃহত্তম রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং এক ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সারা দেশে অসংখ্য ট্রেন চলাচল করে। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ ভারতীয় রেলওয়েতে কর্মরত এবং ভারতীয় রেল বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম বাণিজ্যিক সংস্থা। তবে বলা বাহুল্য, দেশে রেল পরিষেবা নিয়ে আসে ব্রিটিশ সরকার। ১৮৫০ নাগাদ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বোম্বে থেকে থানে পর্যন্ত ভারতে প্রথম  রেলওয়ে ট্র্যাক স্থাপন করে। এরপর স্বাধীনতা পাওয়ার পর রেলওয়ের দায়িত্বভার চলে যায় ভারত সরকারের হাতে। তবে স্বাধীনতার বহু বছর পেরিয়ে গেলেও আজও দেশের এমন এক রেলপথ রয়েছে যা এখনও ব্রিটিশদের দখলে। এই ট্র্যাকটি শকুন্তলা রেলওয়ে (Shakuntala Railways) ট্র্যাক নামে পরিচিত।

 ভারতীয় রেলওয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস । Brief history of Indian Railways :

১৮৩২ সালে ভারতে রেলওয়ের ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন হেনরি ড্যানিয়েল নামে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। এরপর ১৮৫০ নাগাদ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বোম্বে থেকে থানে পর্যন্ত ভারতে প্রথম  রেলওয়ে ট্র্যাক স্থাপন করে। ১৮৫৭-১৯৪৭ এর মধ্যে ৩৪ কিমি রেলপথ দ্রুত প্রসারিত হয়ে ভারতের প্রধান শহর ও অঞ্চলগুলিকে সংযুক্ত করেছিল। এই নেটওয়ার্কটি উপমহাদেশ জুড়ে পণ্য এবং মানুষ পরিবহনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এরপর ভারত স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পর ১৯৫১ সালে বিভিন্ন রেল কোম্পানিকে একক ব্যবস্থাপনায় একত্রিত করে ভারতীয় রেল জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে প্রথম বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভ চালু করা হয়েছিল। ২০০০ সাল নাগাদ শতাব্দী এবং রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো উচ্চ-গতির ট্রেনের পাশাপাশি ডেডিকেটেড মালবাহী করিডোর চালু করা হয়। ২০১৪  সালে ভারতীয় রেলওয়ে "স্বচ্ছ রেল, স্বচ্ছ ভারত" (ক্লিন রেল, ক্লিন ইন্ডিয়া) চালু করে। বর্তমানে ভারতীয় রেল অবকাঠামো আপগ্রেড, বুলেট ট্রেন প্রবর্তন এবং যাত্রী সুবিধাগুলি উন্নত করার চলমান প্রচেষ্টা সহ বিশ্বের বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।

শকুন্তলা রেলওয়ে । Shakuntala Railways :

 ভারতের বেশিরভাগ প্রধান রেল পরিষেবা ব্রিটিশদের দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল, ভারত সরকার স্বাধীনতার পরে  সেই রেলওয়ে পরিষেবা পুরোপুরি নিজের হাতে নেয়। দেশ স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত ভারতে প্রতি বছর হাজার- হাজার কোটি টাকা খরচ করে ট্রেন পরিষেবা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি তার আধুনিকীকরণেরও ব্যবস্থা চলছে। ভারতীয় রেলওয়েতে ক্রমাগত আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা চলছে। হাই স্পিড রেল, বন্দে ভারত যা  বুলেট ট্রেনের সমকক্ষ হিসেবে এখন ভারতীয় রেলওয়ে ট্র্যাকে চলে। এছাড়াও আরও উন্নতর  পরিষেবা আনার নিরন্তর চেষ্টা চলছে। তা ছাড়া, ম্যাগনেট পাওয়ার ব্যবহার করে হাই-স্পিড ট্রেন আনারও চেষ্টা করছে রেল বিভাগ। কিন্তু এখনও দেশে একটি মাত্র রেললাইন রয়েছে যা এখনও ব্রিটিশ কোম্পানির অধীনে রয়েছে। এমনকি ভারত সরকার এখনও সেই রেলওয়ে ট্র্যাকের পরিষেবার জন্য ব্রিটিশদের কোটি টাকা দিচ্ছে। এই রেলপথ শকুন্তলা (Shakuntala) রেলওয়ে ট্র্যাক।

