NEOM | মরুভূমির মাঝেই 'জাদু কি নগরী'! ভাসমান শিল্প কমপ্লেক্স, বিলাসবহুল বাড়ি ছাড়াও পরিবেশবান্ধব ও এআই চালিত সৌদি আরবের 'নিওম'-এ রয়েছে আরও চমক!

Thursday, March 7 2024, 8:32 am
highlightKey Highlights

সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের স্বপ্ন, মরুভূমির মাঝে আস্ত একটা ‘জাদু’ শহর গড়ে তোলার। এই কারণেই তৈরী হচ্ছে নিওম সিটি মাস্টার প্ল্যান। সেখানে থাকবে বিলাসবহুল রিসর্ট, হোটেল, ভাসমান পরিকাঠামো, কৃত্রিম সমুদ্রের মাঝে আস্ত দ্বীপ। এখানে থাকবে কৃত্রিম চাঁদের আলো-সহ কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থাও।


মরুভূমি মানেই চারিদিকে ধূ ধূ বালি, কড়া রোদ, শুষ্কতা। তবে এই জমিকে প্রযুক্তির সাহায্যে একেবারেই বদলে দিতে চলেছেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। এখনও পর্যন্ত জ্বালানি তেলই সৌদি আরবের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু, দেশকে এই তেল নির্ভরতা থেকে বের করে আনতে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স অর্থাৎ শাহজাদা, মহম্মদ বিন সালমান বা এমবিএস-এর স্বপ্ন নিওম সিটি মাস্টার প্ল্যান (Neom City Master Plan)! এই শহর তৈরী হবে মরুভূমির মাঝেই। এতে থাকবে বিলাসবহুল রিসর্ট, হোটেল, ভাসমান পরিকাঠামো, কৃত্রিম সমুদ্রের মাঝে আস্ত দ্বীপ। জেক বলা চলে একেবারে 'জাদু কি নাগরী'।

সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের স্বপ্ন, মরুভূমির মাঝে আস্ত একটা ‘জাদু’ শহর গড়ে তোলার
সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের স্বপ্ন, মরুভূমির মাঝে আস্ত একটা ‘জাদু’ শহর গড়ে তোলার

মরুভূমিতে স্বপ্নের শহর-নিওম সিটি!

Trending Updates

গ্রিক শব্দ 'নিও' এবং 'ভবিষ্যত' কথাটির আরবি প্রতিশব্দের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে 'নিওম'। একে মানব সভ্যতার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে জটিল প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হচ্ছে। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে, আকাবা উপসাগর (gulf of aqaba) এবং সৌদি আরবের লোহিত সাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত ২৬,৫০০ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্র এলাকা জুড়ে এই নয়া মেগা শহর নির্মাণ করা হচ্ছে। নিওম সিটি মাস্টার প্ল্যান (Neom City Master Plan) এর মূল লক্ষ্য থাকবে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য, পরিবেশ সুরক্ষা এবং প্রযুক্তির কার্যকর ও উত্পাদনশীল ব্যবহার। 'নিওম' শহর প্রকল্পের তিনটি উপ-প্রকল্প রয়েছে - 'ট্রোজেনা' (Trojena), 'অক্সাগন' (Oxagon) এবং 'দ্য লাইন' (The Line)।

এই স্বপ্নের নগরীর উপ-প্রকল্প 'ট্রোজেনা' তৈরী হবে একটি পার্বত্য অঞ্চল। এটি নিওম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হবে। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হবে এটি। এমবিএস-এর আশা, 'ট্রোজেনা' হবে গোটা বিশ্বের পর্বত পর্যটনের গন্তব্যস্থল। এখানে পর্যটকদের জন্য একটি স্কি ভিলেজ তৈরি করা হবে বলে জানান সৌদির যুবরাজ। থাকবে হেল্থ রিসর্টও। মাউন্টেন বাইকিং এবং কিছু কিছু জলক্রীড়ার মতো পরিষেবাও মিলবে। ২০২৬ নাগাদ শেষ হবে ‘ট্রোজেনা’ প্রকল্পের কাজ। এমনকি ২০২৯ সালের এশিয়ান উইন্টার গেমস হবে এখানেই।

সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ২৬,৫০০ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্র এলাকা জুড়ে এই নয়া মেগা শহর নির্মাণ করা হচ্ছে
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ২৬,৫০০ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্র এলাকা জুড়ে এই নয়া মেগা শহর নির্মাণ করা হচ্ছে

এর পর আসা যাক 'অক্সাগন ' প্রসঙ্গে। এখানে, 'বিশ্বের বৃহত্তম ভাসমান শিল্প কমপ্লেক্স' হতে চলেছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রকল্পটি আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির আকারের ৩৩ গুণ বড় হবে। 'অক্সাগন', নিওম শহরকে একটি 'নেট-জিরো শহর' হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যপূরণ করবে। 'নেট-জিরো শহর' অর্থাৎ, এই শহরে ১০০ শতাংশ বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা মেটানো হবে অজীবাশ্মভিত্তিক শক্তি দিয়ে। পাশাপাশি, এই শহরে ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি (IoT), কৃত্রিম এবং ভবিষ্যৎমুখী বুদ্ধিমত্তা, মানব-মেশিন লার্নিং এবং রোবোটিক্স-সহ আরও বেশ কিছু উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যাবে এখানে। সৌদির যুবরাজের দাবি, উড়ন্ত ট্যাক্সিও দেখা যাবে অক্সাগন'  উপপ্রকল্পে।

