স্বাস্থ্য

আপনি ওবেসিটির কবলে পড়ছেন না তো! কিভাবে কমাবেন শরীরের অতিরিক্ত মেদ? | How to get rid of excess fat!

আপনি ওবেসিটির কবলে পড়ছেন না তো! কিভাবে কমাবেন শরীরের অতিরিক্ত মেদ? | How to get rid of excess fat!
Key Highlights

লকডাউনে গৃহবন্দীর ফলে প্রত্যেকেই চিন্তিত নিজেদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে। কীভাবে কমাবেন অতিরিক্ত মেদ, আসুন জেনে নেওয়া যাক।

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের মারণ থাবার কারণে গোটা বিশ্বজুড়ে কমবেশি লকডাউন হয়েছিল। সাধারণভাবে লকডাউন মাসে ঘরবন্দি হওয়ার কারণে শরীরের ওজন অনায়াসে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন ‘ওবিস’ তথা স্থূল বা অতিরিক্ত মোটা হয়। এমনিতে সদ্যোজাত ‘ওভারওয়েট’ হলেও ভবিষ্যতে তা স্থায়ী হয় না। কিন্তু ৩-৪ বছর বা ৭-৮ বছর বয়সী শিশুরা, যারা ইতিমধ্যেই স্থূলতার শিকার, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা যথেষ্ঠ চিন্তার। যা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আরও বাড়ছে।

বর্তমানে খুব পরিচিত একটি শব্দ বা রোগ 'ওবেসিটি'-এটি আসলে কী? | What is Obesity?

"ওবেসিটি" হল শরীরের এক বিশেষ অবস্থা, যা বাংলায় 'অতিস্থূলতা' হিসেবে পরিচিত। বিশ্বে স্থূলতাকে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শরীরে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হলে ওবেসিটির সৃষ্টি হয়। এর ফলে শরীরে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে এবং নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

বর্তমানে ভারতে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ এই অবস্থার শিকার। মাঝবয়সীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এই ওবেসিটির কারণেই । শিশুদের ক্ষেত্রেও দিনের পর দিন এর সমস্যা প্রবল ভাবে বাড়ছে, যা চিকিৎসকদের কাছে অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।

ওবেসিটি হলে কী কী সমস্যা হতে পারে? | Problems of Obesity

ওবেসিটি-র জন্য হৃদরোগ, ডায়াবেটিস মেলিটাস, অস্টিও আরথ্রাইটিস, বন্ধ্যাত্ব, নিদ্রাহীনতা, মানসিক অবসাদ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগ হতে পারে। কেউ ওবেসিটির শিকার হলে তার শরীরে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ বলা হয়। এর জন্য কয়েক ধরনের ক্যানসারের আশঙ্কাও দেখা যায়।

ওবেসিটি কেন হয়? | The reason of Obesity?

এখন আমরা কমবেশি সকলেই পশ্চিমী সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি । ফলে, ফাস্ট ফুডের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। গৃহবন্দী বা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে অনেকেই এক জায়গায় বসে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা কাজ করছেন। ফলে শারীরিক পরিশ্রম সেভাবে হচ্ছে না। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা না করা এবং এর সাথে অত্যধিক মাত্রায় ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া-ই হল ওবেসিটির মূল কারণ। 

এসব কারণ ছাড়াও কাজের ক্ষেত্রে বা বিভিন্ন কারণে বেশি মানসিক চাপ, অপর্যাপ্ত ঘুম, ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বেশি বয়সে গর্ভবতী হওয়া ইত্যাদির জন্য বিএমআই বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, সফট এবং হার্ড ড্রিঙ্ক -এর কারণেও ওবেসিটি দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও অনেক মানুষ ওবেসিটির শিকার হন।

ওবেসিটির জেরে মৃত্যুর আশঙ্কা কতটা? | Death risk due to Obesity

পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যে ওবেসিটির কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি।যারা ধূমপান করেন, তাদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুর আশঙ্কা তুলনামূলক বেশি থাকে। এমনকি সুপার ওবেসিটি যুক্ত ব্যক্তিদের আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত কমেও যেতে পারে। সারা বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসাবে ওবেসিটিকে দায়ী করা হয়।

ওবেসিটি কতটা বিপজ্জনক? | How dangerous is Obesity?

শারীরিক ক্ষেত্রে ওবেসিটি যথেষ্ঠ বিপজ্জনক, যা কোনোভাবেই এড়ানো যায় না। কাউকে ছোট বয়সেই ওবিসিটি গ্রাস করলে তার শরীরে মেটাবলিজম কমতে থাকে। ফলে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। হরমোনের অবাঞ্চিত বদলের কারণে টাইপ টু ডায়াবিটিস, হরমোনাল পরিবর্তন এমনকী, পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যাও (পিসিওডি) হতে পারে।

ওবেসিটি কমানোর উপায় | The way to reduce Obesity

ওবেসিটি কমানোর জন্য সেভাবে ঘরোয়া কোনও উপায় নেই।

একমাত্র উপায় হল নিজের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা আর কেবলমাত্র এর ফলেই ওবেসিটির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন- কম চাপ নিয়ে কাজ করা, সময়মত ঘুমানো, নিয়মিত হাঁটাচলা ও কিছু যোগাসন করা এবং অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে ঘরোয়া খাবার খাওয়া। এর পাশাপাশি ধূমপান, অ্যালকোহল, জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড, সফ‌ট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি বর্জন করতে হবে। প্রয়োজনে কোনও ডায়েটিসিয়ানকে দিয়ে খাবার তালিকা তৈরি করে সেই মতো খাওয়া উচিত।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

আপনার সন্তান কি ‘ওবিস’?

জানার উপায় বডি মাস ইন্ডেক্স তথা বিএমআই নির্ধারণ। বিএমআই ৩০-এর উপর হলে, স্থূল ধরা হয়। ৩০-৩৫-এর মধ্যে হলে ক্লাস ওয়ান, ৩৫-৪০-এর মধ্যে থাকলে ক্লাস টু এবং ৪০-এর উপরে হলে ক্লাস থ্রি অর্থাৎ ‘মরবিড ওবেসিটি’।

ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে ওবেসিটির সম্পর্ক

বেশ কিছু ওষুধ আছে যেগুলি হরমোন গ্রন্থির উপরে প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ ব্যবহারের ফলেও শরীরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীর স্থূল হয়ে যায়।

শুধুমাত্র ওবেসিটির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নয়, নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেললে শুধু নিজেকে হালকা লাগবে তাই নয়, আপনি আপনার মনের মতন পোশাকও পরিধান করতে পারবেন।