বিনোদন

Satyajit Ray | প্রথম রঙিন বাংলা চলচ্চিত্র তৈরী করা থেকে 'পথের পাঁচালী'র জন্য জীবন বীমা বিক্রি! রইলো সত্যজিৎ রায় সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য!

Satyajit Ray | প্রথম রঙিন বাংলা চলচ্চিত্র তৈরী করা থেকে 'পথের পাঁচালী'র জন্য জীবন বীমা বিক্রি! রইলো সত্যজিৎ রায় সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য!
Key Highlights

প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বাঙালির কাছে একটি আবেগ। আন্তর্জাতিক সিনেমার আলোচনা তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাঁকে নিয়ে চর্চায় মশগুল আপামর দেশবাসী। তবে এত আলোচনার মাঝেও অস্কারজয়ী পরিচালকের জীবনের নানা তথ্য, নানা ঘটনা যেন একটু আড়ালেই রয়ে গিয়েছে।

১৯২১ সালের ২রা মে তারিখটা বাংলা সিনেমার নবজন্মদাতার জন্মদিন! বাংলা সিনেমা যাঁর হাত ধরে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে চলেছে, সেই কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন (satyajit ray birthday)। এই  মানুষটি ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটি নতুন তরঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন এবং সেটিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সারাবিশ্বের চলচ্চিত্র নির্মাতারা আজও এই প্রতিভার সম্মান করে। এমনকি আজও বাংলা সিনেমার জগতে সত্যজিৎ রায়কে টেক্কা দিতে পারবে এমন চলচ্চিত্র নির্মাতা নেই বললে ভুল হবে না। প্রত্যেক বছর সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকীর দিন ভক্তরা অনেকেই তাঁর প্রতিভা, সত্যজিৎ রায়ের সেরা চলচ্চিত্র (satyajit ray best movies), সত্যজিৎ রায়ের জেতা পুরস্কার (awards won by satyajit ray) এসব নিয়ে নানান আলোচনা করে থাকেন। অনেকে আবার এই বিষয়ে দীর্ঘ লেখা লিখে সোশ্যাল মাধ্যমে পোস্টও করেন। তবে অনেকেই সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে বেশ কিছু আকর্ষণীয় তথ্য জানেন না।

সত্যজিৎ রায়ের জীবনী । Biography of Satyajit Ray :

সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২রা মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সুকুমার রায় এবং মাতার নাম সুপ্রভা রায়। সত্যজিৎ রায়ের বয়স মাত্র তিন বছর থাকাকালীন তাঁর পিতা সুকুমার রায় মারা যান। সত্যজিৎ রায় কলকাতার বাল্লিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে বিএ সম্পন্ন করেন। ছোটবেলার থেকেই সত্যজিৎ রায়ের আগ্রহ ছিল চাররুকলার দিকে। সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন বেশ কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরেও সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক। তাঁর লেখা অসংখ্য ছোট গল্প, প্রবন্ধ এবং উপন্যাস রয়েছে। তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার পাশাপাশি, ছিলেন পলিম্যাথ, গ্রাফিক ডিজাইনার-সহ আরও বহু কিছু।বংশসূত্রেই সাহিত্যপ্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন সত্যজিৎ। ১৯৬০ সালে সন্দেশ পত্রিকার পুনঃপ্রকাশ লগ্নে সত্যজিৎ রায় সৃষ্টি করেন ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়ো-র মতো অসামান্য অনবদ্য চরিত্র। এছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের সেরা চলচ্চিত্র (satyajit ray best movies) এর মধ্যে অন্যতম সৃষ্টি হলো 'অপু ট্রিলজি', “পথের পাঁচালী,” “অপরাজিতো,” এবং “অপুর সংসার”।

সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে অজানা তথ্য । Unknown Facts about Satyajit Ray :

কেবল বাংলা সিনেমারই নয়, গোটা বিশ্বের অনবদ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। তবে কিংবদন্তি সম্পর্কে এমন বেশ কিছু আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে যা জানেন না অনেকেই। সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন (satyajit ray birthday) উপলক্ষ্যে সিনেমার কিংবদন্তীকে স্মরণ করার পাশাপাশি জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু অজানা বিষয় সম্পর্কে।

'পথের পাঁচালী'র জন্য বিক্রি করেছিলেন জীবন বীমা :

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী বই (pather panchali book) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই গল্পকে চলচ্চিত্রের রূপ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি  করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায় 'পথের পাঁচালী' নির্মাণকে অলৌকিক ঘটনা বলতেন। এই মাস্টারপিসটি ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরেছিল। তবে এই সিনেমার জন্য সত্যজিৎ রায় বিক্রি করেছিলেন জীবন বীমা! পাঁচালী বই (pather panchali book) এর অনুকরণ চলচ্চিত্র বানানোর জন্য আর্থিক দিক বজায় রেখে, সঠিক কাস্ট এবং শ্যুটিং লোকেশন নির্বাচন করা, এটি একটি অবিশ্বাস্য কাজ ছিল। জানা যায় , ছবিটিতে আর্থিক তহবিলের অভাব দেখা দিলে, সত্যজিৎ তাঁর জীবন বীমা পলিসি বিক্রি করে দেন। এমনকি সেইসময় তাঁর স্ত্রী তাঁর গয়নাও বন্দক দিয়েছিলেন।

