গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী ? Primary symptoms of pregnancy in Bengali
প্রথমবারের মত গর্ভবতী হওয়ার অনুভূতি একজন নারীর জীবনে এক অন্যরকম আনন্দময় মুহূর্ত। অনেক সময় কোন মহিলা গর্ভবতী কি না তা ধরা পড়তে বেশ সময় লেগে যায়, তবে সঠিক সময়ে প্রেগন্যান্সি নির্ধারণ করাই উত্তম। ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়ার পূর্বেই সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখেও ঘরে বসেই গর্ভধারণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
কিভাবে গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ বোঝা যায়, Primary symptoms of understanding that you are pregnant
একটি পিরিয়ড মিস হয়ে গেলেই তা নিশ্চিতভাবে গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সুস্পষ্ট একটি লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এটি কিন্তু একমাত্র লক্ষণ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ড মিস হওয়ার অনেক আগেই শরীর গর্ভাবস্থার ইঙ্গিত দিতে শুরু করে দেয়। সাধারণত গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই দেখা যায়। কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ দেখা দিলে তা গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ বলে ধরা যায়।
Read also :
পিরিয়ড মিস করার আগেও আপনি গর্ভবতী কিনা তা জানার উপায়, Ways to understand whether you are pregnant before you miss a period
স্বল্প রক্তপাত এবং খিঁচুনি
মাসিকের খিঁচুনি হওয়া এবং স্বল্প রক্তপাত সাধারণভাবে গর্ভরোপণের রক্তপাত নামে অভিহিত, যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক ও স্পষ্ট লক্ষণ বলে মনে করা হয়। নিষিক্ত ডিম জরায়ুর দেওয়ালে সংযুক্ত হওয়ার ফলে গর্ভরোপণ হয়। গর্ভরোপনের লক্ষণগুলি পিরিয়ড মিস হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটে। এই রক্তপাত কয়েক ঘন্টা বা এক দুইদিনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। তবে, অত্যধিক রক্তপাত হলে তা গর্ভপাত বা পিরিয়ডও হতে পারে।
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া
সাধারণত ডিম্বস্ফোটনের পূর্বে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং মাসিক চক্রের পরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে গর্ভাবস্থার সময় শরীরের মৌলিক তাপমাত্রা সাধারণত বেশী থাকে। দেহের ইমিউন সিস্টেম গর্ভকালীন সময় পার করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। ডিম্বস্ফোটনের পর দেহের তাপমাত্রা যদি ২০ দিনের অধিক সময় ধরে বেশী থাকে, তবে তা এক নতুন যাত্রার সূচনাকে চিহ্নিত করে।
কোমল এবং ভারী স্তন ও চুলকানি
কোমল ও ভারী স্তন অথবা গাঢ়তর অ্যারিওলি হল গর্ভাবস্থার লক্ষণ। গর্ভধারণের পর ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ার সাথে মহিলাদের স্তনে ব্যথা অনুভব হয়। স্তনবৃন্ত গাঢ়তর রং ধারণ করে এবং তাতে চুলকানি ভাব ও খোঁচা খোঁচা ভাব অনুভূত হয়। তবে সাধারণত পিরিয়ড মিস হওয়ার পর এগুলি দেখা যাবে।
অবসাদ এবং ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সারাক্ষণ ক্লান্ত এবং অবসন্ন বোধ হয়। অবসাদ ও ঘুম ঘুম ভাব গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। ঘুমানোর প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য প্রজেস্টেরোন হরমোনকে দায়ী করা হয়। ভ্রূণের জন্য রক্ত উৎপাদন হওয়ার ফলে ক্লান্তির বৃদ্ধি ঘটে।
মাথা ঘোরার সমস্যা
মাথা ঘোরা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক উপসর্গ যা বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে হয়। দেহের রক্তবাহী নালীগুলি স্ফীত হয়ে যায় বলে রক্তচাপ হ্রাস পায়, ফলে ভারসাম্যহীনতার অনুভূতি হয়। এই উপসর্গ প্রথম তিন মাস জুড়ে অনুভব হতে থাকে। তবে মাথা ঘোরার সাথে যদি যোনিদ্বার হতে রক্তপাত ও পেট ব্যথা হয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
বমি বমি ভাব হওয়া
