Pankaj Udhas | সঙ্গীত দুনিয়ায় নক্ষত্র পতন! প্রয়াত পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত কিংবদন্তি গজ়ল গায়ক পঙ্কজ উধাস! পড়ুন কিংবদন্তির জীবনী!
৭২ বছর বয়সে থমকে গেল সুরের খেলা। ২৬সে ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে গেলেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত কিংবদন্তি গজ়ল গায়ক পঙ্কজ উধাস। সঙ্গীতশিল্পীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা সঙ্গীত জগৎ।
বিনোদন জগতে নক্ষত্র পতন। প্রয়াত খ্যাতনামী পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত গজ়ল গায়ক পঙ্কজ উধাস (Pankaj Udhas)। ৭২ বছর বয়সে চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন গায়ক। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ২৬সে ফেব্রুয়ারি, সোমবার , মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে সকাল ১১ টা নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সঙ্গীতজগৎ। গজল ম্যাস্ট্রো পঙ্কজ উধাসের মেয়েই তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর সকলকে জানিয়েছেন। টুইটারে পোস্ট করে জানান নায়াব উধাস। দীর্ঘ অসুস্থতার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পঙ্কজ উধাসের মৃত্যু গজলের দুনিয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি। কিংবদন্তির প্রয়াণের খবর পেয়ে শোক প্রকাশ করেছেন সংগীতশিল্পীরা।
কিংবদন্তি পঙ্কজ উধাসের সংক্ষিপ্ত জীবনী । Brief Biography of legend Pankaj Udhas :
১৯৫১ সালের ১৭ই মে-তে জেতপুর, সৌরাষ্ট্র, ভারতে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ উধাস (Pankaj Udhas)। পঙ্কজের বাবা ছিলেন একজন কৃষক। তাঁর বড় ভাই নির্মল উধাস বলিউডের বিভিন্ন ছবিতে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে গান গেয়ে সাফল্য অর্জন করেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনিই যিনি গান দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এবং জনপ্রিয় হয়েছিলেন। পঙ্কজ উধাস স্যার বিপিটিআই ভাবনগরে শিক্ষা লাভ করেন। পরে, তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইয়ে চলে আসেন এবং সেখানে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন। বিজ্ঞানের ডিগ্রি অর্জন করার পর, তিনি মাস্টার নাভারং থেকে মুম্বাইতে ভারতীয় শাস্ত্রীয় কণ্ঠসংগীতের প্রশিক্ষণ নেন।
কর্মজীবন :
১৯৮০ সালে, পঙ্কজ উদাসের গজল (Pankaj Udhas Ghazal) অ্যালবাম 'আহাত' প্রকাশ পায়। এর মাধ্যমেই তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরে, অনেক হিট গজল প্রকাশ করেছেন পঙ্কজ উদাস, যেমন; ১৯৮১ সালে "মুকারর", ১৯৮২ সালে "তারনানুম" এবং ১৯৮৩ সালে "মেহফিল"। এরপর ১৯৮৪ সালে প্রবীণ গায়ক রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে লাইভ গানও গেয়েছেন পঙ্কজ উদাস। ১৯৮৫ সালে,পঙ্কজ উদাসের গজল (Pankaj Udhas Ghazal) "নায়াব" অ্যালবাম প্রকাশ পায় এবং ১৯৮৬ সালে "আফরিন"। এরপর ক্রমশ তিনি একজন গজল গায়ক হিসাবে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন এবং মহেশ ভাটের "নাম" শিরোনামের চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ পান।
পঙ্কজ উধাসের গান (Pankaj Udhas songs) "চিট্টি আই হ্যায়" নিমেষের মধ্যে মন ছুঁয়ে নেয় শ্রোতাদের। নিমেষের মধ্যে হিট হয়ে যায় এই গানটি। তারপর থেকে, তিনি অনেক বলিউড ফিল্মে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে কাজ করেছেন এবং লাইভ কনসার্টে তার জাদুকরী কণ্ঠ দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুগ্ধ করেছেন। তাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় গজল অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে, “নাশা”, “লেজেন্ড”, “কাইফ”, “খেয়াল”, “আমান”, “রুবায়ী”, “তিন মৌসুম”, “ঘুনঘাট”, “কে লারকি ইয়াদ আতি হ্যায়”। ১৯৯০ সালে, পঙ্কজ উধাস "ঘয়াল" চলচ্চিত্রের জন্য আরেক কিংবদন্তি গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের সাথে "মাহিয়া তেরি কসম" গানটি গেয়েছিলেন । পঙ্কজ উধাসের এই গান (Pankaj Udhas songs) ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে, তিনি একটি সুন্দর গান "না কাজরে কি ধর" (মোহরা) চলচ্চিত্রে গেয়েছিলেন, যাতে অক্ষয় কুমার , রাভিনা ট্যান্ডন , সুনীল শেঠি , প্রবীণ অভিনেতা, নাসিরুদ্দিন শাহ এবং অন্যান্যরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। উল্লেখ্য, প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রে গজল গায়ক হিসেবেও অভিনয় করেছেন। যেমন; “সাজন”, “নাম”, “ইয়ে দিল্লাগি” এবং অন্যান্য। একইভাবে, তিনি প্রচুর অবদান রেখে তার ভক্ত এবং গজলপ্রেমীদের মন্ত্রমুগ্ধ করার জন্য সুরেলা গজল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন।
সম্মাননা ও অর্জন :
পঙ্কজ উধাস প্রচুর পুরষ্কার এবং সম্মান অর্জন করেছেন। ১৯৯০ সালে, তিনি ইতিবাচক নেতৃত্ব এবং জাতির জন্য প্রদত্ত পরিষেবাগুলির জন্য পুরস্কৃত হন। ভারতীয় জুনিয়র চেম্বার্স আউস্ট্যান্ডিং ইয়াং পার্সনস অ্যাওয়ার্ড শো-তে পুরস্কারটি উপস্থাপন করে। এছাড়াও, তিনি বছরের সেরা গজল গায়ক হিসেবে পুরস্কৃত হন এবং ১৯৮৫ সালে কেএল সায়গল পুরস্কার পান। এছাড়া ২০০৬ সালে, পঙ্কজ উধাস পদ্মশ্রী, ভারতের চতুর্থ-সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন। এছাড়াও, তিনি ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুবক টেক্সাসের অনারারি সিটিজেনশিপ দ্বারা সম্মানিত হন।
আরও পড়ুন : প্রযোজনা করেছেন প্রায় ৫৪,০০০ রেডিও শো! চির ঘুমে ‘গীতমালা’র কণ্ঠ! পড়ুন আমিন সায়ানির জীবনী!
আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত পঙ্কজ উদাসের প্রতিভা। তবে ৭২ বছরেই শেষ হল সংগীত জীবনের পথ চলা। পঙ্কজ উধাসের মৃত্যু গজলের দুনিয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি। হিন্দি সিনেমা এবং ইন্ডি-পপের জগতে তাঁর অবদান ভোলার নয়। লাইভ অনুষ্ঠান হোক বা অ্যালবাম কিংবা ছবির গান, আশি ও নব্বইয়ের দশকে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি। শিল্পীর প্রয়াণে দেশের সঙ্গীত জগতের বিশিষ্টরা সমাজমাধ্যমে শোকবার্তা জানিয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে খবর শোকার্ত সোনু নিগম।
- Related topics -
- বিনোদন
- জীবন কাহিনি
- জীবন ও জীবনী
- সঙ্গীতশিল্পী