Peregrine Mission | চাঁদমামাকে 'রিটার্ন গিফট' দিতে পাড়ি দেওয়া মহাকাশযানে ফুটো! 'শূন্যেই' কি মিলিয়ে যাবে এভারেস্টের টুকরো, DNA?
চন্দ্রযান ৩ এর পর চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলো পেরিগ্রেন মিশন। তবে উৎক্ষেপণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ধরাশায়ী হল নাসার এই অ্যাস্ট্রোবটিক পেরিগ্রেন ল্যান্ডার। প্রোপালশন মডিউলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গিয়েছে বলে খবর
নাসা (NASA), ইসরো (ISRO) এর পর চাঁদের লক্ষ্যে পারি দিয়েছে অ্যাস্ট্রোবটিক পেরিগ্রেন ল্যান্ডার (Astrobotic Peregrine Lander)। এই পেরিগ্রেন মিশন (Peregrine Mission) দ্বারা চাঁদমামাকে উপহার পাঠাতে চেয়েছিলো নাসা। তবে সোমবার ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স সফলভাবে উৎক্ষেপণ হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ধরাশায়ী হল নাসার এই অ্যাস্ট্রোবটিক পেরিগ্রেন ল্যান্ডার। প্রোপালশন মডিউলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গিয়েছে বলে খবর।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নাসা বা নাসার পূর্ণ রূপ (NASA full form) ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (National Aeronautics and Space Administration) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুব দ্রুত এই পেরিগ্রেন ল্যান্ডারের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। ওয়াশিংটনে নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেটের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল কার্নস বলেন, প্রত্যেক সাফল্য এবং পরাজয় থেকে আরও বেশি করে শেখার এবং উন্নতি করার সুযোগ পাওয়া যায়। এই ব্যর্থতা বিজ্ঞানের অগ্রগতি, উদ্ভাবন এবং চন্দ্রমিশনের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক পরিকল্পনাগুলি সম্পর্কে নতুন করে শিক্ষা দেবে।
অ্যাস্ট্রোবটিকের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানানো হয়, চন্দ্রযানটি ফুটো হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে স্পেসক্র্যাফ্ট অ্যাটিটিুড কন্ট্রোল সিস্টেমের (ACS) থ্রাস্টারগুলি প্রত্যাশিত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, যাতে ল্যান্ডারটিকে এই অনিয়ন্ত্রিত গন্ডোগোল থেকে বাঁচানো যায়। এই পোস্টে আরও জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে ল্যান্ডার। ফলে পেরিগ্রেন ল্যান্ডারটিকে চাঁদের যত কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটাই এখন মূল টার্গেট।
পেরিগ্রেন মিশন । Peregrine Mission :
নাসার পূর্ণ রূপ (NASA full form) ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অ্যাপোলো চাঁদ থেকে মাটি তুলে এনেছিল। এরপর ভারত-সহ একাধিক দেশ চাঁদে নানান মিশন চালায়। এবার সেই চাঁদকে রিটার্ন গিফট দেওয়ার টার্গেট নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল পেরিগ্রেন ল্যান্ডার (Peregrine Lander)। ৮ই জানুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে অ্যাস্ট্রোবায়োটিক টেকনোলজি (Astrobotic Technology) সংস্থার মহাকাশযান। সেটির উৎক্ষেপণ করে ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালাইন্স এর ভালকান (Vulcan) রকেট। এই রকেটে কোনও মহাকাশচারী সওয়ার নেই। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র পাঁচটি যন্ত্র চাঁদের বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটি।
পেরেগ্রিনে রয়েছে মোটামুটি ২০টি পেলোড। যার ওজন মোটামুটি ২০ কেজি। তার মধ্যে পাঁচটি পেলোড পাঠিয়েছে নাসা। এই পেলোডগুলির মধ্যে রয়েছে পাঁচটি নাসার যন্ত্র যা যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লিনিয়ার এনার্জি ট্রান্সফার স্পেকট্রোমিটার (LETS), যা বিকিরণ মাত্রা নিরীক্ষণ করবে; নিয়ার-ইনফ্রারেড ভোলাটাইল স্পেকট্রোমিটার সিস্টেম (NIRVSS), চন্দ্রের মাটির গঠন বিশ্লেষণ করবে। নিউট্রন স্পেকট্রোমিটার সিস্টেম (NSS)-চাঁদের মাটিতে জল রয়েছে কিনা সেসম্বন্ধে অনুসন্ধান চালাবে। এছাড়া পেরেগ্রিন আয়ন-ট্র্যাপ মাস স্পেকট্রোমিটার (PITMS) চাঁদের বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন করবে। অন্যদিকে লেজার রেট্রোরেফ্লেক্টর অ্যারে (LRA) ভবিষ্যতের মিশনের জন্য চাঁদে একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থান খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে নাসার মিশনের জন্য এই তথ্যগুলি কাজে লাগবে। এই মিশনের উল্লেখ্য ব্যাপার হলো, এই লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন (Lunar Polar Exploration Mission) চাঁদের জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে একটি উইকিপিডিয়ার কপি, একটি বিটকয়েন, মাউন্ট এভারেস্টের টুকরো। এছাড়াও এই মহাকাশযানের সঙ্গে কিছু ডিএনএ স্যাম্পেলও পাঠাচ্ছে স্পেস মেমোরিয়াল ফার্মস ইলিসাম স্পেস ও সেলেসটিস। তবে এই মিশনের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই নানান সমালোচনা শুরু হয় মানবদেহের অবশিষ্টাংশ, ডিএনএ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আগামী ২৩ সে ফেব্রুয়ারি চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা এই মহাকাশযানের। তবে তার আগেই বড় বিপদে পড়লো। বেসরকারি সংস্থার মহাকাশযান হলেও,পেরিগ্রেন মিশন (Peregrine Mission)-১ ল্যান্ডার যদি চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে, তাহলে ফের ইতিহাস গড়বে আমেরিকা। কারণ ছয় এবং সাতের দশকে অ্যাপোলো অভিযানের পর এই প্রথম তাদের দেশ থেকে রওনা দেওয়া কোনও মহাকাশযান চাঁদের মাটি স্পর্শ করার কথা। পাশাপাশি চাঁদের সাইনাস ভিসকোসিটাটিসের কাছে অবতরণ করার কথা এই লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন (Lunar Polar Exploration Mission) ল্যান্ডারটির। এই অংশে জলে অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, চাঁদের বুকে পা রাখার ক্ষেত্রে ভারত চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) কেড়েছে গোটা বিশ্বের নজর। চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে গড়েছে ইতিহাস। ভারতের রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে গড়িয়ে অনেক নতুন তথ্যের যোগান দিয়েছে। তথ্য দিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রমও। এবার চাঁদের আরও বেশ কিছু সত্য জানতে নাসা তার পঞ্চবাণ প্রয়োগ করছে। কিন্তু সেই যাত্রা সফল হবে কি না তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরী হয়েছে।