অন্যান্য

Mount Everest Day | প্রতি বছর বাড়ে 'বিশ্বের সর্বোচ্চ গোরস্থানে'র উচ্চতা! জানুন মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য!

Mount Everest Day | প্রতি বছর বাড়ে 'বিশ্বের সর্বোচ্চ গোরস্থানে'র উচ্চতা! জানুন  মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য!
Key Highlights

এভারেস্ট প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার জর্জ এভারেস্ট ১৮৪১ সালে। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন পিক ১৫। কিন্তু ১৮৬৫ সালে স্যার জর্জ এভারেস্টের সম্মানে পর্বতের নাম পরিবর্তন করে এভারেস্ট করা হয়। ১৯৫৩ সালের ২৯সে মে ইতিহাস তৈরি করে বিশ্বে প্রথমবার এভারেস্ট সামিট করেন তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি।

আজকের দিনে পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গে পা দেওয়া কোনও ব্যাপারই নয়। বর্তমানে তো এমনই পরিস্থিতি যে মাউন্ট এভারেস্টেও হচ্ছে জ্যাম,মানুষের জ্যাম! তবে প্রায় ৭১ বছর আগে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা যেন ছিল স্বপ্নের মতো। বহু অভিযাত্রী স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে পায়ের তলায় রাখার। বারবার চেষ্টা করেছিলেন, বিফল হয়েছিলেন আবার চেষ্টা করেছিলেন। কেউ ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিলেন, কেউ চিরতরে হারিয়ে গিয়েছেন তুষার রাজ্যে। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ২৯সে মে ইতিহাস তৈরি করে বিশ্বে প্রথমবার এভারেস্ট সামিট করেন তেনজিং নোরগে (Tenzing Norgay) এবং এডমন্ড হিলারি (Edmund Hillary)। এরপর পর্বতারোহিদের জন্য খুলে গেল দ্বার। সেই থেকে মাউন্ট এভারেস্ট দিবস (Mount Everest Day) পালন করা হয় ২৯সে মে। জেনে নেওয়া যাক মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য (Amazing facts about mount everest)।

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা, অবস্থান ও আকার :

হিমালয় (Himalaya) পর্বতমালার মুকুট, নেপাল ও তিব্বত (এখন চিন)-এর ঠিক সীমান্তে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। এর উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার। ভয়ঙ্কর ঢাল, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, যে কোনও সময় বদলে যাওয়া আবহাওয়া, অক্সিজেনের ঘাটতি- এরকম আরও নানা প্রতিকূলতা জয় করেই এভারেস্ট সামিট করেন পর্বতারোহীরা। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ায় আরোহণ করার জন্য অনুমতি নিতে হয়। মাউন্ট এভারেস্টে যাওয়ার পথটি নেপালের মধ্য দিয়ে যায়। নেপাল সরকার ভারতীয় নাগরিকদের ১৫০০ নেপালি টাকায় বিনিময়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে এভারেস্টে উঠতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়।

প্রথম এভারেস্ট জয় :

আজ থেকে প্রায় ৭১ বছর আগে ১৯৫৩ সালের ২৯সে মে নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথমবারের মতো এভারেস্টে উঠে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। তেনজিং ও হিলারি দুজনেই তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য ১৯৫৩ সালে এভারেস্টের জন্য পারি দেন। সেই বছরই ২৭সে মে এভারেস্টে সামিট করার পরিকল্পনা থাকলেও  ব্যর্থ হয়ে পড়েন একাধিক পর্বতারোহী। কিন্তু তখনও হার মানতে নারাজ তেনজিং ও হিলারি। ২৯ সে মে-র সকালেই মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠে দাঁড়ান দুজনে।  এরপর থেকেই শুরু পর্বতারোহীদের এক নতুন অধ্যায়। বিশ্ব দরবারে চিরকালের জন্য ইতিহাস গড়ে অমর হয়ে রইলেন তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি। ঐতিহাসিক এই দিনকে স্মৃতিচারণ করতে এবং তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি জেদ, সাহস আর পর্বতারোহণের কৌশলকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি, বাকি অভিযাত্রীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে প্রতি বছর ২৯সে মে পালন করা হয় মাউন্ড এভারেস্ট দিবস (Mount Everest Day)। 

তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারির এভারেস্ট জয়ের পর একের পর এক পর্বতারোহী এই শিখরে পৌঁছতে থাকেন। ১৯৭৮ সালের ৮ মে অস্ট্রিয়ার পিটার হেবলার এবং ইটালির রেইনহোল্ড মেসনার প্রথম অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট এর চূড়ায় সফলভাবে অরোহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণকারী প্রথম মহিলা (first woman to climb mount everest)হিসেবে কৃতিত্ব লাভ করেন জাপানের জুনকো তাবেই। মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণকারী প্রথম ভারতীয় মহিলা (First Indian woman to climb Mount Everest) হিসাবে কৃতিত্ব লাভ করেন বাচেন্দ্রি পাল। বর্তমানে শয়ে শয়ে অভিযাত্রী এভারেস্ট জয় করতে পাড়ি দেন। এমনকি সম্প্রতি সেখানে দেখা গিয়েছে মানুষের যানজটও। 

'বিশ্বের সর্বোচ্চ গোরস্থান' এভারেস্ট :

 বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের আরেক নাম 'বিশ্বের সর্বোচ্চ গোরস্থান'। দুর্গম হলেও মাউন্ট এভারেস্ট এতটাই জনপ্রিয় যে প্রতি বছর এখানে গড়ে প্রায় ৮০০ পর্বতারোহী পর্বতারোহণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁদের সবাই আর জীবিত ফিরে আসতে পারেন না। অনেকে নিখোঁজ হন, কেউ আবার সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি মৃতদেহগুলি সেখানেই বরফের মধ্যে চাপা পড়ে যায়। মাউন্ট এভারেস্টে কেউ প্রাণ হারালে তাঁর দেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। মৃতদেহ এখানেই বরফের মধ্যে চাপা পড়ে যায়। এভারেস্ট আরোহনের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলি হল মানসিক। সেরিব্রাল এডিমা মস্তিষ্কে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। যে কারণে অনেক সময় একজন মানুষ তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারেন। পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত ৩৩০ জনেরও বেশি পর্বতারোহী মাউন্ট এভারেস্টে মারা গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গই ক্রমশ হয়ে উঠেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ কবরস্থান। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি ১০জনের মধ্যে ১ জন ব্যক্তি সামিটের সময় মারা যান। ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ হিমালয়ে চড়ার চেষ্টা করেছেন। যার মধ্যে ২ হাজার মানুষ সফল হয়েছেন।

এভারেস্টের  'ডেথ জোন' :

 হিমালয়ের ৮০০০ মিটার ওপর থেকে তাকে 'ডেথ জোন' বলা হয়। ওই জায়গায় বেশিরভাগ মানুষ ফ্রস্ট বাইট, সঠিক গাইডেন্স না থাকা, পাহাড়ে অসুস্থতা, অক্সিজেনের অভাব প্রভৃতি কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমনকি এর ফলে মৃত্যুও ঘটে।

দেবী হিসাবে স্বীকৃত মাউন্ট এভারেস্ট :

মাউন্ট এভারেস্টকে দেবী হিসাবেও মানা হয়। নেপালীরা এভারেস্টকে সাগরমাথা বলে ডাকেন। যার অর্থ আকাশের দেবী। অন্যদিকে, তিব্বতীরা একে চোমলুংমা নামের স্বীকৃতি দেয়, যার অর্থ পর্বতের দেবী মা।

পিক ১৫- এভারেস্ট :

এভারেস্ট প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার জর্জ এভারেস্ট ১৮৪১ সালে। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন পিক ১৫। কিন্তু ১৮৬৫ সালে স্যার জর্জ এভারেস্টের সম্মানে পর্বতের নাম পরিবর্তন করে এভারেস্ট করা হয়।

এভারেস্টের উচ্চতা প্রতি বছর বৃদ্ধি পায় :