মহারাষ্ট্র রাজ্যের ইয়াভাতমাল এবং মূর্তিজাপুরের মধ্যে একটি ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ শকুন্তলা (Shakuntala) রেলপথ রয়েছে। মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে তুলা চাষ করা হতো। এখানকার তুলা মুম্বই বন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ট্র্যাক ১৯১০ সালে  তৈরী করা হয়েছিল। ব্রিটেনের ক্লিক নিক্সন অ্যান্ড কোম্পানি এই রেলপথ নির্মাণের জন্য সেন্ট্রাল প্রভিন্স রেলওয়ে কোম্পানি (CPRC) প্রতিষ্ঠা করে। এই ট্র্যাকের নির্মাণ কাজ ১৯০৩ সালে শুরু হয়েছিল, যা ১৯১৬ সালে শেষ হয়েছিল। এই ট্র্যাকে শুধুমাত্র একটি ট্রেন চলত যা শকুন্তলা প্যাসেঞ্জার নামে পরিচিত ছিল। এই কারণেই এই রেল লাইনটি শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালের পর এই ট্রেনে বাষ্পের পরিবর্তে ডিজেল ইঞ্জিন বসানো হয়। এই ট্রেনটি ১৭টি স্টেশনে থামত এবং ৬-৭ ঘন্টায় এই যাত্রা শেষ করত।

শকুন্তলা রেললাইনে প্রতিদিন একটি মাত্র পর্যটক ট্রেন চলতো। অমরাবতী জেলার ইয়াভাতমাল এবং অচলপুরের দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার এবং সড়কপথে টোল বেশি।  এই দুই গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা দৈনিক সেই খরচ বহন করতে পারে না। শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে ১৯২১ সালে শুধুমাত্র একটি ট্রেন, ম্যানচেস্টারে তৈরি একটি জেডডি-স্টিম ইঞ্জিন, এই গ্রামগুলির লাইফলাইন হিসাবে চলত। ৭০ বছর পর ১৫ ই এপ্রিল, ১৯৯৪ এ আসল ইঞ্জিনটি প্রতিস্থাপনের পর একটি ডিজেল মোটর ইঞ্জিন ইনস্টল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গিলিক-নিক্সন কোম্পানি ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপনিবেশিক প্রশাসনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সেন্ট্রাল প্রভিন্সেস রেলওয়ে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। এই শকুন্তলা ন্যারো গেজ রেলপথের উদ্দেশ্য ছিল ইয়াভাতমাল থেকে বোম্বে  (মুম্বই) পর্যন্ত তুলো পরিবহন করা। এরপর যা  পাঠানো হতো ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। মূলত একটি মালবাহী ট্রেনের রুট, এটি পরে জনগণের পরিবহনের জন্য  রেলপথ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। ৭ জনের একটি  স্টাফদল বর্তমানে সিগন্যালিং, টিকিট বিক্রি এবং গাড়ি থেকে লোকোমোটিভের ডিকপলিং সহ সমস্ত রেলওয়ের কাজ পরিচালনা করে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু যবতমাল-মূর্তিশাপুর-অচলপুর রেললাইনকে ন্যারো গেজ থেকে ব্রড গেজে রূপান্তরের জন্য ১.৫০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন।

কিন্তু আজও এটি  ব্রিটিশ কোম্পানির পরিচলনাধীন এবং মালিকানাধীন।  ভারত স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ রেলওয়ে জাতীয়করণ করা হলে, শুধুমাত্র এই লাইনটি ওই ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হয়নি। স্বাধীনতার পরে, ভারতীয় রেলওয়ে ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করে। এর অধীনে ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে প্রতি বছর কোম্পানিকে রয়্যালটি দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটি প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা রয়্যালটি পায়। তবে বিপুল রয়্যালটি পাওয়ার পরও ব্রিটিশ কোম্পানি এই ট্র্যাকটির রক্ষণাবেক্ষণে কোনো নজর দেয় না, যার কারণে এই ট্র্যাকটি সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমনকি এটিতে চলমান শঙ্কুতলা এক্সপ্রেসও ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও এই ট্রেন ফের চালানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ভারতীয় রেল এই ট্র্যাকটি আবার কেনার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।