Weather | রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি দিল্লিতে! উত্তরপ্রদেশে চার দিনে মৃত ৩৪! হিমাচলে বিপাসা নদীতে ডুবলো পঞ্চভক্ত্রা মন্দির!
প্রবল বৃষ্টির জেরে নাজেহাল উত্তর ভারত। ৪১ বছরে রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি দিল্লিতে। উত্তরপ্রদেশে টানা বৃষ্টির জেরে পরপর মৃত্যু। হিমাচলে বন্যা, ভূমিধস। তবে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা সেভাবে নেই।
গ্রীষ্মের জ্বালানির পর এবার লাগাতার বর্ষার প্রকোপ। এক টানা বর্ষণে ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তর ভারতে। নাজেহাল অবস্থা দিল্লিতে (Delhi)। হড়পা বানের জেরে বিধ্বংস হিমাচলও (Himachal)। ক্রমশ জলের তোলায় ডুবেছে পঞ্চভক্ত্রা মন্দির। বান ও ক্রমাগত বৃষ্টির জেরে মৃত্যুও হয়েছে একাধিকের। উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) গত চার দিনে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩৪ জনের।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে দিল্লিতে শুরু হয় বৃষ্টি, যা অব্যাহত রবিবারেও। জানা গিয়েছে, কেবল ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৫৩ মিলিমিটার, যা ৪১ বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে দিল্লিতে সম পরিমাণ বৃষ্টি হয় ১৯৮২ সালে জুলাই মাসে। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে ভেঙে পড়েছে প্রায় ১৫টি বাড়ি। পাশাপাশি একাধিক রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ায় যাতায়াতেও ব্যাঘাত ঘটেছে। আন্ডারপাসের নীচে জলের পরিমাণএতটাই বেড়ে যায় যে, ব্যারিকেড করে রাস্তা বন্ধ করতে হয় পুলিশকে। গোটা রাজধানী জুড়েই জমে জল। এহেন নাজেহাল পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ আম জনতাও। সাধারণ মানুষের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েই রবিবার বড় পদক্ষেপ নেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)।
রবিবার টুইট করে কেজরিওয়াল জানান, জমা জলের সমস্যা যাতে অবিলম্বে দূর করা যায় তার জন্য সমস্ত সরকারি আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি এই সমস্যা যাতে দ্রুত সমাধান হয় তার জন্য সরকারি আধিকারিকের পাশাপাশি মন্ত্রীদেরও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার নির্দেশ দেন অরবিন্দ। পাশাপাশি রাজধানীর সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
গত চারদিন ধরে ব্যাপক বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরপ্রদেশ। যোগী রাজ্যের সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, গত চার দিনের দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। জানা গিয়েছে, বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের ও জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এছাড়াও ধস নেমে, জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath)। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার খরচও দেবে সরকার। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, মরসুমের শুরুতেই ১১ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। যার ফলে গঙ্গা (Ganga), রামগঙ্গা (Ramganga), যমুনা (Yamuna), রাপ্তি-সহ (Rapti) রাজ্যের অধিকাংশ নদীতে বিপদসীমার উপরে বইছে জল।
অন্যদিকে, প্রবল বর্ষণে বন্যা, ধসে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ। একের পর এক রাস্তা ধসের জেরে বন্ধ রাস্তা। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫ জনের। জানা গিয়েছে, শিমলায় (Shimla) ৩ জন, চাম্বায় (Chamba) ১জন এবং কুলুতে (Kullu) ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাগাতার বর্ষার কারণে জলস্তর বেড়ে বিপজনক হয়ে উঠেছে পাহাড়ের নদীগুলি। এমনকি বিপাসা (Vipassa) নদীতে ক্রমশ ডুবতে থাকে মান্ডি এলাকার জাগ্রত পঞ্চভক্ত্রা মন্দির (Panchvaktra Temple)। প্রতিনিয়তই অগুনতি ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। তবে সেই জাগ্রত মন্দিরকে বিপাসা নদীর জলে ক্রমশ ডুবতে থাকার দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত ভক্তরা। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই দৃশ্য। যা দেখে আঁৎকে উঠেছে দেশবাসী। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, চতুর্দিকে বইছে উত্তাল বিপাসা নদীর জল, চলছে হড়পা বান। আর তার মাঝেই ডুবে রয়েছে পঞ্চভক্ত্রা মন্দিরের অধিকাংশ।
ইতিমধ্যেই কাঙ্গরা (Kangra), মান্ডি (Mandi) এবং শিমলায় দুর্যোগের বিপর্যয় সামলাতে নামানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (National Disaster Response Force)। রাজ্য জুড়ে লাল সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। হিমাচলের সাতটি জেলায় আগামী তিনদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টির জেরে সিমলা (Shimla), লাহুল (Lahul), স্পিতি (Spiti), চাম্বা (Chamba) ও সোলান-সহ (Solan) একাধিক জায়গায় ভূমিধস (Landslide) ও হড়পা বানের (Harpa) খবর পাওয়া গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মোট ১৩৩টি পাহাড়ি রাস্তা। এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য কুলু জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ১১ই জুলাই পর্যন্ত শ্রীখণ্ড মহাদেব যাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছে।
একদিকে উত্তর ভারতে প্রবল বৃষ্টিতে যেখানে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, সেখানে বঙ্গের দক্ষিণে তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেই খবর। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে (South Bengal) এখন ভারী বৃষ্টিপাত হবে না। বেশ কিছু জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি কিছুটা বাড়তে পারে। পাশাপাশি কলকাতায় (Kolkata) আংশিক মেঘলা আকাশই থাকবে প্রায় গোটা দিন। বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কমবেনা গরম। বরং তাপমাত্রার পারদ ছুতে পারে ৩৪ ডিগ্রি।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার সেভাবে প্রভাব না পড়লেও উরত্তরবঙ্গের (North Bengal) আলিপুরদুয়ার (Alipurduar), জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri), কোচবিহারে (Cooch Behar) বৃষ্টির প্রাবল্য বাড়বে। ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই জেলাগুলিতে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে দার্জিলিং (Darjeeling), কালিম্পং (Kalimpong) পার্বত্য এলাকায়। মালদা (Malda) এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে (South Dinajpur) হতে পারে দু-এক পশলা বৃষ্টি।
- Related topics -
- আবহাওয়া
- ভারত
- উত্তরবঙ্গ
- দক্ষিণবঙ্গ
- শহর কলকাতা
- নয়াদিল্লি
- দিল্লি সরকার
- হিমাচলপ্রদেশ
- হিমাচল প্রদেশ
- উত্তরপ্রদেশ
- উত্তরপ্রদেশ সরকার
- অরবিন্দ কেজরিওয়াল
- যোগী আদিত্যনাথ
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী
- বৃষ্টিপাত
- বর্ষাকাল
- ভূমিধস
- বন্যা
- রাজ্য