বমি ভাব বা বমি করা খুব সাধারণ উপসর্গ, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোন হরমোন বৃদ্ধির কারণে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বমি হতে পারে। অনেক গর্ভবতী মহিলারাই পিরিয়ড মিস করার পূর্বের প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে বমি বমি ভাবে ভোগেন। প্রায় ৫০% গর্ভবতী মহিলা প্রথম ছয় সপ্তাহের মধ্যে বা এর পূর্বে বমিভাব বোধ করেন।
প্রস্রাব করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
হরমোন পরিবর্তন ও রক্তের অতিরিক্ত উৎপাদনের প্রভাবে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা সমগ্র গর্ভাবস্থা ধরে চলতে থাকে। প্রায় সকল গর্ভবতী মহিলাই এই তাড়নটি অনুভব করেন।
মেজাজের হেলদোল হওয়া
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভবতী মহিলারা কখনও খুব প্রফুল্ল অথবা কখনও খুব মনমরা থাকবেন। এই লক্ষণ পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভাবস্থার আরেকটি প্রাথমিক চিহ্ন, এরূপ মেজাজের হেলদোলের প্রভাব স্বরূপ কোনো কোনো মহিলা এক সময় ক্ষুদ্রতম বা তুচ্ছ সমস্যা নিয়েও উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন। এমনটা হয় কারণ হরমোনের পরিবর্তন মহিলাদের মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারগুলিকে প্রভাবিত করে, ফলে কখনও সাধারণ একটি বিষয়ে ক্রোধ হওয়া থেকে শুরু হয়ে হঠাৎ করে আবেগে ফেটে পড়া পর্যন্ত যেকোনো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কখনও কোন মহিলা যদি গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক বোধ না করেন তবে সেক্ষেত্রে আরাম করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছু সময় নেওয়া উচিত।
মাথা ব্যাথা
মাথা ব্যাথা গর্ভাবস্থার মাসিক পূর্ববর্তী সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ, ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোন হরমোন নতুন প্রাণের জন্য জরায়ুকে প্রস্তুত করে, তখন হরমোনগুলি রক্তের শর্করার মাত্রা কম করে দেয়, ফলে মাথা ব্যথা হয়, কারণ তখন মস্তিষ্কের কোষগুলি চিনির কম মাত্রার সাথে সঙ্গতি বজায় রাখার সংগ্রাম করে।
Read also :
শরীরে ব্যাথা এবং যন্ত্রণা
মহিলাদের দেহের হরমোনগুলি অভ্যন্তরে নতুন জীবনের জন্য স্থান প্রস্তুতির কাজ করে যা অনেক ক্ষেত্রে শরীরের লিগামেন্টগুলিকে প্রভাবিত করে। তখন লিগামেন্ট এবং জয়েন্টগুলি প্রসারিত হওয়ার প্রয়োজন হয়, এইগুলি প্রসারিত করার কারণে অনেকের মেরুদণ্ড এলাকায় ব্যথা হতে পারে। এই লক্ষণটি পিরিয়ড মিস হওয়ার পূর্বেই দেখা যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক সময়ে দেহে হরমোনের নানা পরিবর্তন ঘটে। তখন প্রায়ই গর্ভবতী মহিলাদের হজমে সমস্যা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
গর্ভাবস্থায় যোনিপথে স্রাব বেশি হয়ে থাকে। এটি মহিলাদের যোনি থেকে গর্ভ অবধি ভ্রূণের যেকোনো সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। গর্ভাবস্থায় হওয়া স্বাস্থ্যকর যোনি স্রাবকে বলা হয় লিউকোরিয়া। এটি প্রতিদিনের স্রাবের মতো দুধ-সাদা রঙের এবং একেবারে গন্ধহীন। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে, স্রাবের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার, Conclusion
গর্ভবতী হওয়ার অনুভূতিতে একজন নারী নিজের জীবনকে যেন নতুনভাবে খুঁজে পান। নিজের এবং পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি যোগ হয় নতুন একটি প্রাণের অস্তিত্ব, যার বৃদ্ধি ও পুষ্টি সর্বোপরি গর্ভধারিণীর উপর নির্ভর করে। কিছু কিছু মহিলা সময়মত গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো ধরতে পারেন না, ফলে অনেক সময় নানা সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। উপরিউক্ত লক্ষণগুলো থেকে আপনি সঠিক সময়ে গর্ভধারণ সম্পর্কে জেনে নিয়ে নিজের সম্পর্কে আরও বেশি ওয়াকিবহাল হতে পারবেন এবং সেইমত প্রয়োজনীয় সতর্কতাও অবলম্বন করতে পারবেন।
Read also :
- Related topics -
- প্রেগন্যান্সি
- স্বাস্থ্য
- লাইফস্টাইল