২০২১ সালে ‘দ্য লাইন’ প্রকল্পের ঘোষণা করে সৌদি সরকার। এই প্রকল্পে দু’টি সমান্তরাল বহতল তৈরি হবে যাদের দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার। একটির উচ্চতা ২৭৫ মিটার, দ্বিতীয়টির ২২৫ মিটার। দু’টি বহতলের মধ্যে সংযোগ রক্ষার জন্য থাকবে ঝুলন্ত সেতু। আর সেই ঝুলন্ত সেতু দিয়ে যাতায়াত করবে ট্রেনও। একসঙ্গে এই জোড়া টাওয়ারে ৯০ লক্ষ মানুষ বাস করতে পারবেন। আবাসনের পাশাপাশি বহু দফতর থাকবে দুই বহুতলে। 'দ্য লাইন' মূলত একটি 'স্মার্ট লিনিয়ার সিটি'। ১০ লক্ষ বাসিন্দা এখানে থাকতে পারবেন এখানে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে নগরোন্নয়ন করা হবে। রাস্তায় কোনও গাড়ি চলবে না। দাবি করা হচ্ছে, মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটার মাধ্যমেই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারবেন বাসিন্দারা। এই শহর পরিচালনা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI)। শহরটি যাতে 'কার্বন-পজিটিভ' হয় এবং ১০০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি ব্যবহার করে, তা নিশ্চিত করবে এইআই। এছাড়াও এখানে থাকবে কৃত্রিম বৃষ্টি (Artificial rain) করানোর ব্যবস্থাও। জানা গিয়েছে, পাহাড় কেটে তৈরি করা হবে বিলাসবহুল বহুতল  ‘অ্যাকোয়েলাম’। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে, আস্ত একটা পাহাড় দাঁড়িয়ে রয়েছে। লোহিত সাগরের আকাবা উপকূলে থাকছে প্রবেশপথ। সেখান দিয়ে বাসিন্দারা প্রবেশ করবেন অ্যারোয়েলামে। সি হর্স আকৃতি বিশিষ্ট কৃত্রিম দ্বীপও তৈরি করা হচ্ছে নিওমে। নাম ‘সিন্দালাহ’। যার আয়তন আট লক্ষ ৪০ হাজার বর্গমিটার। এখানে থাকবে বিলাসবহুল কিছু রিসর্ট। বহুতলের বাসিন্দাদের জিনের উন্নয়ন ঘটানোর জন্যও গবেষণা চলবে নিওমে। সেই মতো চিকিৎসকেরা পদক্ষেপ করবেন। একাধিক মিশেলিন স্টার রেস্তরাঁ থাকবে, যেখানে নানা রকম পদ চেখে দেখার সুযোগ পাবেন বাসিন্দারা। ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। দ্বীপে সমুদ্রের ধারে থাকবে একটি ক্লাব। নাম ‘জেনর’। চারপাশে থাকবে কৃত্রিম জঙ্গল। নিওমে থাকবে অভয়ারণ্য। তার চারপাশে থাকবে তিনটি বিলাসবহুল হোটেল। এই প্রকল্পের নাম ‘জারদুন’।

এই শহর পরিচালনা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই 
এই শহর পরিচালনা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই 

সাধারণত মরুভূমিতে এমনিতে বৃষ্টির দেখা মেলে না। তবে নিওমে মেঘ তৈরির জন্য যন্ত্র থাকবে। প্রয়োজন মতো কৃত্রিম বৃষ্টি (Artificial rain) উৎপন্ন করানো হবে। এছাড়াও আকাশে সব সময়ই থাকবে কৃত্রিম চাঁদের আলো। সৌদির যুবরাজের আশা, সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে, আকাবা উপসাগর (gulf of aqaba) এবং সৌদি আরবের লোহিত সাগরের উপকূল বরাবর  ১৪ হাজার ২০০ বর্গমাইল জুড়ে গড়ে উঠতে চলা নিওম শহরের দ্বারা দেশে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি মজবুত হবে। দুনিয়ার সব থেকে বড় ভাসমান পরিকাঠামো, সিহর্স আকৃতির দ্বীপে বিলাসবহুল রিসর্ট, বন্দর, পাহাড়ের খাঁজে হোটেল, বহুতল, প্রযুক্তি হাব সবই থাকবে। জনপদে কোনও রাস্তা থাকবে না। চলবে না গাড়ি। দোকান, বাজার থাকবে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। ড্রোন, রোবট, ভোলোকপ্টার জিনিসপত্র পৌঁছে দেবে। গোটা জনপদে আলো জ্বলবে, যান, যন্ত্র চলবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির মাধ্যমে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রকল্পগুলির খরচ ৫০,০০০ কোটি ডলার থেকে এক লক্ষ কোটি ডলার হতে পারে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪১ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ৮২ লক্ষ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পগুলির খরচ ৫০,০০০ কোটি ডলার থেকে এক লক্ষ কোটি ডলার হতে পারে
এই প্রকল্পগুলির খরচ ৫০,০০০ কোটি ডলার থেকে এক লক্ষ কোটি ডলার হতে পারে

তবে সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের স্বপ্নের শহর তৈরি করার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের অভিযোগ, নিওমের কারণে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মরুভূমির এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে পরিযায়ী পাখিরা। বহুতল গড়ে উঠলে তারা পথ ভুল করতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর শরৎকালে ইউরোপ থেকে আফ্রিকা যায় প্রায় ১০০ প্রজাতির ২১০ কোটি পরিযায়ী পাখি। সৌদির তাবুক অঞ্চল দিয়েই আফ্রিকা যায় তারা। ফলে নিওম তৈরি হলে পরিযায়ী পাখিদের পথে বাধা আসতে পারে। এর পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠগুলির দাবি, ওই প্রকল্প তৈরির জন্য হোয়েইতাত জনজাতিদের ঘরছাড়া করা হয়েছে। যাদের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File