Nalanda University | পড়তে পারবে ১৯০০ পড়ুয়া! ১৭০০ কোটি খরচ করে তৈরী নালন্দার নতুন ক্যাম্পাস! বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য জানলে চমকে যাবেন!
সম্প্রতি ভারতের গর্ব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। প্রাচীন বৌদ্ধ মঠের ধ্বংসাবশেষ থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে রাজগীর (rajgir)-এ ৪৫৫ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন ছাত্রছাত্রীরা পড়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবাসে ৫৫০ জন থাকতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে।
খরচ হয়েছে প্রায় ১৭০০ কোটি! সম্প্রতি ভারতের গর্ব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। প্রাচীন বৌদ্ধ মঠের ধ্বংসাবশেষ থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে রাজগীর (rajgir)-এ ৪৫৫ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। জায়গাটি বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন ছাত্রছাত্রীরা পড়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবাসে ৫৫০ জন থাকতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে। প্রেক্ষাগৃহ থেকে শুরু করে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালযয়ের গ্রন্থাগার (library nalanda university) এর মতো নানান সুবিধা পাবেন পড়ুয়ারা।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের বৈশিষ্ট্য :
রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকাকালীন এপিজে আবদুল কালামই (APJ Abdul Kalam) ২০০৬ সালে নালন্দাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পুনরুজ্জীবিত’ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই নালন্দার স্মৃতিকে মাথায় রেখেই নতুন করে তৈরি হয়েছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, এই ক্যাম্পাসে দুটি অ্যাকাডেমিক ব্লক আছে। প্রত্যেকটিতে ৪০টি করে শ্রেণিকক্ষ আছে। যেখানে প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়ার সুযোগ পাবেন। ৩০০ আসন বিশিষ্ট দুটি প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবাসে ৫৫০ জন থাকতে পারবেন। এছাড়াও রয়েছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালযয়ের গ্রন্থাগার (library nalanda university)। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হওয়ার পাশাপাশি এই নয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একটি বড় চমক হলো এর ক্যাম্পাসটি পরিবেশ বান্ধব। এখান থেকে কার্বন নিঃসরণ হবে না। সঙ্গে রয়েছে নিজস্ব সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পানীয় জল পরিশোধনের কেন্দ্র এবং বর্জ্য জল পুনর্ব্যবহার করার উপযোগী কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে ১০০ একরের জলাভূমি রয়েছে।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস :
বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতে বিরাট সুনাম ছিল। তবে সেই শিক্ষাকেন্দ্র সাম্প্রদায়িক আক্রমণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মধ্যযুগের শুরুতেই। সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সাম্প্রদায়িক হামলাকারীরা। বৌদ্ধ ধর্ম সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ৪২৭ শতাব্দীতে একদা মগধ (বর্তমানে বিহার) তৈরি করা হয়েছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বা নালন্দা মহাবিহার। জানা যায়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্যও প্রাচীন কালে অনেক শক্ত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেত হত পড়ুয়াদের। সেই সময়ের বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষকরা ছিলেন- ধর্মপাল এবং শীলভদ্রের মতো মানুষরা। অঙ্কের জনক আর্যভট্ট নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। মনে করা হয়, বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান মতে শিক্ষা দেওয়া হত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানকার গ্রন্থাগার 'ধর্মগুঞ্জ'-এ একসময়ে হাতে লেখা তালপাতা পাণ্ডুলিপি ছিল ৯০ লক্ষ। পঞ্চম শতাব্দী থেকে ১২ শতাব্দী পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা লাভের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা যেমন চিন, কোরিয়া, জাপান, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে পড়ুয়া আসতেন এখানে। পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার ১০ হাজার বেশি পড়ুয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছিল বলে জানান ইতিহাসবিদরা। এখানে পড়ানো হত অঙ্ক, ন্যায়শাস্ত্র, ব্যাকরণ, ভারতীয় দর্শনবিদ্যা ও জ্যোর্তিবিজ্ঞান।
গুপ্ত বংশের রাজা বা সম্রাটদের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন পাল রাজারা ও হর্ষবর্ধন। চিনের বিখ্যাত পণ্ডিত ও পর্যটক বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাং ও ই ৎসিং-এর মতো মানুষরাও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর প্রাচীন পুঁথিও চিনে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে বারবার ধর্মীয় কারণে হওয়া আক্রমণে এই বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। শেষ পর্যন্ত ১২০০ শতাব্দীতে বখতিয়ার খিলজি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়।
তবে ২০০৭ সালে, ফিলিপাইনসের মান্দাউয়ে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। থাইল্যান্ডের হুয়া হিনে ২০০৯ সালের পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে এই অনুমোদনের সিদ্ধান্ত পুনরায় গৃহীত হয়। ওই সম্মেলনে ভারত ছাড়া মোট ১৭টি দেশ- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভুটান, ব্রুনাই দারুসসালাম, কম্বোডিয়া, চিন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মরিশাস, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা ছিলেন। এই সকল দেশগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সাহায্য করেছে। এরপর ২০১০ সালে, সংসদ এই বিষয়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিল আনে। ২০১৩ সালে, প্রখ্যাত স্থপতি বিভি দোশির বাস্তু শিল্প কনসালট্যান্টস দ্বারা প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসের জন্য মাস্টারপ্ল্যানটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার (গ্লোবাল টেন্ডার) পরে বেছে নেওয়া হয়। এরপর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে স্কুল অফ হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড স্কুল অফ ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজে শিক্ষাদান শুরু করে।
- Related topics -
- দেশ
- ভারত
- নরেন্দ্র মোদি
- অন্যান্য
- ভাইরাল