এভারেস্টের উচ্চতা প্রতি বছর বৃদ্ধি পায়। এটি টেকটনিক প্লেটগুলি স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে ঘটে, যা হিমালয়কে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় পরিমাপের কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৩৮ সালে। গণনা শুরু হয়েছিল ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে। ১৮৪১ সালে এভারেস্ট আবিষ্কার করেন স্যর জর্জ এভারেস্ট। ১৮৫২ সালে শনাক্ত হয় ১৫ নম্বর শৃঙ্গ, যেটি ছিল মাউন্ট এভারেস্ট। বর্তমানে এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার। ১৮৫৬ সালে যখন এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করা শুরু হয়, তখন এটির উচ্চতা ছিল ৮৮৪০ মিটার। এভারেস্টের উচ্চতা প্রতি বছর বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালে নেপাল ও চিন সরকার একসঙ্গে শেষবার এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করা হয়।

২৫ বার এভারেস্ট আরোহণ :

বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখর আরোহণের গড় ব্যয় প্রায় ৪৫,০০০ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩,৮০,৪১৫ টাকা। ১৯৭০ সালে নেপালের সোলুখুম্বুতে জন্মগ্রহণকারী কামি রিতা শেরপা একজন গাইড, যিনি এভারেস্টে সর্বাধিক আরোহণের রেকর্ড ধরে রাখার জন্য পরিচিত (মার্চ ২০২১ পর্যন্ত)। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ২৫ বার এভারেস্ট আরোহণ করেছেন।

'মাউন্টেন স্পাইডার' : 

হিমালয়ের শৃঙ্গে চড়তে গেলে আপনাকে 'মাউন্টেন স্পাইডারের' কবলে পড়তেই হবে। কোনওভাবেই এদের হাত থেকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না। ৬,৭০০ মিটার ওপরেও এই মাকড়সাগুলোকে দেখা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এভারেস্ট :

২০১১ সালে পর্বতারোহী কেন্টন কুল প্রথমবার শৃঙ্গ থেকে ট্যুইট করেছিলেন। তার মানে সামিটের সময় আপনি ট্যুইট করতে পারবেন। এছাড়া গুগলের মানচিত্রে মাউন্ট এভারেস্টের ছবি দেওয়ার জন্য ১২দিন ধরে ছবি তুলেছিলেন গুগলের একটা দল।

বিশ্বের সবথেকে নোংরা পর্বত :

এভারেস্টের শৃঙ্গে প্রচুর পরিমানে বর্জ্য পদার্থ দেখা যায়। বিয়ারের ক্যান থেকে শুরু করে অক্সিজেনের বোতল এবং আরও অনেক কিছু। তাই একে বিশ্বের সবথেকে নোংরা পর্বত বলা হয়। পর্বতারোহীদের কাছে এভারেস্ট জয় স্বপ্নের মতোই। সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বার বার দুর্গম সেই গিরিপথে ছুটে যান দেশ-বিদেশের পর্বতারোহীরা। তবে এই কারণেই দূষিত হচ্ছে এভারেস্ট। তাই এই কারণে নতুন নিয়ম চালু করেছে স্থানীয় পাসাং লামু গ্রামীণ পুরসভা। এভারেস্ট এবং লোৎসে পর্বত অভিযানে গেলে এ বার থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার ব্যাগ কিনতে হবে এবং তা নিজেকেই নিয়ে আসতে হবে নিচে। 

প্রসঙ্গত বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী,এভারেস্ট থেকে কে২, এমন বিভিন্ন পর্বতমালার বরফ গলছে হুহু করে, আর তাতেই রয়েছে চরম আশঙ্কা। পার্বত্য এলাকায় বিপুল পরিমাণ আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রায় ২ হাজার বছর ধরে জমা বরফ মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে গলে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর ফলে বহু স্থানে হড়পা বানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷ দেখা দিতে পারে তুষার ধ্বস, যাতে মানুষের ক্ষতি অবস্যম্ভাবী। পাশাপাশি, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ক্ষেত্রেও এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।