Modi in Bengal | কসবা থেকে আরজি কর, মুর্শিদাবাদ থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি- মোদির ভাষণে কি চিড়ে ভিজলো বাঙালির?

এবার ২৬শের নির্বাচনকে টার্গেট করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আজ, শুক্রবার, দুর্গাপুরে জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এবার রামনাম নয় ‘খাঁটি বাঙালি’র মতো বাংলায় মা দুর্গা এবং মা কালীর নাম নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “বড়রা আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালোবাসা। জয় মা কালী। জয় মা দুর্গা।” শুক্রবার শুধু মা দূর্গা এবং মা কালী নয় ভাষণে কাদম্বিনি গঙ্গোপাধ্যায় থেকে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়ের মতো বাঙালিদের সুখ্যাতিও করলেন তিনি।মোদির এই বঙ্গীয়করণ কতটা সফল হবে তা ২৬শের নির্বাচনের ফলাফলই বলবে।
সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। একুশের নির্বাচনের আগে বঙ্গ সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তবে সেবার বঙ্গে ২০০র কাছাকাছি ও পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। এবার ২৬শের নির্বাচনকে টার্গেট করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আজ, শুক্রবার, দুর্গাপুরে জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

তবে এবার রামনাম নয় ‘খাঁটি বাঙালি’র মতো বাংলায় মা দুর্গা এবং মা কালীর নাম নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “বড়রা আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালোবাসা। জয় মা কালী। জয় মা দুর্গা।” মোদির এই বঙ্গীয়করণ কতটা সফল হবে তা ২৬শের নির্বাচনের ফলাফলই বলবে।

শুক্রবার শুধু মা দূর্গা এবং মা কালী নয় ভাষণে কাদম্বিনি গঙ্গোপাধ্যায় থেকে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়ের মতো বাঙালিদের সুখ্যাতিও করলেন তিনি। দুর্গাপুরের সভামঞ্চ থেকে মোদী বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গের মাটি প্রেরণার মাটি। দেশের প্রথম শিল্পমন্ত্রী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মাটি। দেশের প্রথম শিল্প নীতি দিয়েছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানচন্দ্র রায়ের মত দূরদর্শী নেতার মাটি। যিনি দুর্গাপুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই মাটি রবি ঠাকুরের মাটি।"
রাজ্যের বেকার সমস্যা এবং প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি যাওয়া নিয়েও রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধলেন তিনি। তিনি বললেন, "পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বিকাশের কেন্দ্র ছিল। শিল্প, উদ্যোগ, ব্যবসা মজবুত হয়েছিল। সারা দেশ থেকে লোক এখানে আসতেন রোজগারের জন্য কিন্তু এখন চিত্র বদলে গেছে। আজ পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যুবকরা চলে যাচ্ছে। ছোটখাট কাজের জন্যও অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে।" সরাসরি তৃণমূলকে আক্রমণ বানিয়ে তিনি বললেন, "শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছে। ডাবল অ্যাটাক হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এই যে শিক্ষকরা যাদের চাকরি নেই এটাও তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য। আর স্কুলে যাঁরা পড়ে তাঁদের ভবিষ্যতও নষ্ট হচ্ছে শিক্ষক না পাওয়ায়। "

বাংলার সিন্ডিকেট ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে মোদী বললেন,‘যেখানে মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনা ঘটে, ছোট ছোট ঘটনায় হিংসা হয় এবং পুলিশ একতরফা কাজ করে, সেখানে কে বিনিয়োগ করবে? এখানের সরকার মানুষের প্রাণ ও তাঁদের দোকানের সুরক্ষা দিতে পারে না। তাহলে বিনিয়োগ হবে কী করে? সিন্ডিকেটরাজ দেখে পালিয়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা চায়। তৃণমূলের গুণ্ডা ট্যাক্স বাংলায় বিনিয়োগ করে না। সেই কারণে তৃণমূলের আমলে শতাধিক কোম্পানি রাজ্য ছেড়ে চলে গেছে। সেই কারণে বাংলার হাল বেহাল। তাই সকলে বলছে তৃণমূল হঠাও বাংলা বাঁচাও।’
এদিনকার ভাষণে কসবা এবং আরজিকর কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, "মা-মাটি-মানুষের সরকারের আমলে নারী নির্যাতন। এটা সেখানে হচ্ছে যেখানে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী জন্মগ্রহণ করেছেন। যিনি প্রথম মহিলা ডাক্তার। সেই খানে জায়গায় নারী নির্যাতন। আরজি করের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের আবার একটা কলেজে মহিলা নির্যাতন। সেখানেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। নির্যাতিতাতেই এখানে দোষী বলা হচ্ছে।"

এরপরই বাংলার মানুষের কাছে বিজেপিকে একবার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, "বাংলা বদল চায়, বিকাশ চায়, পরিবর্তন চায়, উন্নয়ন চায়। আজ গ্যাসের ক্ষেত্রে, স্টিল প্ল্যান্টে আধুনিকীকরণ হচ্ছে যা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টার কারণে হচ্ছে। এর জন্য কেন্দ্র ১০০০ কোটি খরচ করছে যাতে এখানে CNG গাড়ি চলতে পারে, মানুষের পয়সা বাঁচে এবং রোজগারের নতুন দিশা দেখা যায়। আমি আপনাদের বলছি বাংলার পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব। বিজেপি সরকার এখানে আসার পর পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম শিল্পোন্নত রাজ্য হয়ে উঠবে। আমার এই বিশ্বাসের কারণ হল এখানকার প্রতিভাবান যুব সমাজ। এখানে নদী আছে সমুদ্র আছে। এটা বহুযুগ ধরে ইমপোর্ট, এক্সপোর্ট কেন্দ্র। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। মেক ইন ইন্ডিয়ার সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার সব সম্ভবনা রয়েছে। কেবল এখানে তৃণমূল সরকার বাংলার বিকাশের পথে অন্তরায়। যেদিন তৃণমূল সরকারের পতন হবে সেদিন থেকে বাংলা নতুন গতিতে দৌড়াবে। তৃণমূল সরকার গেলে তবেই আসল পরিবর্তন হবে।"

বাংলায় রেলের দ্রুত সম্প্রসারণ নিয়েও আশাবাদী প্রধানমমন্ত্রী। বন্দে ভারতের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। দুর্গাপুরে গোটা ভাষণে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন মোদী। যদিও এদিন ভিনরাজ্যে বাঙালিদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রভাব ছাব্বিশের ভোটব্যাঙ্কে পড়বে কি না তা দেখতেই মুখিয়ে গোটা রাজ্য।
- Related topics -
- রাজনৈতিক
- রাজনীতি
- দুর্গাপুর
- মোদী সরকার
- নরেন্দ্র মোদি
- পশ্চিমবঙ্গ
- রাজ্য
- দেশ
- বিজেপি
- তৃণমূল কংগ্রেস
- বিধানসভা নির্বাচন
- প্রধানমন্ত্রী