প্রথম রঙিন বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ :

সত্যজিৎ রায়ের শ্রেষ্ঠ কাজগুলির মধ্যে একট হলো 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' (১৯৬২)। উল্লেখ্য, এটিকে প্রথম রঙিন বাংলা চলচ্চিত্র এবং প্রথম ভারতীয় নৃতত্ত্ব চলচ্চিত্র হিসেবেও গণ্য করা হয়। 'কাঞ্চনজঙ্ঘা', পার্বত্য অঞ্চলে স্থাপিত, একটি আদি অবস্থানে বিংশ শতাব্দীর সমস্যাগুলিকে ঘিরে তৈরি চলচ্চিত্র। দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যাগুলো আমরা লুকানোর চেষ্টা করি সেগুলো সবার সামনে প্রকাশ করেছেন সিনেমার মাধ্যমে।

নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্র :

১৯৭১ সালে 'সিকিম' নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এটি প্রাথমিকভাবে সিকিমের চোগিয়ালে চালু করা হয়েছিল। যদিও চিন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ঐশ্বরিক ভূমির এখতিয়ারকে হুমকি দিয়েছিল। এরপর ১৯৭৫ সালে সিকিম অবশেষে ভারতের নিয়ন্ত্রণে এলে এই ডকুমেন্টারিটি ভারত সরকার নিষিদ্ধ করে। যদিও ২০১০ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে কিংবদন্তি অভিনেতার কেরিয়ার শুরু :

সত্যজিৎ রায় অপুর সংসার (১৯৬৯) চলচ্চিত্রের হাত ধরে সিনেমা জগতে প্রথম পা রাখেন কিংবদন্তি অভিনেতা শর্মিলা ঠাকুর এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরে  তারা সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সৌমিত্র অভিনীত সত্যজিৎ রায়ের কিছু যুগান্তকারী সিনেমার মধ্যে রয়েছে 'সোনার কেল্লা', 'জয় বাবা ফেলুনাথ', 'চারুলতা', 'ঘরে বাইরে', 'অশনি সংকেত', 'দেবী', 'অভিজান', 'আরণ্যের দিন রাত্রি' এবং ' গণশত্রু'। 'অপুর সংসার'-এর পর শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গেও বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়।

চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট পান :

বিশ্ব চলচ্চিত্রের আরেক আইকন চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত হন সত্যজিৎ রায়। অনেকে বিশ্বাস করেন যে এই সম্মানটি আজীবন কৃতিত্বের জন্য ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ রায়ের জেতা পুরস্কার (awards won by satyajit ray) অস্কারের চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ। উল্লেখ্য, এছাড়াও সত্যজিৎ রায় ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত হন।  

জাতীয় পুরস্কার :

অসাধারণ সিনেম্যাটিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, সত্যজিৎ সেরা পরিচালকের জন্য ছয়টি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটি এখনও একটি অতুলনীয় অর্জন। 'চিড়িয়াখানা' (১৯৬৭), 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' (১৯৬৮), 'প্রতিদ্বন্দ্বী' (১৯৬৯), 'সোনার কেল্লা' (১৯৭৪), 'জন অরণ্য' (১৯৭৫) এবং 'আগন্তুক' (১৯৯১) এর জন্য তিনি এই পুরস্কার জিতেন। এমনকী তিনি দু’বার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন।

ভারতের প্রথম ছবি হিসাবে টিজার ক্যাম্পেন হয়েছিল 'পথের পাঁচালী'র :

হলে সিনেমার প্রচারের একটা বড় অংশ হয়ে উঠেছে টিজার। সত্যজিৎ রায়ের তৈরী পথের পাঁচালী ভারতের প্রথম ছবি, যা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে টিজার ক্যাম্পেন হয়েছিল।

ফিল্ম ক্লাব প্রতিষ্ঠা :

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার আগে, সত্যজিৎ ১৯৪৭ সালে কলকাতায় প্রথম চলচ্চিত্র ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। 'ব্যাটলশিপ পটেমকিন' ছিল এই ক্লাবে প্রদর্শিত প্রথম চলচ্চিত্র। এমনকী তিনি সংবাদপত্রের জন্য সিনেমা নিয়ে অনেক নিবন্ধ লিখেছিলেন এবং দুর্দান্ত চিত্রনাট্য তৈরি করতে শুরু করেছিলেন।

প্রবাদ প্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বাঙালির কাছে একটি আবেগের নাম। সত্যজিৎ বাঙালির গর্ব তো বটেই, এমনকি গোটা ভারত এমনকি বিশ্বের গর্ব তিনি। আন্তর্জাতিক সিনেমার আলোচনা তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। কেবল চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই নয়, আরও নানান দিক থেকে অতুলনীয় প্রতিভা ছিল তাঁর। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রগুলির সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন তিনি। এমনকি সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'দেবী' ছবিটিতে ছবি বিশ্বাসের কণ্ঠে একটি শ্যামা সঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছিল, যা লিখেছিলেন পরিচালক নিজেই।